দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা - দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়ঃ সম্পূর্ণ গাইড
এই পোস্টে দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা - দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। রান্নার স্বাদে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে দারুচিনি অন্যতম। দারুচিনি মশলা হিসেবে পরিচিত তবে দারুচিনি রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। বহু রোগ থেকে মুক্তি মেলে দারুচিনি খাদ্য-তালিকায় যোগ করলে। এখন আমরা দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা - দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ওষধি গুণের জন্য দারুচিনির খ্যাতি রয়েছে। আধুনিক গবেষণায়, দারুচিনির স্বাস্থ্য উপকারিতার তথ্য বিস্তারিত উঠে এসেছে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা - দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা
- বেশি দারুচিনি খেলে কি হয় | দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়
- দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা | দারুচিনি খেলে কি হয় | রাতে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
- দারুচিনি গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- দারুচিনি মুখে দিলে কি হয়
- লেখকের মন্তব্য
বেশি দারুচিনি খেলে কি হয় | দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়
বেশি দারুচিনি খেলে কি হয়ঃ- দারুচিনি অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি, সুগন্ধি ঘ্রাণের জন্য গোটা বিশ্ব-ব্যাপী এর কদর রয়েছে। দারুচিনি শুধু মশলা হিসেবে নয় ওষধি গুণাগুণের জন্যও এর সুনাম রয়েছে। দারুচিনি অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর একটি মশলা। অতিরিক্ত দারুচিনি ডায়েটে যুক্ত করলে স্বাস্থ্য-জটিলতা দেখা দিতে পারে। যা হয়তো আমরা জানি না। দারুচিনিতে উপকারিতা পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। বেশি দারুচিনি খেলে হতে পারেঃ-
দারুচিনি রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে। এখন যদি সুগার কমানোর ওষুধের সাথে দারুচিনি খান তাহলে এটা আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা অনেকটা কমিয়ে দিবে। এতে করে শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।
যাদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের দারুচিনি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। দারুচিনির সিনামালডিহাইড নামক যৌগ থাকার কারণে গলা-ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ- দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম - দারুচিনি ও মধুর উপকারিতাঃ সম্পূর্ণ গাইড
অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে ইহা হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করে। তাছাড়া পেটে গোলযোগ যেমনঃ- পেটে জ্বালা-পোড়া, পেটে আলসার, অম্বল, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্যাস্ট্রোপেরেসিস রোগীদের দারুচিনি খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, দারচিনিতে কুমারিনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় ফুসফুস, লিভার, কিডনির ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে এলার্জির উপস্থিতি দেখা দিতে পারে। যেমনঃ- মুখের ঘা, মুখে জ্বালা-চুলকানি, মাড়ি ফুলে যাওয়া এই ধরণের প্রবলেম হতে পারে। তাই অতিরিক্ত দারুচিনি না খাওয়াটাই ভালো।
দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা | দারুচিনি খেলে কি হয় | রাতে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
দারুচিনি গুড়ার উপকারিতাঃ- দারুচিনি ছাড়া রান্নায় পূর্ণতা আসে না। শুধু খাবার তৈরিতে যে দারুচিনি ব্যবহার হয়ে আসছে বিষয়টা এমন নয়, স্বাস্থ্য-জটিলতা থেকে রেহাই মেলে ডায়েটে দারুচিনির গুড়া যুক্ত করলে। দারুচিনি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ। খাবারে দারুচিনি ব্যবহারের কারণে খাবারে চমৎকার সুগন্ধিযুক্ত হয়। দারুচিনিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বো-হাইড্রেট, ক্যালরি, প্রোটিন পাওয়া যায়।
রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ- দারুচিনি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যারা ডায়াবেটিসে ভূগছেন, তারা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে দারুচিনি ডায়েটে যুক্ত করুন।
ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ থেকে মুক্তিঃ- অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের অন্যতম উৎস দারুচিনি। দারুচিনি খাদ্য-তালিকায় রাখলে পেটে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দারুচিনির চা, দারুচিনির গুড়া এগুলো খেলে পেটের বহু সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
অন্ত্রে অস্বস্তি কমায়ঃ- পেটের যেকোন ধরণের অস্বস্তিকর অনুভূতি কমাতে দারুচিনি সাহায্যে করে। দারুচিনি পেটের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, গ্যাস্ট্রোনমিকাল অংশে ক্ষত সরাতে সাহায্যে করে। তাই যারা প্রায় অন্ত্রে অস্বস্তি ভূগেন তারা দিনে ২/৩ বার দারুচিনির চা পান করলে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ- বরই এর অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
ক্যান্সার প্রতিরোধীঃ- দারুচিনি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস হওয়ায় ফ্রি-র্যাডিকেলস কোষ ধ্বংস করে। শরীরে লিউকোমিয়া ও লিমফোমা ক্যান্সারের কোষগুলোর প্রভাব কমাতে দারুচিনি দারুণভাবে কার্যকরী।
বাতের প্রবলেম দূরঃ- দেহে খনিজ উপাদানের সংকট দেখা দিলে বাতের প্রবলেম দেখা দেয়। ঐ বাতের স্থানে দারুচিনির তেল, দারুচিনির চা পান করলে বাতের প্রবলেম থেকে মুক্তি মেলে।
স্মরণ-শক্তি বৃদ্ধিঃ- বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মরণ-শক্তি লোপ পায়। তাই ব্রেইনকে প্রাণবন্ত রাখতে, স্মরণ-শক্তি বাড়াতে দারুচিনির চা খাদ্য-তালিকায় রাখুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ- যারা নিজেদের শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তিত, ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ওজন কমানো যায় সেটার কথা ভাবছেন ! আর দেরি না করে আজ থেকে দারুচিনির চা পান করা আরম্ভ করুন। দারুচিনি আপনার দেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখবে, হজম-প্রক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করবে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।
পেশীর ব্যথা উপশমঃ- হঠাৎ পেশীতে টান বা দীর্ঘদিনের পেশীর ব্যথা উপশমে দারুচিনির তেল মালিশ করলে পেশীর ব্যথা উপশম হবে।
মাড়ি ও দাঁতের ক্ষয় রোধঃ- মুখের দূর্গন্ধ, মাড়ি ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে দারুচিনি খাদ্য-তালিকায় যুক্ত করুন।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রমঃ- মাসিকের আগে মেয়েদের হরমোনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে নানান সমস্যা হাজির হয়। তাই প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রম এর প্রভাব কমাতে দারুচিনি খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।
পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দমনঃ- খাদ্যে ভেজালের কারণে পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাই এই সময় পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দমনে দারুচিনির গুড়া খাদ্য-তালিকায় যুক্ত করুন। এতে উপকার মিলবে।
দারুচিনি গুড়া খাওয়ার নিয়ম
দারুচিনি গুড়া খাওয়ার নিয়মঃ- সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমরা অন্য এক পোস্টে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, এই লিংকে চাপ দিয়ে জেনে নিন। সে পোস্টে দারুচিনির গুড়া কিভাবে খেতে হয় ? দারুচিনির গুড়া কিভাবে খেলে গলা-ব্যথা, ঠান্ডা, খুশখুশি, ঘুমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করা যায় - কীভাবে দারুচিনির গুড়া খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। আশা করি ঐ পোস্টটি পড়লে আপনি দারুচিনির গুড়া কিভাবে খেতে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
দারুচিনি মুখে দিলে কি হয়
দারুচিনি মুখে দিলে কি হয়ঃ- দেখতে সুন্দর আকর্ষণীয়, ঝলমলে চেহারা কে না চায়। এত দিন আমরা জেনে এসেছি দারুচিনি শুধু মশলা হিসেবে ব্যবহার হয় এবং এর একাধিক স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে। কিন্তু সুন্দর আকর্ষণীয় ত্বক পেতে দারুচিনির ফেসিয়াল ব্যবহার হচ্ছে। যা অনেকের কাছে নতুন। ত্বকের নানান সমস্যা যেমনঃ-ত্বকের দাগ-ছোপ, ব্রণ, ত্বকের বার্ধক্য, ত্বকের উজ্জলতা হারিয়ে এ ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দারুচিনির ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এতে করে ত্বক পুর্ন-জীবন লাভ করবে।
ব্রণ থেকে মুক্তিঃ- ব্রণের সমস্যা আমাদের প্রায় হয়েই থাকে। তাই এই ব্রণের সমস্যা থেকে বাঁচতে কার্যকর উপায় হলো দারুচিনির ফেসপ্যাক তৈরি করা। ১ চামচ দারুচিনির গুড়া, ২ চামচ মধু মিশিয়ে ব্রণে লাগান। এরপর ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ- চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম - চেরি ফল খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা
ত্বকের বার্ধক্য দূরঃ- ত্বকের বার্ধক্য দূর করতে দারুচিনি ভীষণ কার্যকরী। এজন্য আপনাকে ১ চামচ দারুচিনির গুড়া, ৩ চামচ এলোভেরার জেল ভালো করে মিক্স করে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এভাবে কিছুক্ষণ রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এই ভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার পর এর ফল নিজ চোখে দেখবেন।
মুখের বলিরেখা দূরঃ- পেট্রোলিয়াম জেলির দারুচিনি + এসেনশিয়াল তেল সুন্দর করে মিক্স করে ত্বকে লাগালে মুখের বলিরেখা দূর হয়।
ত্বকের দাগ-ছোপ থেকে মুক্তিঃ- এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজন মতো দারুচিনির গুড়া, দই একত্রে মিক্স করুন। এরপর ত্বকে তা ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট ত্বকে রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ভাবে ২ সপ্তাহ ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ-ছোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ত্বক টান-টান রাখতেঃ- ডিমের সাদা অংশ + ১ চামচ দারুচিনির গুড়া + ফ্রেশ পানি নিয়ে সুন্দর করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর মুখে ম্যাসাজ করুন। মুখে ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে ১০ মিনিট পর ফ্রেশ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক টান-টান থাকবে।
সতর্কঃ- যাদের ত্বক তৈলাক্ত দারুচিনির ফেসপ্যাক ব্যবহার না করাটাই ভালো। কেননা, দারুচিনির প্রভাব গরম। তৈলাক্ত ত্বকের লোকেদের দারুচিনি ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু ত্বকে দারুচিনি কখনোও ব্যবহার করবেন না।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে আমরা স্বাস্থ্য-বিষয়ক টিপস দারুচিনির নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পোস্টে বেশি দারুচিনি খেলে কি হয় | দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়, দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা | দারুচিনি খেলে কি হয় | রাতে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা , দারুচিনি গুড়া খাওয়ার নিয়ম, দারুচিনি মুখে দিলে কি হয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই রকম তথ্যবহুল পোস্ট আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য-বিষয়ক পোস্ট পাবলিশ করা হয়। আজ এ পর্যন্ত, পরবর্তীতে আলোচনা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url