মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম - ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

 জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কোন কাজ কিভাবে করা উচিত সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। তেমনি ঘুমও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনি যদি ইসলামিক পদ্ধতি মেনে ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে সেটিও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে। এই পোস্টে আমরা মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম - ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করব। ঘুম আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। যাদের ঘুমের সমস্যা তারাই বুঝে ঘুম কতটা মূল্যবান নেয়ামত। আপনি যদি ধৈর্য্য ধরে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম - ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।

মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম - ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

নবী (সাঃ) প্রতিটি সুন্নত বিজ্ঞানসম্মত। কেউ যদি এইসব সুন্নতের উপর আমল করে সে দুনিয়াতে কল্যাণ, আখেরাতে মুক্তি লাভ করবে। নবী (সাঃ) সুন্নতের মধ্যে রয়েছে অসীম রহমত ও বরকত। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম - ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত তা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম

ঘুমানোর ইসলামিক নিয়ম | রাতে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম | ঘুমানোর নিয়ম হাদিস | ঘুমানোর সঠিক পদ্ধতি | ঘুমানোর সঠিক নিয়ম | ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম | ঘুম সম্পর্কে হাদিস

সুস্থতার জন্য রাতের ঘুম অপরিহার্য। ঘুম সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে শরীরকে সতেজ প্রাণবন্ত করে তোলে। ঘুমানোরও কিছু ইসলামিক নিয়ম রয়েছে আপনি যদি সেই ইসলামিক অনুসরণ করে ঘুমান তাহলে ঘুমও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ঘুমকে ইবাদাতে পরিণত করা। ঘুমের উত্তম সময় হলো রাত। এমন অনেকে রয়েছে যারা সারা-রাত মোবাইলে সময় কাটিয়ে দিই ফজরের সময় ঘুমাতে যায়। যা একজন ব্যাক্তিকে অলস হিসেবে গড়ে তোলে যা তার শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতি বয়ে আনে। ঘুমানোর ইসলামিক নিয়ম গুলো হলোঃ-

ওযূ করে ঘুমানোঃ- সব সময় অযূ অবস্থায় থাকলে রিযিক বাড়ে। নবী (সাঃ) যখনই ঘুমাতে যেতেন তখনই অযূ করতেন। 

ক্ষমা করে ঘুমানোঃ- এক সাহাবি প্রতি রাতে ঘুমানোর পূর্বে প্রত্যেককে ক্ষমা করে দিয়ে ঘুমাতে যেতেন। তার ব্যাপারে নবী (সাঃ) ৩ বার জান্নাতে সু-সংবাদ দিয়েছেন। ঐ সাহাবি কোন মুসলমানের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করতেন না।

অসিয়ত করে ঘুমানোঃ- লেনদের সংক্রান্ত কোন তথ্য যদি আপনার নিকট থাকে বা কেউ যদি আপনার কাছে কোন টাকা-পয়সা পায় বা যে কোন ধরণের উত্তম পরামর্শ আপনি আপনার অসিয়ত নামায় লিখে ঘুমাতে যান। কেননা, ঘুম ভাঙলে আগামীকাল, না ভাঙলে পরকাল।

লাইট বন্ধ করে ঘুমানোঃ- ঘুমানোর আগে লাইট, দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে যাওয়া। বিছানা ঝেড়ে ঘুমাতে যাওয়া, কেননা বিছানায় উপস্থিত পোকা-মাকড় তার ক্ষতি করতে পারে। খাদ্য-পানীয় ঢেকে রাখা, মশারি টাঙ্গনো ইত্যাদি।

ডান দিক হয়ে ঘুমানোঃ- আমরা অনেকে উপুড় হয়ে বা চিত ঘুমায় যা ইসলাম সম্মত পদ্ধতি নয়। ইসলামে ডান দিক হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘুমের দোয়া পড়াঃ- ঘুমের আগে দোয়া পড়ার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। ঘুমের আগে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ- আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া। এর অর্থ হলোঃ- হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে ঘুমাই এবং তোমার নামেই জাগ্রত হই।

এশার আগে না ঘুমানোঃ- নবী (সাঃ) এশার আগে ঘুমানো, এশার পরে কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না।

আরো পড়ুনঃ- কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব - কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়

উপুড় হয়ে না ঘুমানোঃ- নবী (সাঃ) বলেন, উপুড় হয়ে ঘুমানো আল্লাহ পছন্দ করেন না। জাহান্নামীদের উপুড় করে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।

ঘুমানোর আগে অন্যান্য ছোট ছোট আমলঃ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, দরুদ শরীফ, ইস্তেগফার। ছোট সূরা তাকারসুর তেলাওয়াত করা, এক হাজার আয়াত পাঠ করার সওয়াব পাওয়া যাবে। সূরা মূলক তেলাওয়াত করা, এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি মেলে। সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করা, এতে দরিদ্রতা বিমোচন হয়। সূরা এখলাস ৩ বার, সূরা ফালাক্ক ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার তেলাওয়াত করে ২ হাতে ফুঁ দিয়ে সারা শরীরে হাত বোলানো।

ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখলেঃ- “ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ” ৩ বার পাঠ করার পর বাম দিকে ৩ বার থুথু নিক্ষেপ করা। যে দিকে ঘুমিয়ে ছিলো তার বিপরীত দিক হয়ে ঘুমানো।

নিজের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখাঃ- ঘুমের সময় অনেকের কাপড় আলগা হয়ে যায় লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই তারা লুঙ্গির বদলে প্যান্ট বা পায়জামা পরিধান করবে। প্যান্ট বা পায়জামা পায়ের টাকনুর উপরে রাখুন।

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দোয়াঃ- ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর কোন দোয়া পড়তে হবে ইসলামে তা বলা আছে। দোয়াটি হলোঃ- আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়া না বা’দা মা আমা তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর। এর অর্থ হলোঃ- সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি ঘুমের পর আমাদের জাগ্রত করেছেন এবং আমাদের তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ আবার যখন মহানবী (সা.) ঘুম থেকে সজাগ হতেন, তখন এই দোয়া বলতেন। (বুখারি ৬৩১২)।

ঘুম সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা বলেছেঃ- চিকিৎসা বিজ্ঞান শাস্ত্রে, ডান কাত হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাকস্থলী ডান দিক থেকে খাদ্য শোষণ করে থাকে, এতে খাবার পরিপাকে সুবিধা হয়। যারা ডান কাত হয়ে ঘুমায় তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। নবী (সাঃ) ডান কাত হয়ে ঘুমানোর শিক্ষা দিয়েছেন। সুতারাং আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, নবী (সাঃ) সুন্নত হলো বিজ্ঞানসম্মত।

কোরআন মাজীদে ঘুমের ব্যাপারে যা বলা আছেঃ

  • ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭৩).
  • ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯)

ঘুমের ব্যাপারে হাদিসে যা বলা হয়েছেঃ

  • মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। (আবু দাউদ ৫০৪২)।
  • আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এ গুণ আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব ৫/১৭৮)
  • রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কিছু অর্থ-সম্পদ আছে, আর সে এ সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, সে মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে না অসিয়ত লিখে না রেখে দুটি রাতও অতিবাহিত করা।’ (মুসলিম ৪০৯৬)
  • বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড়বে।’ (বুখারি ২৪৭)
  • নবী (সাঃ) রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ গালের নিচে হাত রাখতেন আর এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি ৩৩১৪)।

ছেলেদের ঘুমানোর নিয়ম

আপনারা অনেকে ছেলেদের ঘুমানোর নিয়ম জানতে চেয়ে গুগলে সার্চ করেছেন। নবী (সাঃ) ঘুমানোর নিয়ম সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেটিই চুড়ান্ত। কেয়ামত পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর মুসলিমরা এই শিক্ষার উপর আমল করবে। আমরা ঘুমানোর ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে উপরের প্যারায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। নারী, পুরুষ সকলকে সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।

মেয়েদের ঘুমানোর নিয়ম | মেয়েদের ঘুমানোর ইসলামিক নিয়ম

ঘুমানোর নিয়ম ছেলেদের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেক রকম এমনটা নয়। নবী (সাঃ) ঘুমানোর নিয়ম সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন নারী-পুরুষ সকলকে সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে। ১ নং পর্বে আমরা ঘুমানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। একজন মুসলিম মেয়ে কে সেই সকল নিয়ম মেনে ঘুমানো উচিত। তবে পিরিয়ডের সময় একজন মহিলাকে নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পিরিয়ডের সময় সে অযূ অবস্থায় থাকবে, তাসবীহ, তাহলীল, জিকির করতে পারবে।

ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত | কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত | রাতে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত সেই বিষয়ে সরাসরি কোন তথ্য বলা না হলেও কিছু ক্লু পাওয়া যায়, যার দ্বারা আপনি অনুমান করতে পারেন ইসলামে আমাদের কত ঘন্টা ঘুমানোর নির্দেশ দিয়েছে। নবী (সাঃ) এশার নামাজের পর কথা বলা পছন্দ করতেন না অন্যদিকে তিনি তাহাজ্জুতের নামাজের জন্য ঘুম থেকে জেগে ‍উঠতেন। রাতের লম্বা সময় তিনি দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তেন। অন্যদিকে ফজরের পর ঘুমিয়ে থাকাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কেননা, ফজরের সময় হচ্ছে বরকতময়, তিনি সকালের সময়কে বরকতময় করার জন্য দোয়া করেছেন। সকালের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক বন্টন হয় কেউ যদি এই সময় ঘুমিয়ে থাকে তাহলে সে রিজিক থেকে বঞ্চিত হবে।

দ্রুত ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা হলোঃ- ফজরের নামাজ আদায় করা যায়, শরীর ও মন সতেজ প্রাণবন্ত থাকে। শরীরে পূর্ণ-শক্তি যোগায়।

আরো পড়ুনঃ- টেনশন দূর করার দোয়া আরবি - মনের অশান্তি দূর করার সূরা

দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অপকারিতা হলোঃ- শরীরের এনার্জি শক্তি হ্রাস পায়, শরীর দূর্বল হয়ে যায়, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি শরীর বাসা-বাঁধে, যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়।

হাদিসে বলা হয়েছেঃ-

  • ‘হে আল্লাহ! আমার উন্মাতের ভোরবেলাতে তাদেরকে বরকত ও প্রাচুর্য দান করুন।’-(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২১২)
  • নবী (সাঃ) এশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং নামাজের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন। -সহিহ বোখারি: ৫১৪
  • ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘তোমরা সকালের ঘুম থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা তা জ্বরের প্রকোপ বাড়ায়, যৌন ক্ষমতা কমায় এবং শারীরের সজীবতা নষ্ট করে। ’ (আন-নিহায়াতু ফি গারিবিল আহাদিস)
  • হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তার এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো! তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ -যাদুল মায়াদ: ৪/২৪১
  • হজরত উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারও সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫/২২২
  • শরীর ও মনকে সতেজ প্রাণবন্ত রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুম শরীরকে চাঙ্গা রাখে, মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা কমায়। প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুমানো শরীরের জন্য যেমন ভালো নয় তেমনি অতিরিক্ত ঘুমানো শরীরের ক্ষতি বয়ে আনে। বয়স ভেদে ঘুমানোর চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

বয়স ভেদে ঘুমের চাহিদাঃ-

  • ০-৩ মাস হলে ১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুম।
  • ৪-১১ মাস হলে ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা ঘুম।
  • ১ বছর থেকে ২ বছর বয়স হলে ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা।
  • ৩ থেকে ৫ বছর হলে ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা।
  • ৬ থেকে ৮ বছর বয়স হলে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা।
  • ৮ বছর বয়স বা তার আগ থেকে আপনার সন্তানকে নামাজের উপদেশ দিন এবং দৈনিক ৬-৮ ঘন্টার বেশি ঘুমানো উচিত নয় এই পরামর্শ দিন।

ঘুমানোর সঠিক পজিশন | ঘুমানোর সঠিক দিক | ইসলামে ঘুমানোর সঠিক দিক

আমরা অনেকে উপুড় হয়ে, চিত হয়ে ঘুমায়। যা শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। ঘুমানোর সঠিক পজিশন/ঘুমানোর সঠিক দিক/ইসলামে ঘুমানোর সঠিক দিক হলো ডান কাত হয়ে ঘুমানো। ডান কাত হয়ে ঘুমালে যে সকল উপকার পাওয়া যায় তা হলোঃ- পাকস্থলী দ্রুত খাদ্য শোষণ করে, এতে করে খাবার জমে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। যেসকল রোগী ডান কাত হয়ে ঘুমায় তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময়

প্রত্যেক মুসলিমকে সময় ম্যানেজমেন্টের উপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আপনারা গুগলে সার্চ করে ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময় জানতে চেয়েছেন। নবী (সাঃ) সুন্নত পদ্ধতি হলো এশার নামাজের পরে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং তাহাজ্জুতের সময় ঘুম থেকে জেগে উঠা। তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করা এবং ফজরের সালাত জামাতে গিয়ে পড়া। ফজরের পরে না ঘুমানো। কেননা, এই সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক বন্টন করা হয়। এর পর যদি ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে তাহলে সূর্য উঠার পর ঘন্টা খানিকের মতো ঘুমাতে পারেন। ঐ দিকে যোহরের নামাজ পড়ার পর ঘন্টা খানিকের মতো ঘুমাতে পারেন। ঘুমানোর পূর্বে চা-কফি, মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

ডান কাত হয়ে ঘুমানোর নিয়ম

ডান পাশে কাত হয়ে ডান হাতের তালুর উপর মুখমন্ডলের অংশবিশেষ রেখে কেবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। বুকের বা পাশে হৃৎপিণ্ডের অবস্থান। কেউ যদি বুকের বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমায় তাহলে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ পড়ে। চিকিৎসকরা বুকের বা পাশে ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করেছেন যেটি ১৫০০ বছর আগে নবী (সাঃ) বলেছেন। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমালে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমালে পাকস্থলী দ্রুত খাদ্য শোষণ করে, খাবার জমে গ্যাস হয় না। যারা ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমায় তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

ঘুমানোর সঠিক সময় ইসলাম | ঘুমানোর সঠিক সময়

ইসলামে ঘুমানোর সঠিক সময় কোনটি এমন নানান প্রশ্ন জানতে চেয়ে আপনারা গুগলে সার্চ করেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে নবী (সাঃ) জীবনী অনুসরণ করতে হবে। নবী (সাঃ) এশার নামাজের পর কথা-বার্তা বলা পছন্দ করতেন না। ইসলামে ঘুমের সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয় রাতের ঘুমকে। এজন্য আপনাকে এশার নামাজের পর-পরই ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। অন্যদিকে দুপুরের খাবারে পর কিছুক্ষণ সময়ের জন্য ঘুমাতে পারেন।

আসরের পর ঘুমালে কি হয়

আসরের পর ঘুমানো এটা অপছন্দনীয় কাজ বলে গণ্য করা হয়। ঘুমের সব থেকে উত্তম সময় হলো রাত। অনেকে বিনা কারণে আসরের পর ঘুমায় যা মাকরুহ বা অপছন্দনীয় কাজ বলে বিবেচিত হয়, এতে বুদ্ধি লোপ পাওয়ার আশংকা রয়েছে ( ইমাম আহমদ (রহ.) থেকে বর্ণিত )। এজন্য আসরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করা হয় যে “ আসর ও মাগরিবের নামাজের মধ্যবর্তী সময় খুবই কম ”। এই সময় ঘুমালে ওয়াক্ত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নামাজ কাজা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। তবে কেউ যদি অসুস্থ, শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকে, অনিন্দ্রাজনিত সমস্যা থাকে তাহলে আসরের পর ঘুমাতে পারে। শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন সমস্যা নেই।

মাগরিবের সময় ঘুমালে কি হয়

মাগরিবের পর ঘুমানো একে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় কাজ মনে করা হয়। নবী (সাঃ) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পরে কথা-বার্তা বলা অপছন্দ করতেন। ৩ ধরণের মানুষের জন্য রাত-জাগার অনুমতি রয়েছে যথাঃ-নবদম্পতি, মুসাফির, নফল নামাজ আদায়কারী। মাগরিবের পর ঘুমানোকে এ কারণে মাকরুহ মনে করা হয় যে, এশারের ওয়াক্ত ছুটে যেতে পারে। অনেকে মনে করে মাগরিবের পর ঘুমালে অভাব, দারিদ্রতা আসে এটা ভূল। 

ফজরের পর ঘুমালে কি কি ক্ষতি হয়

দিন তৈরি করেছে আল্লাহ কাজের জন্য, ঘাম ঝরানোর জন্য, পরিশ্রমের জন্য। রাত তৈরি করেছে ঘুমের জন্য, বিশ্রামের জন্য। এর বিপরীত হলে জীবনে বিপর্যয় ঘটে। ফজরের পর, আসরের পর ঘুমালে শরীরের নানান রোগের আর্বিভাব ঘটে। বর্তমানে দিনে ঘুমানো রাতে কাজ করা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। অনেকে সারা-রাত অনলাইনে পার করে দেয়।  ফজরের সময় বিছানায় ঘুমায়। ফজরের সময় আল্লাহ রিজিক বন্টন করেন। এই সময় ঘুমিয়ে থাকলে রিজিক থেকে বঞ্চিত হবেন। ফজরের সময় ঘুমিয়ে থাকলে দিনের সময় কমে যায়। এতে কাজ কমপ্লিট করা যায় না। জীবন-জীবিকায় বরকত পেতে হলে সকালের ঘুম পরিহার করুন। যারা ফজরের ঘুম থেকে উঠে যায় তারা জ্ঞানী হয়, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ হয়, তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়।

কোন কোন সময় ঘুমানো নিষেধ

আপনারা গুগলে সার্চ করে জানতে চেয়েছেন কোন কোন সময় ঘুমানো নিষেধ। এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে ? এমন নানান প্রশ্ন জানতে চেয়ে আপনারা গুগলে সার্চ করেছেন। ২ টি সময় ঘুমানো ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে।

১) ফজরের পর ঘুমানো উচিত নয়। কেননা, এই সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক বন্টন করা হয়।

২) নবী (সাঃ) এশার আগে ঘুমানো অপছন্দ করতেন।

লেখকের মন্তব্য

মুমিনের প্রত্যেকটি কাজ ইবাদাত স্বরুপ যদি তা নবী (সাঃ) সুন্নত মোতাবেক হয়ে থাকে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সুন্নতের উপর দৃঢ় আমল করা। কেননা, সুন্নতের মধ্যে রয়েছে অসীম রহমত ও বরকত।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে আমরা ঘুমানোর ইসলামিক পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত ইসলামিক পোস্ট পাবলিশ করার চেষ্টা করি। এইরকম তথ্যবহুল পোস্ট আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url