বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম - আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়
দেশে পরিচিত ফল গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আনারস। সুস্বাদু রসালো টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফল খেতে আমরা পছন্দ করি। বহু শারীরিক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই আনারস ফলের মধ্যে। এই পোস্টে বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম, আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয় ? তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সুতারাং বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম, আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয় ? তা জানতে পুরো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
অসাধারণ সব পুষ্টিগুণের কারণে পুষ্টিবিদরা, আনারস খেতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আনারস শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন রোগ দূর করতে সহায়তা করে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম, আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয় ? তা জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম
- আনারস খাওয়ার উপকারিতা | আনারস খেলে কি উপকার হয় | আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়
- আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়
- বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়
- কোন ফল খালি পেটে খাওয়া যায় না
- লেখকের মন্তব্য
আনারস খাওয়ার উপকারিতা | আনারস খেলে কি উপকার হয় | আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ- পরিচত ফল গুলোর মধ্যে আনারস অন্যতম। আনারস দেখে নি বা খাই নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ভিন্ন স্বাদের এই ফলে একাধিক স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে। আনারসের উপকারিতা গুলো যদি আপনি জানেন তাহলে আপনি নিশ্চয় খাদ্য-তালিকায় আনারস রাখতে বাধ্য হবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আনারস সেরা। এই ফলের ক্যালরি, ফাইবার, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম দেহ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আনারস খাওয়ার উপকারিতা
- আনারসের ব্রোমেলিন নামক এনজাইম হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতারাং, যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা আনারস খান, এতে উপকার মিলবে।
- দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আনারস অনন্য। আনারসের ভিটামিন সি উপাদান জ্বর, ঠান্ডা, কাশিসহ আরও অন্যান্য রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
- ওষুধের বিকল্প হিসেবে আনারস খাওয়া যায়। যেমনঃ- জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নাক দিয়ে পানি ঝরা, গলাব্যথা, ব্রংকাইটিস এই ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে আনারস খাদ্য-তালিকায় রাখুন।
- দেহে রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বা শিরা ধমনির মধ্যে দিয়ে যাতে সারা শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এজন্য খাদ্য তালিকায় আনারস রাখুন।
- দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরা, দাঁতের মাড়ি নরম, দাঁতের যেকোন ধরণের সমস্যা এড়াতে আনারস খান। কেননা, আনারসের ক্যালসিয়াম নামক পুষ্টি উপাদান দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিতে সহায়তা করে।
- চোখের রেটিনা ভালো রাখতে আনারস খান। কেননা, আনারসের বিটা-ক্যারোটিন উপাদান চোখের রেটিনা ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- ত্বকের মৃত কোষ, ত্বকের বার্ধক্য, তৈলাক্ত ভার, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করতে এক কথায় ত্বকের স্বাস্থ্য জন্য আনারস খুবই উপকারি।
- হাড়ের ক্ষয় রোধ, হাড়কে মজবুত করে গড়ে তুলতে আনারস খান। কারণ, আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।
- কৃমির উৎপাত বন্ধে আনারস খান। কারণ, কৃমি নাশক ওষুধ হিসেবে আনারসের খ্যাতি রয়েছে।
- আনারসে পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রি-র্যাডিকেলস দূর করে। ক্যান্সার, হার্ট-অ্যাটাক সহ বহু রোগ থেকে মুক্তি দেয় আনারস।
আনারস খাওয়ার অপকারিতা
- যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের কম পরিমাণে আনারস খাওয়া দরকার। দেখা যায়, চুলকানি, হাঁচি, কাঁশি, ত্বকে লালচে ভাব এ ধরণের উপসর্গ গুলো দেখা যায়।
- অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার কারণে পেট ব্যথা, গ্যাস, বদহজম, আমাশয় এ ধরণের উপসর্গ গুলো দেখা দিতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের আনারস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আনারস মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় এটা গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- গর্ভবর্তী নারীর প্রথম দিকে আনারস না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, এটা গর্ভপাতের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার কারণে বাতের ব্যথার ঝুঁকি থাকে।
- যেকোন অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধ সেবনের আগে আনারস এড়িয়ে চলুন। নতুবা ইহা দেহে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
- কাঁচা আনারস জুস বানিয়ে খেলে এটা বমির প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কাঁচা আনারসে এসিডিটি থাকে যা মুখ ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত আনারস খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। যা কাটা স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে বিলম্ব করে।
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়ঃ- রোগ-নিরাময়ে এক অনন্য ফল আনারস। সকাল বেলা খালি পেটে আনারস খেলে কি হয় ? খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা এমন নানান প্রশ্ন নিয়ে আমরা গুগলে অনুসন্ধান করে থাকি। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমি অন্য আরেক পোস্টে খালি পেটে আনারস খেলে কি হয় বা খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই লিংকে চাপ দিয়ে ঐ পোস্টটি পড়ে নিন।
আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়
আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়ঃ- জ্বি, আনারস খেলে পিরিয়ড হয়। আনারস অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে। মহিলাদের জীবনে এক বিশেষ সময় পিরিয়ড। প্রতি মাসের একটি নিদিৃষ্ট সময়ে এটা হয়ে থাকে। এ সময় যে পরিমাণ ব্লাড বের হয় তা পূরণের জন্য পুষ্টিকর খাবার বা ফল গ্রহণ করা দরকার। তার মধ্যে অন্যতম হলো আনারস। ইহা দেহে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ইহা দেহে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাসিকের সময় জরায়ুর আস্তরণ ক্ষরণ করে। মাথা ঘোরা, মেজাজ খিটখিটে, তলপেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, মুখের অরুচি, অস্বস্থিবোধ ইত্যাদি পিরিয়ডের অন্যতম লক্ষণ। অনিয়মিত পিরিয়ড পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কারণে হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ- চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
পিরিয়ডের সময় আনারস খেলে যেসকল উপকার পাবেনঃ-
- আনারসে ব্রোমেলেন নামক উপাদানে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পিরিয়ড়ের সময় ব্যথা, প্রদাহ একটি অন্যতম সমস্যা। সুতারাং এ সময় মাসিকের ক্র্যাম্প এবং পেশীর ব্যথা হ্রাস করতে আনারস খান। এতে উপকার মিলবে।
- আনারসের ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড রক্তনালীর দেয়ালকে স্ট্রং করে, মাসিকের সময় ভারী রক্তপাত ঠেকায়।
- পিরিয়ডের সময় স্ট্রেস, উদ্বিগ্ন, মুড সুইং এ ধরণের সমস্যা হতে দেখা যায়। আনারসের ম্যাঙ্গানিজ উপাদান আপনার মেজাজ চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করবে।
- আনারস পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এই গুলো দূর করতে সহায়তা করে। আনারস ফাইবারের অন্যতম উৎস।
- এসময় আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়। শরীর ক্লান্ত, দুর্বল হয়ে যায়। তাই আয়রনের ঘাটতি পূরণে খাদ্য-তালিকায় আনারস রাখুন। এতে উপকার মিলবে।
বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়মঃ- বাচ্চাদের কাঁচা আনারস খাওয়া মোটেও উচিত নয়। বাচ্চারা আনারসের মাংসল অংশ চিবিয়ে খেতে না পারলে সেক্ষেত্রে বিকল্প হলো জুস তৈরি করে খাওয়ানো। প্রথমে আনারসের মাংসল অংশগুলো কুচি কুচি করে কেটে নিন। এর পর প্রয়োজমতো পানি এবং আনারসের কুচি কুচি মাংসল অংশগুলো দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকলে আনারসের আঁশ গুলো আটকা পড়ে যায়। এভাবে বাচ্চাদের আনারসের জুস করে খাওয়াতে পারেন।
কোন ফল খালি পেটে খাওয়া যায় না
কোন ফল খালি পেটে খাওয়া যায় নাঃ- সকাল বেলা আমরা যা খাই তাই আমাদের শরীরে হয় ইতিবাচক না হয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এটা স্বাভাবিক। এমন অনেক ফল রয়েছে পুষ্টির কথা মাথায় রেখে খালি পেটে খেয়ে ফেলি এতে করে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় কোন ফল খালি পেটে খাওয়া যায় না তা জানতে চেয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ- আমড়া খাওয়ার ১৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
কলাঃ- পুষ্টির অসাধারণ উৎস কলা। সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ এটা রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কমলা, জাম, জাম্বুরা, আঙ্গুর, লেবু বা লেবু জাতীয় ফলঃ- এই গুলোতে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি। যা খেলে রক্তে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, অম্বল, বদহজম এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
আমঃ- মিষ্টি জাতীয় গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। গরমে খালি পেটে আম খেলে জ্বালা-পোড়া, অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
লিচুঃ- লিচুতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি। সকালে খালি পেটে লিচু খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিপদজনক।
পেঁপেঃ- খালি পেটে পেঁপে খেলে কারও কারও ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া এ ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তরমুজঃ- যেহেতু তরমুজে জলীয় উপাদান বেশি। তাই খালি পেটে খেলে পেট ভারি, দেহে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
নারকেলঃ- ডাবের পানি খাওয়া যাবে তবে নারকেলের সাদা অংশ সকালে না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি। মিষ্টি হওযায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
অন্যান্য খাবারঃ- মিষ্টি জাতীয় খাবার, আচার, দই, ইস্টযুক্ত খাবার, নেশা জাতীয় দ্রব্য সকালে খালি পেটে খাবেন না। সকালে উঠে ১ গ্লাস পানি পান করে অন্যান্য খাবার খাওয়া দরকার। এটা স্বাস্থ্যসম্মত।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে স্বাস্থ্যবিষয়ক টপিকস আনারস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আনারস খাওয়ার উপকারিতা | আনারস খেলে কি উপকার হয় | আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়, আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়, বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম, কোন ফল খালি পেটে খাওয়া যায় না ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই রকম তথ্যবহুল পোস্ট আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিষয়ক পোস্ট পাবলিশ করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url