পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা গুলো জানা একান্ত জরুরি

যতগুলো পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল রয়েছে তার মধ্যে খেজুর সেরা। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যায়। এমনতাবস্থায় শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে খেজুর খান। খেজুর শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আপনাকে চাঙ্গা রাখবে। এই পোস্টে আমরা পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। সুতারাং পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা গুলো জানতে পোস্ট মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা গুলো জানা একান্ত জরুরি

শুধু পুরুষদের জন্য নয় খেজুর মহিলাদের জন্যও উপকারি। এজন্য নিজের শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখুন। এটা আপনার জন্য অনেক উপকারি হবে। চলুন তাহলে পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতাঃ- সুস্বাদু, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় ফল খেজুর। রোজার সময় যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন সন্ধার সময় খেজুর দিয়ে ইফতারি করি। এতে করে সারাদিনের ক্লান্ত দূর হয়ে যায়। ভিটামিন, মিনারেলস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এর অন্যতম উৎস খেজুর। সারাদিনের ক্লান্ত, পরিশ্রম, মানসিক চাপ এর সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ে শরীরের উপর। এতে করে শরীরের বল, শক্তি হ্রাস পায়। তাই শরীরকে চাঙ্গা রাখতে খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম।

রোগ থেকে মুক্তিঃ- ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস খেজুর। যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্যান্সার, হার্ট-অ্যাটাক, আলসার এ ধরণের ভয়ংকর সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে খেজুর ভীষণ উপকারি।

বয়স ধরে রাখেঃ- ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে খেজুর অনন্য। ত্বকের সু-স্বাস্থ্যের জন্য খেজুর বিশেষ ভাবে উপকারি। অনেকের অল্প বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যায়। যারা খেজুর নিয়মিত খান তাদের ত্বক সবসময় টান টান থাকে যেন মনে হয় ২৫ বছরের যুবক। খেজুরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে শীতল রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- খেজুর রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া উচিত নয়। এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতিদিন ২টি করে খেজুর খেতে পারেন। এতে উপকার মিলবে।

বন্ধ্যাত্ব দূরঃ- বন্ধ্যাত্ব এখন দাম্পত্য জীবনের ভয়ংকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিনের কর্ম-ব্যস্ততা, মানসিক চাপ, টেনশন ইত্যাদির কারণে এগুলোর প্রভাব সরাসরি শরীরের উপর গিয়ে পড়ে। এতে যৌন স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটে। পুষ্টিবিদদের মত, খেজুর যৌন স্বাস্থের উন্নতি ঘটায়। ইহা শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। সুতারাং বন্ধ্যাত্ব দূর করতে খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখুন।

আরো পড়ুনঃ- খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- খেজুরের পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে, ভালো কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং হার্ট-অ্যাটাক রোধ করে।

হার্ট ভালো রাখেঃ- খারাপ কোলেস্টেরল এর কারণে হার্টের নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে, হৃৎপিণ্ডের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর খাদ্য তালিকায় রাখুন। ইহা দেহের রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখে। তাই রাতে শোয়ার আগে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে পানি ও খেজুর খান। এতে উপকার মিলবে।

অ্যাসিডিটি রোধঃ- অ্যাসিডিটির কারণে শারীরিক নানান সমস্যার পাশাপাশি যৌন সমস্যাও দেখা যায়। তাই অ্যাসিডিটি রোধ করতে সরাসরি খেজুর খান এতে উপকার মিলবে। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে দুধে কয়েকটি খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সেই দুধ এবং খেজুর খান। ইহা আপনার যৌন-শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ- খেজুরের ভিটামিন বি, কোলিন রয়েছে যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা  করে। যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্মরণ শক্তি দুর্বল অল্পতেই ভুলে যান তারা খাদ্য-তালিকায় খেজুর রাখুন। ইহা স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

যৌনশক্তি বৃদ্ধিঃ- যারা যৌন আকর্ষণ বোধ করেন না, যাদের যৌন-শক্তি দুর্বল, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান তারা যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য খেজুর খান। এতে আপনার যৌন স্বাস্থ্য উন্নতি ঘটবে।

হাড় মজবুত করেঃ- খেজুরের পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস উপাদান হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। হাড় গঠন করে ও মজবুত করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের সমস্যা দেখা যায় খেজুর এই সমস্যা রোধ করে।

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়মঃ- খেজুরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, অল্প মাত্রায় সোডিয়াম, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে ‍মুক্তি দেয়। ইহা হজম-শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। অনেকে খেজুর চিবিয়ে খেতে পারে না। তারা খেজুর ভিজিয়ে খান। খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম হলোঃ-

পদ্ধতি ১ঃ- রাতে ঘুমানোর আগে ৪/৫ টি খেজুর ধুয়ে নিয়ে ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ভিজানো খেজুর এবং পানি পান করুন। খেজুর ভিজিয়ে রাখলে ঐ খেজুর নরম হয়, চিবিয়ে খাওয়া সহজ হয়।

আরো পড়ুনঃ- স্ট্রবেরি খাওয়ার ১৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

পদ্ধতি ২ঃ- দুধে ভেজানো খেজুর খেলে শরীর হবে তরতাজা, আপনি মানসিকভাবে চাঙ্গা হবেন। প্রথমে ৪/৫ টি খেজুর ধুয়ে নিন এরপর ১ গ্লাস দুধে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে দুধ এবং খেজুর খান। ইহা আপনার শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। এটা আপনার যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অপকারিতাঃ- খালি পেটে খেজুর খেলে বহু উপকারিতা পাওয়া যায় জানতে এই লিংকে চাপ দিন। খেজুর মিষ্টি জাতীয় ফল। এর গুণাগুণ অনেক। চিনির বিকল্প হিসেবে আমরা খেজুর খেয়ে থাকি। পুষ্টিবিদরা, অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে বলেছেন। অতিরিক্ত খেজুর খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে।

সতর্কতাঃ-

খেজুরে গ্লুকোজ রয়েছে। আর অতিরিক্ত খেজুর খেলে দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভয়ংকর। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের কয়টি খেজুর খাওয়া দরকার তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

খেজুরে পটাসিয়াম রয়েছে। অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার কারণে দেহে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ- আমড়া খাওয়ার ১৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

সালফাইট দিয়ে খেজুর কে সতেজ রাখা হয়। অতিরিক্ত সালফাইট পেটে যাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাপা, ত্বকের চুলকানি, ত্বকের লালচে ভাব দেখা দেয়।

যারা এলার্জি সমস্যায় ভূগছেন তাদের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া চলবে না। এতে করে শ্বাস কষ্টের জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

খুরমা খেজুরের উপকারিতা

খুরমা খেজুরের উপকারিতাঃ- বিভিন্ন জাতের খেজুর পাওয়া যায় তার মধ্যে খুরমা খেজুর অন্যতম। খুরমা খেজুর কে বলা হয় সুপার ফুড। এই খুরমা খেজুরে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এই খেজুরে যে পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে তা আপনার শরীর কে প্রাণবন্ত রাখবে। অনেকে খুরমা খেজুরের উপকারিতা জানতে চেয়েছেন। আমরা এখন সেই খুরমা খেজুরের উপকারিতা নিয়ে কথা বলব।

  • দেহে এনার্জি বুস্ট করে। শরীরের ক্লান্তি দূর করে।
  • ইহা দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে।
  • এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ইহা চোখের দৃষ্টি-শক্তির উন্নতি ঘটায়। চোখের রেটিনা ভালো রাখে।
  • যাদের স্মৃতি শক্তি দুর্বল তারা খুরমা খেজুর খান। ইহা স্মৃতি-শক্তির বিকাশ ঘটে।
  • খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে।
  • ইহা দেহে রক্ত উৎপাদন করে। যাদের দেহে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তার খেজুর খান।
  • এর ক্যালসিয়াম উপাদান শরীরের হাড় মজবুত করে।
  • এর পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ইহা খারাপ কোলেস্টরল দূর করে হার্ট ভালো রাখে। হৃৎপিণ্ড কর্মক্ষম রাখে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। 
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। বন্ধ্যাত্ব দূর করে।
  • বয়স ধরে রাখে ত্বকের বার্ধক্য দূর করে।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে স্বাস্থ্য বিষয়ক টপিকস খেজুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা, খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অপকারিতা, খুরমা খেজুরের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট নিয়মিত পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পাবলিশ করা হয়। আজ এ পর্যন্ত। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url