খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন

টক-মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু ফল আনারস। আনারস থেকে যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার। এই পোস্টে খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সুতারায় আপনি যদি খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন

পাকা আনারস কেটে আমরা প্রায় সরাসরি খেয়ে থাকি অথবা গুড়া মরিচ, হালকা লবণ দিয়ে মাখিয়ে খেয়ে থাকি। অনেকে রান্না করে, অনেকে আবার এটার সালাদ তৈরি করে খায়, অনেকে আবার জুস করে খায়। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলে রয়েছে অজস্র স্বাস্থ্য গুণাগুণ। চলুন তাহলে আর দেরি না করে খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতাঃ- সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকে শারীরিক ভাবে দুর্বলতা অনুভব করে থাকি। সকালের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে আনারস চমৎকার একটি ফল। আনারসে যে ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, খনিজ রয়েছে তা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। আনারস থেকে যেসকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় তা হলোঃ-

  • আনারসের ব্রোমেলিন নামক উপাদান হজমে সহায়তা করে। সুতারাং যাদের হজমে দুর্বলতা রয়েছে তারা আনারস খান।
  • আনারস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি ফল। এই আনারসে ফ্যাটের পরিমাণ কম। সুতারাং যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তারা খাদ্য তালিকায় আনারস রাখুন।
  • যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভূগছেন তারা আনারস খান। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়ে যাবে।
  • অসুখ হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবে মুখের ‍রুচি চলে যায়। সুতারাং মুখের রুচি ফেরাতে খাদ্য তালিকায় আনারস রাখুন। এতে উপকার মিলবে।
  • ক্যালসিয়ামের নির্ভরযোগ্য উৎস আনারস। দাঁত ও হাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিতে খাদ্য তালিকায় আনারস রাখুন।
  • আনারসের যে পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তা রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। রক্তে জমাট বাঁধতে দেয় না।
  • যেকোন প্রকার রোগ-ব্যাধি যেমনঃ- জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা-ব্যথা, জন্ডিস, সাইনোসাইটিসজাতীয় ইত্যাদি সহ নানান ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে আনারস।
  • আনারসের বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • আনারসের ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলো ইমিউনিটি সিস্টেম স্ট্রং করে। এতে দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন এর কারণে চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যায়। আনারসের বিটা-ক্যারোটিন উপাদান রয়েছে যা চোখের রেটিনা সুস্থ রাখে।
  • আনারসের ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ উপাদান গুলো শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
  • হাড় গঠন ও হাড়ের সুস্থতার জন্য আনারস খান। কারণ, আনারসের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদান গুলো হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। ইহা দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • ব্রণ, ত্বকের ফুসকুড়ি, তৈলাক্ত ত্বক এরকম ত্বকের হাজারো সমস্যা নিরাময়ে আনারস কার্যকর ভূমিকা রাখে। কেননা, আনারসে যে পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তা ত্বকের স্বাস্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • কৃমিনাশক হিসেবে আনারস বেশ পরিচিত। সুতারাং যাদের কৃমির সমস্যা রয়েছে তারা আনারস খান এতে উপকার মিলবে।
  • আনারসে পটাসিয়াম উপাদান দেহে ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • আনারস নিয়মিত খেলে লিভার ও অন্ত্র ভালো থাকে।

আনারস খাওয়ার সঠিক সময়

আনারস খাওয়ার সঠিক সময়ঃ- ফল দিনের কোন সময় খেতে হয়, দিনের কোন সময় ফল খেলে স্বাস্থের জন্য ভালো হয়, খালি পেটে খাব নাকি ভরা পেটে খাব, সকালে ফল খাব নাকি বিকালে ফল খাব এরকম হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনের ভিতর থাকে। গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত যে, যদি নিদিৃষ্ট সময়ে ফল খাওয়া যায় তাহলে ফলের ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন উপাদান গুলো শরীরে কাজে দেয়।

খালি পেটে ফল খাওয়াঃ- যদি সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া যায় তাহলে আনারসের যে পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তা শরীর গ্রহণে সহায়তা করে। এতে করে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং হজম শক্তি বাড়ে।

কারা খালি পেটে ফল খাবেন নাঃ- যদি কারো বুকে জ্বালা-পোড়া, আলসার এই জাতীয় সমস্যা থাকে তারা ফল খাবেন না। শিশু, বৃদ্ধ যাদের পাকস্থলী দুর্বল তারা সকালে খালি পেটে ফল খাবেন না। আনারসে যে পরিমাণ এসিড থাকে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে এবং বুকে জ্বালা পোড়া তৈরি করে।

খাবারের ‍মাঝামাঝি সময়ে ফল খাওয়াঃ- সকালে নাস্তা খাওয়ার ১ ঘন্টা পর হতে দুপুরের খাবারের আগ মুহুর্তের যে কোন সময় ফল খাওয়া যায়। এতে করে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।

বিকালের সময়ঃ- বিকালে আনারস খাওয়া যেতে পারে।

যে সময় ফল খাওয়া উচিত নয়ঃ- খাবার খাওয়ার পর পরই আনারস খাবেন না। আনারস যে মিষ্টি উপাদান রয়েছে তা শরীরে ক্যালরির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ঘুমানোর আগে যে ফল খাবেন নাঃ- রাতে ঘুমানোর আগে আনারস, আম, আঙ্গুর খাবেন না, এতে করে ঘুমের ব্যঘাত ঘটতে পারে। আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে আপেল, কলা, চেরি এগুলো খেতে পারেন।

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়ঃ- শিশু, বৃদ্ধ যাদের পাকস্থলী দুর্বল, বুকে জ্বালা-পোড়া আলসার থাকলে সকালে খালি পেটে আনারস খাবেন না। কারণ আনারসে যে এসিড আছে তা গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। লবণ, গুড়া মরিচ দিয়ে আনারস খাবেন না এতে করে গ্যাস্ট্রিক উৎপাদন হয়। তাহলে বুঝা গেল যে, আনারস খেলে গ্যাস হয়।

আনারস নিঃসন্দেহে স্বাস্থের জন্য ভীষণ উপকারি একটি ফল। এজন্য এই ফল থেকে উপকার পেতে হলে সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে আনারস খেতে হবে। তবেই উপকার মিলবে।

মৌসুমী ফল খেতে সুস্বাদু হওয়ায় আমরা পেট ভর্তি করে আনারস খেয়ে ফেলি। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খেতে শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। যা হয়তো আমরা জানি না। এখন আমরা জানব অতিরিক্ত আনারস খেলে যে সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে।

  • যাদের এলার্জির সমস্যা তারা এই ফল খাবেন না। অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার কারণে বাতের ব্যথা, ফুসকুরি, শরীরে চুলকানি হতে পারে।
  • আনারস মিষ্টি জাতীয় ফল হওয়ায়, এটা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীরা আনারস খাওয়ার আগে একটু সতর্ক হন।
  • আনারসে ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম রয়েছে। অতিরিক্ত আনারস খেলে শরীরের রক্ত পাতলা করে দিতে পারে। এমনকি রক্ত পাতের আশংকা রয়েছে।
  • অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার কারণে পেটে গোলমাল যেমনঃ- গ্যাস, অম্বল, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এ ধরণের সমস্যা হতে পারে।
  • যাদের দাঁতের কেভিটিস রয়েছে তারা আনারস এড়িয়ে চলুন। ঐ অবস্থায় আনারস দাঁতের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • অনেকে আমরা কাঁচা আনারস খায়। কাঁচা আনারস খাবেন না। কারণ, কাঁচা আনারস খেলে এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে মুখের ভিতর, গলায় শ্লেষ্মা তৈরি হয়।

আনারস খেলে কি জ্বর কমে

আনারস খেলে কি জ্বর কমেঃ- জ্বি, আনারস খেলে জ্বরের মাত্রা হ্রাস পায় বা জ্বর কমে। যখন দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখনই বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা যায়। আনারস ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস। এই উপাদান গুলো দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতারাং জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা, কাশি, গলা-ব্যথা, জন্ডিস, নাক দিয়ে পানি পড়া এরকম সমস্যার জন্য আনারস খান। এতে উপকার মিলবে।

ভরা পেটে ফল খেলে কি হয়

ভরা পেটে ফল খেলে কি হয়ঃ- অনেক সময় আমরা সকালের নাস্তার পর, দুপুরের খাবারের পর, রাতে ডিনারের পর ফল খেয়ে থাকি। পুষ্টিবিদদের মতে, ভরা পেটে ফল খাওয়া উচিত নয়। কারণ, ভরা পেটে ফল খেলে তা হজম হতে চায় না। এতে করে পেটে অস্বস্থি দেখা যায়, ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেয় এক কথায় পেটের গোল যোগ সৃষ্টি হয়। 

তাই ভারী খাবার খাওয়ার পর বা ভরা পেটে কখনোও ফল খাবেন না। খাবার খাওয়ার প্রায় ১ ঘন্টার মতো অপেক্ষা করার পর ফল খেতে পারেন। যদি খাবারের পরই ফল খেতে হয় তাহলে খাবার কম খেয়ে তার পরিবর্তে অল্প করে ফল খেতে পারেন। এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট তথ্য পেতে উপরের প্যারায় বর্ণিত আনারস খাওয়ার সঠিক সময় এই প্যারাটি পড়ে নিন।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে আমরা স্বাস্থ্য বিষয়ক টপিকস আনারস নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পোস্টে খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা, আনারস খাওয়ার সঠিক সময়, আনারস খেলে কি গ্যাস হয়, আনারস খেলে কি জ্বর কমে, ভরা পেটে ফল খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পাবলিশ করা হয়। আজ এ পর্যন্ত, পরবর্তীতে আলোচনা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url