আদা খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা জানুন

আদা খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা জানতে পোস্টটি ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। অতি পরিচিত, ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ এই মশলা কে অবহেলা করা যায় না। যারা আদার খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা জানতে চেয়ে গুগলে অনুসন্ধান তাদের জন্য এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে।

আদা খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা জানুন

আদা মশলা জাতীয় পন্য হওয়ায় চাইলেই  ইচ্ছেমত খাওয়া যায় না। শরীর সুস্থতার জন্য চাইলে আদা উপকারি তবে অতিরিক্ত আদা খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে আদার খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- আদা খাওয়ার নিয়ম

সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ- মশলা হিসেবে আদার সুখ্যাতি রয়েছে। এটা শুধু যে রান্নার মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা নয়, প্রাচীন কাল থেকে ভেষজ গুণের জন্য আদার সুনাম রয়েছে। দিনের যেকোন সময় আদার দিয়ে তৈরি রান্না, আদা চা, আদা কুচি কুচি করে কেটে চিবিয়ে খাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগ-নিরাময়ে আদার রয়েছে জুড়ি মেলা ভার। আদার যে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, জিংক, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, সি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য তা শরীর গঠনে ভীষণ উপকারি। সকালে আদা খেলে যে সকল উপকার পাবেন তা নিম্নরুপঃ-

পেটের গোলযোগ নিরাময়ঃ- গ্যাসের কারণে পেট ফোলা, পেট ব্যাথা, আমাশয়, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা এই ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। সকালে খালি পেটে ১ কাপ গরম পানি + ১ চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ- গরম পানির সাথে আদা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইঃ- আদাতে ফেনোলিক ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে। যেটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাছাড়া যাদের ঘন ঘন জ্বর, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে তারা সকালে আদা খান এতে উপকার মিলবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ- কাঁচা আদা তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা খেলে ফ্রি-র‌্যাডিকেলস দূর হয় এবং ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে আসে।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- আদাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতারাং যাদের দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা সকালে আদা খান এতে উপকার মিলবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- আদা তে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম উপাদান রয়েছে যা দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। স্ট্রোক, হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- আদা তে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, দেহে ইনসুলিন তৈরি করে। ডায়াবেটিসের রোগীরা আদা খাদ্য-তালিকায় রাখুন। এতে উপকার মিলবে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ- রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে, ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে, রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে হ্দরোগের আশংকা কমে যায়।

বমি বমি ভাব, মুখের দুর্গন্ধ দূরঃ- যাদের খাবার খাওয়ার পর বমি বমি ভাব চলে আসে তারা আদা খান। আদা খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়। অনেকের মুখ দিয়ে বাজে দুর্গন্ধ বের হয়। বাজে দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আদা চিবিয়ে খান।

আদার রসের উপকারিতা

আদার রসের উপকারিতাঃ- যারা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন না, তারা আদা চা, আদা পিষে রস বের করে খেতে পারেন। আপনারা গুগলে সার্চ করে আদার রসের উপকারিতা জানতে চেয়েছেন। আপনাদের জন্য আমরা এই পোস্টে আদার রসের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি।

প্রদাহ দূরঃ- আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা দেহের দীর্ঘদিনের প্রদাহ দূর করে। সুতারাং যাদের দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুর ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, কুনুইয়ের ব্যাথা লেগেই আছে তারা আদার রস খান এতে উপকার পাবেন।

হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ- হজম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আদার রস খাদ্য তালিকায় রাখুন। যাদের খাবার হজম হয় না বমি হয়ে যায় তারা খাদ্য-তালিকায় আদা রস রাখুন। আদা খেলে গ্যাস, অম্বল, পেট ফাপার মতো সমস্যা দূর হয়।

আরো পড়ুনঃ- প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা - পেয়ারা খেলে কি ওজন বাড়ে

পেটের জ্বালা-পোড়া দূরঃ- আদা পাকস্থলীর অ্যাসিডের উৎপাদন কমায়। খাবারের পরে যদি আদার পানি বা আদার রস খাওয়া যায় তাহলে পেটের জ্বালা-পোড়া দূর হয়।

শরীরকে বিষমুক্ত করাঃ- আদা রস শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান ঘাম ও প্রস্রাবের আকারে বের করে দেয়।  এতে করে শরীর রোগ-মুক্ত হয়।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিঃ- আদা রস শরীরে রক্ত সঞ্চালনের গতি বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ কোষে অক্সিজেন পৌছে যায়। দেহে রক্তের জমাট বাঁধা দূর করে।

মাসিকের ব্যাথার উপশমঃ- আদার জল বা আদার পানি, আদার রস খেলে মাসিকের ব্যাথা উপশম হয়। সুতারাং যাদের মাসিকের ব্যাথায় অতিষ্ঠ তারা আদা জল  বা আদা পানি খান এতে উপকার মিলবে।

খালি পেটে আদা খাওয়ার অপকারিতা

খালি পেটে আদা খাওয়ার অপকারিতাঃ- আদার একাধিক উপকারিতা থাকলেও কোন কিছু অতিরিক্তি ভোগ করা স্বাস্থের জন্য মোটেও ভাল নয়। অতিরিক্ত আদা খাওয়ার কারণে শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এজন্য অল্প পরিমাণে রোজ নিয়ম করে আদা খেলে সেটিই বরং শরীরের জন্য উপকার হয়। অতিরিক্ত আদা খেলে কি কি শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে তা জানা দরকার।

রক্তক্ষরণ হওয়াঃ- অতিরিক্ত আদা খাওয়ার কারণে রক্ত পাতলা হয়ে যায় এতে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। রসুন, লবঙ্গ, আদা একত্রে খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চা প্রসবঃ- প্রেগনেন্ট মহিলাদের আদা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। অতিরিক্ত আদা খেলে প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ- পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা জেনে নিন

হ্রদযন্ত্রের ঝুঁকিঃ- যারা রক্তচাপের জন্য ওষুধ সেবন করছেন তাদের আদা খাওয়া বাদ দেওয়া দরকার। অতিরিক্ত আদা খাওয়ার কারণে হ্রদযন্ত্রের গতি বেড়ে শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

ডায়রিয়া সৃষ্টিঃ- বিশেষজ্ঞদের মত, আদা দ্রুত খাবারকে বর্জ্যে পরিণত করে। তাই অতিরিক্ত আদা খাওয়ার কারণে ডায়রিয়ার আশংকা তৈরি হতে পারে।

অ্যালার্জি সৃষ্টিঃ- যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত আদা খাওয়ার কারণে শরীর বা মুখে, চোখে চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে। মুখে জ্বালা-পোড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকস্থলীতে প্রবলেম তৈরিঃ- আদা তে শক্তিশালী যৌগ থাকায় খালি পেটে খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম বাড়তে পারে। পেটে অস্বস্থি তৈরি হতে পারে।

ডায়াবেটিসের রোগীরা সতর্কঃ- ডায়াবেটিসের ওষুধ, অতিরিক্ত আদা খেলে রক্তচাপ নিম্নমুখী হয়। এতে করে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।

জেনে রাখুনঃ- আদার যেমন উপকারি দিক রয়েছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই আদা থেকে উপকার পেতে হলে পরিমিত পরিমাণে আদা খেতে হবে। দৈনিক ১.৫ মিলি গ্রাম আদা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। এর বেশি হলে শারীরিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

আদা খাওয়ার নিয়ম | কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম

আদার খাওয়ার নিয়ম | কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়মঃ- রান্নার তরকারিতে মশলা হিসেবে আদা কিভাবে খেতে হয় তা আমরা সকলে জানি। অনেকে আদা পিষে রস বের করে খেয়ে থাকে। আদা চা শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। আদা কুচি কুচি করে কেটে লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। আদা বেশি খাওয়া যাবে না, ১.৫ মিলিগ্রাম আদা যথেষ্ট।

  • গরম পানি, লেবুর রস, মধু, আদার রস একত্রে খেলে পেটের গোলযোগ দূর হয়।
  • ১ চামচ গরম পানি + ১ চামচ আদার রস খেলে ডায়রিয়া, বদহজম, পেটের ব্যাথা দূর হয়ে যাবে।
  • লবণ, লেবুর রস, আদা একত্রে খেলে মুখের হারানো রুচি ফিরে আসে।
  • আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খেলে হজমের গোল যোগ দূর হয়।
  • জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা-ব্যাথা নিরাময়ে আদা অব্যর্থ ওষুধ।

ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা

ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ- আদা আপনি ভরা পেটে খান অথবা খালি পেটে খান আপনি উপকার পাবেন। যেহেতু আদার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে  হলে আপনাকে পরিমিত পরিমাণে আদা খেতে হবে। আমরা অন্য এক পোস্টে আদার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি এই লিংকে প্রবেশ করে বিস্তারিত পড়ে নিন।

কাঁচা আদা খেলে কি হয়

কাঁচা আদা খেলে কি হয়ঃ- ভেষজ গুণের জন্য আদা পরিচিত। আপনারা অনেকে গুগলে কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা | কাঁচা আদা খেলে কি হয় | প্রতিদিনি আদা খেলে কি হয় এমন নানান প্রশ্ন লিখে গুগলে সার্চ করে থাকেন। অন্য এক পোস্টে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোক পাত করেছি, এই লিংকে প্রবেশ করে পোস্টটি পড়ে নিন। এ দিকে খেয়াল রাখবেন আদা শরীরের জন্য উপকারি তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত খেলে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

উপসংহার

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে  সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আদার রসের উপকারিতা, খালি পেটে আদা খাওয়ার অপকারিতা, আদার খাওয়ার নিয়ম, ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম, কাঁচা আদা খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এইরকম তথ্যবহুল পোস্ট আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url