স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি - স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি জেনে নিন

বিদেশি জাতের ফল হলেও এর জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে কোন অংশে কম নয়। এই ফল দেখতে আকর্ষণীয়, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ শখের বশে ছাদ বাগান, টবে, বাড়ির আঙিনায় এই ফল চাষ করছে। কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এই পোস্টে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি, স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি, স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি না জানেন তাহলে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি - স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি জেনে নিন

দোকান থেকে বীজ ক্রয় করে এনে মাটিতে পুঁতে দিলাম, এরপর পানি দিলাম এতটুকু যথেষ্ট নয়। স্ট্রবেরি চাষের বেশ কিছু নিয়ম আছে যেমনঃ- মাটি তৈরি করা, সার দেওয়া, সেচ দেওয়া, পরিচর্যা করা, ফল উত্তোলন করা এ রকম বেশ কিছু নিয়ম আছে। যা আমাদের জানা প্রয়োজন। অন্যথায় ভালো ফলাফল আশা করা যাবে না। চলুন তাহলে আর দেরি না করে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি - স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি

স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি | স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশ

স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিঃ- স্ট্রবেরি চাষ করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। স্ট্রবেরি গাছ দেখতে অনেকটা আলু, থানকুনি গাছের মত। স্ট্রবেরি কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাঁকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। প্রথম দেখাতেই লিচু ভেবে ভূল করবেন না। স্ট্রবেরি রানার এর মধ্যে চারা বংশ বিস্তার করে। এই রানার গুলো কেটে নিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করা সম্ভব। তবে স্ট্রবেরির বীজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে রানার মাধ্যমে স্ট্রবেরির কয়েকশ চারা তৈরি করা সম্ভব।

স্ট্রবেরি চাষের সময়কালঃ- স্ট্রবেরি শীতকালীন একটি ফল। স্ট্রবেরি চাষের আদর্শ সময় হলো মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত। উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর মাস। যখন আবহাওয়া গরম হয়ে যায় তখন গাছ মারা যায়। মধ্য অক্টোবর থেকে নিয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি চাষের এবং ফল উত্তোলনের আদর্শ সময়। কোন কোন সময় এপ্রিল পর্যন্ত স্ট্রবেরির গাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় এটা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর।

মাটি কেমন হওয়া উচিতঃ- বেলে-দোঁআশ মাটিতে এই ফল ভালো হয়। মাটির গুণগত মান বাড়ানোর জন্য মাটির সাথে প্রতি একরে ১০০ কেজি শুকনো গোবর, জৈব সার, ৬০০ গ্রাম জিপসাম, ৮০ কেজি এমওপি সার, ৭০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি ইউরিয়া সার মেশাতে হবে।

চারা তৈরি করাঃ- বীজ থেকে সরাসরি স্ট্রবেরি চারা তৈরি করা যায়। মজার বিষয় হলো একটি স্ট্রবেরির গাছ থেকে রানারের মাধ্যমে ১৮-২০ টি চারা গাছ তৈরি করা সম্ভব। স্ট্রবেরি গাছের গোড়া থেকে বড় বড় লতা মাটিতে নুইয়ে পড়ে এই লতা গুলোকে বলা হয় রানার। এই লতা গুলো মাটির সংস্পর্শ পেলে লতার গিট থেকে শিকড় বের হয়। গাছ কলম করলে যেমন শিকড় বের হয় ঐ রকম। শিকড়ের ঐ অংশ টুকু কেটে মাটি, গোবর মিশ্রিত পলি ব্যাগে পুঁতে দিন। কিছুদিন পলিব্যাগে রাখার পর চারা জমিতে লাগান।

জমি তৈরি করাঃ- জমি পরিষ্কার করে ৩০ সেঃমি গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। জমি এমনভাবে চাষ দিতে হবে মাটি যেন ঝুরঝুরে হয়ে যায়। সাধারণত স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপরে থাকে এজন্য মাটি ঝুরঝুরে হওয়া আবশ্যক। জমি পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করুন। পানি যেন না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পানি জমলে গাছের গোড়া পঁচে যাবে। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ- স্ট্রবেরি খাওয়ার ১৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা, স্ট্রবেরি খাওয়ার নিয়ম

চারা রোপনের নিয়মঃ- লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেঃমি, সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেঃমি, চারা রোপনের আদর্শ সময় মধ্য অক্টোবর - মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত। নভেম্বর মাসে চারা রোপন করলে খুবই ভালো হয়।

সেচ দেওয়ার নিয়মঃ- গাছে ফুল আসার পর ২-৩ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। তাছাড়া মাটিতে রসের অভাব থাকলে সেচ দিতে হবে। সেচ এমনভাবে দিবেন যাতে জলাবদ্ধতা তৈরি না হয়।

পরিচর্যা করার নিয়মঃ-  

  • আগাছা দূরঃ- গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • ছত্রাক দূর / ফল পঁচা রোগ নিরাময়ঃ- গাছের পাতায় অনেক সময় ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে,  ছত্রাকের আক্রমণ দূর করতে প্রতি লিটার পানিতে নোইন ৫০ ডব্লিউপি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ নামক ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম করে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন।
  • পাখির আক্রমণ দূরঃ- গাছে ফল আসার পরপরই পাখির আক্রমণ বেড়ে যায়। পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচতে বেড জাল ব্যবহার করুন।
  • মাকড়ের আক্রমণ দূরঃ- মাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতি লিটার পানিতে ভারটিমেক নামক মাকড়নাশক ১ মিলি মিটার মিশিয়ে ৭ দিন পর ২-৩ বার স্প্রে করুন।
  • গাছের রক্ষনাবেক্ষণঃ- রোদের তাপ, ভারি বৃষ্টি স্ট্রবেরি গাছ সহ্য করতে পারে না। তাই গাছের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় পলিথিন ব্যবহার করবেন। যাতে সূর্যের তাপ সরাসরি গাছে না পড়ে এবং ভারি বৃষ্টিতে যেন গাছে পানি না জমে, গাছের যেন কোন ক্ষতি না হয়।
  • ফল উত্তোলনঃ- চারা গাছ লাগানোর ১.৫ মাস পরে গাছে ফল ধরতে শুরু  করে। ফল পরিপক্ক হতে ২.৫-৩ মাস সময় নেয়। ফলের রং অর্ধেক লাল হওয়া মাত্রই ফল উত্তোলন করতে হয়।

স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি

স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতিঃ- অনেকে মনে করে মরিচের বীজ মাটিতে ছিটিয়ে দিলাম, বীজ ফেটে চারা বের হয়ে গেল স্ট্রবেরির ক্ষেত্রে মনে হয় এমনটাই। এটি আসলে ভূল ধারণা। সরাসরি জমিতে বীজ বপন না করে স্ট্রবেরির বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিয়ে ঐ চারা ১৫ দিন পর জমিতে রোপন করলে সবথেকে ভালো হয়।

বীজ থেকে চারা তৈরি করার কিছু নিয়ম আছেঃ-

  • প্রথমে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে মাটির সাথে শুকনো গোবর মিশাতে হবে। শুকনো গোবার মেশানো হয়ে গেলে ঐ গোবর মিশ্রিত মাটি পলি ব্যাগে ভরতে হবে।
  • পলি ব্যাগে ১ ইঞ্চি গর্ত করে মাটি বীজ বপন করুন।
  • এরপর ঐ পলিব্যাগের উপর আউর / খড় বিছিয়ে দিন। এর পর পানি দিয়ে সেচ দিন।
  • মোটা পলিথিনের বেড শিট ব্যবহার করবেন। যাতে করে বৃষ্টির পানিতে কোন ক্ষতি না হয়।
  • এই ভাবে প্রতিদিন পানি সেচ দিবেন। ৩-৪ দিন পর আউর বা খড় সরিয়ে দেখবেন বীজ ফেটে চারা বের হয়ে গেছে।
  • চারা যখন একটু বড় হবে তখন ঐ চারা জমিতে রোপন করুন।

টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি | ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি

টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিঃ- স্ট্রবেরি টবে, ক্যারেটে, ছাদ বাগানেও চাষ করা যায়। স্ট্রবেরির জন্য দোঁ-আশ মাটি হলে ভালো হয়। আপনি মাটির সাথে শুকনো গোবর, ভার্মি কমপোস্ট, বালি মিশিয়ে নিতে পারেন। টবে গাছ লাগান আর যেখানেই গাছ লাগান না কেন পানি যেন বের হতে পারে সু-ব্যবস্থা রাখবেন।

টবে বা ক্যারেটে যখন গাছ লাগাবেন পানি বের হতে পারে সেরকম ব্যবস্থা যেন থাকে। এরপর আপনি টবে ছোট ছোট ইট, পাথর, নারকেলের খোসা টবের নিচে দেন। এরপর আপনি বালু, জৈব সার, শুকনো গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে টব পূর্ণ করুন।

চারা আপনি ২ ভাবে তৈরি করতে পারেন যথাঃ- ১) বীজ থেকে ২) রানার থেকে। ১ টি গাছ থেকে রানারের সহায়তা ১৮-২০ টি চারা তৈরি সম্ভব। গাছের গোড়া থেকে লতার মতো যখন রানার তৈরি হবে ঐ রানার গুলো পলিব্যাগে পুঁতে রাখুন। রানার গুলো মাটির সংস্পর্শ পেলে ঐ রানারের গিট থেকে শিকড় বের হবে। শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয়, শিকড়ের উপরের অংশ কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলে নতুন স্ট্রবেরির চারা হয়ে গেল। এভাবে রানার থেকে চারা তৈরি করা যায়। স্ট্রবেরি  বীজ মাটির ১ ইঞ্চি মতো পুঁতে খড় বা আউর বিছিয়ে সেচ দিলে ৩-৪ দিন পর বীজ ফেটে চারা গাছ তৈরি হয়।

স্ট্রবেরি গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর মাস। শীত মৌসুমে স্ট্রবেরি ভালো হয়।

টবে গাছ লাগানোর একটি সুবিধা যেকোন সময় এটা স্থানান্তর করা যায়। বৃষ্টি, প্রচন্ড রোদের সময় আপনি তা ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

উপরের স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি | স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশ এই প্যারাতে কিভাবে পরিচর্যা করবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে পড়ে নিন।

স্ট্রবেরি গাছে তেমন কোন পানির প্রয়োজন হয় না। মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে সেচ দিবেন।

গাছ লাগানোর ১.৫ মাস পরে গাছে ফল আসে যখন ফলের রং অর্ধেক লাল হয়ে যাবে তখন ফল উত্তোলন করবেন।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে গুগলে বহুল আলোচিত একটি টপিকস স্টবেরি চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আরও আলোচনা করা হয়েছে স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি, ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি, টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি নিয়ে।

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই রকম জনপ্রিয় আরও তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাইটে এই ধরণের পোস্ট নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url