পাথরকুচি পাতার ১৫টি উপকারিতা ও ৫টি অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন
প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে পাথরকুচি ব্যবহার হয়ে আসছে। পাথরকুচি পাতায় রয়েছে বহু ঔষধি গুণাগুণ। প্রাচীন কালে যেকোন রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষ সরাসরি ঔষধি উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল ছিল। পাথরকুচি পাতার নাম অনেকে শুনেছি কিন্তু পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো আমরা অনেকে জানি না। এই পোস্টে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পাথরকুচি গাছ সাধারণত ১.৫-২ ফুট লম্বা হয়। এই গাছের পাতা মসৃণ, মাংসল, পাতার দেখতে অনেকটা ডিমের আকৃতির মতো। এই পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে সেখান থেকে নতুন গাছ জন্ম নেয়। চলুন তাহলে আর দেরি না করে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | পাথরকুচি পাতার উপকারিতা| পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা
- পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
- খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
- পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
- পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
- পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়
- লেখকের মন্তব্য
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | পাথরকুচি পাতার উপকারিতা | পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা
পাথরকুচি পাতা খেলে পেটের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। এই গাছের পাতা মাটিতে পড়লে সেখান থেকে চারা জন্মে। পাথরকুচি পাতায় চারদিকে ছোট ছোট গোল গোল খাঁজ থাকে। গাছের বয়স বৃদ্ধি পেলে এই ছোট ছোট গোল গোল খাঁজ থেকেও চারা তৈরি হয়। পাথরকুচির জন্য কাকর মাটি সবথেকে ভালো হবে। সাধারণত ভেজা, স্যাঁতস্যাতে জায়গায় এই গাছ ভালো জন্মে। এই গাছে শীতকালে ফুল আসে, গ্রীষ্মকালে ফল আসে।
পাথরকুচি পাতার ১৫টি উপকারিতা
কিডনি পাথর অপসারণঃ- অনেকের কিডনিতে পাথর হয়ে যায়। পাথরকুচি পাতা কিডনিতে দ্রুত পাথর অপসারণ করতে সাহায্যে করে।
পেট ফাঁপা দূরঃ- বিভিন্ন কারণে পেট ফুলে যায়। এই পেট ফোলা দূর করার জন্য পাথরকুচি পাতার রসের সাথে পরিমাণ মতো চিনি নিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে খান এতে পেট ফোলা দ্রুত নিরাময় হবে।
মৃগী রোগ দূরঃ- মৃগী রোগীকে পাথরকুচি পাতার রস ২-১ ফোটা মুখে দিলেই ঐ মৃগী রোগীক তাৎক্ষণিক স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শিশুদের পেট ব্যথা দূরঃ- শিশুদের অনেক সময় প্রচন্ড পেট ব্যথা হয়ে থাকে। পেট ব্যথা নিরাময়ে পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করলে পেট ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তিঃ- পাথরকুচি পাতার রস + গোল মরিচ এক সাথে খেলে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
জন্ডিস নিরাময়ঃ- জন্ডিস নিরাময়ে ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে পাথরকুচি পাতার রস খান। এতে দ্রুত জন্ডিস নিরাময় হবে।
শরীরের জ্বালাপোড়া দূরঃ- পাথরকুচি পাতার রস + আধা কাপ গরম পানি মিশিয়ে খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- পাথরকুচি পাতার রস খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
সর্দি দূরঃ- যাদের অতিরিক্ত মাত্রায় সর্দি-কাশি হয়, তারা পাথরকুচি পাতার রস গরম করে সোহাগার খৈ মিশিয়ে খেলে দ্রুত সর্দি নিরাময় হবে।
ডায়রিয়া বা আমাশয় নিরাময়ঃ- পাথরকুচি পাতার রস + জিরা + ঘি মিশিয়ে খেলে দ্রুত ডায়রিয়া বা আমাশয় রোগ নিরাময় হবে।
মেহ দূরঃ- বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে ফোঁড়া উঠে ব্যথা অনুভব হয় যাকে মেহ বলে। পাথরকুচি পাতার রস খেলে এই ব্যথা নিরাময় হয়।
বিষাক্ত পোকা কামড়ালেঃ- বিষাক্ত পোকা কামড়ালে ঐ স্থানে জ্বালা-পোড়া ব্যথা অনুভব হয়। এই পাতার রস আগুলে সেকে লাগালে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্নেঃ- পাথরকুচি পাতা পেষ্ট করে ত্বকে লাগালে ব্রণ, ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া পাথরকুচি পাতার রস খেলে ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো হয়।
রক্তপিত্তঃ- পিত্তজনিত ব্যথায় দিনে ২ বার পাথরকুচির রস খেলে উপকার মিলবে।
অন্যান্যঃ- ইউরিনের ইনফেকশন দূর করে, ঘন ঘন পানির তৃষ্ঞা দূর করে, রক্ত বিশুদ্ধ করে, অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্যে করে।
পাথরকুচি পাতার ৫টি ক্ষতিকর দিক / পাথরকুচি পাতার ৫টি অপকারিতা
পাথরকুচি পাতার যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনুরুপভাবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যা আমাদের জানা প্রয়োজন। যেকোন জিনিস সঠিক সময়ে প্রয়োজন মতো খেলে সেখান থেকে উপকার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজ্জনক। এখন আমরা পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক বা পাথরকুচি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে জানব।
- পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত খেলে তা যদি হজম না হয় তাহলে পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ক্ষুধামন্দার কারণ হতে পারে।
- মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবারের প্রতি অনীহা জন্মে।
- পাথরকুচি পাতার রস ডায়রিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- ইহা পিত্ত থলির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়ঃ- খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে তা শরীরের জন্য খুবই ভালো হয়। খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে তা শরীরে দ্রুত প্রভাব ফেলে যার কারণে এর কার্যকারিতা বেড়ে যায়। সুতারাং খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কিডনির জন্য খুবই ভালো হয়। যাদের কিডনিতে পাথর জমে গেছে তারা পাথর অপসারণের জন্য খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খান এতে উপকার মিলবে। তাছাড়া জ্বর-সর্দি-কাশি, জন্ডিস, ডায়রিয়া, আমাশয়, মৃগী রোগ, পাইলসের মতো রোগ থেকে মুক্তি মেলে পাথরকুচি পাতা খেলে।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়মঃ- যারা পাথরকুচি পাতা কখনো খায় নি, তারা অনেক পাথরকুচি খাওয়ার নিয়ম জানতে চায়। শরীরের জন্য উপকারি ঔষধি উদ্ভিদ হলো পাথরকুচি পাতা। এখন আমরা আলোচনা করব পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে।
নিয়ম ১ঃ- চিনি + পানি + পাথরকুচি পাতার রস গরম করে মিশিয়ে খেলে পেট ফোলা দ্রুত নিরাময় হবে।
নিয়ম ২ঃ- গোল মরিচ + পাথরকুচি পাতার রস খেলে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
নিয়ম ৩ঃ- সরাসরি পাথরকুচি পাতার রস নিয়মিত খেলে জন্ডিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ইহা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি।
নিয়ম ৪ঃ- পাথরকুচি পাতার রস আধা কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
নিয়ম ৫ঃ- পাথরকুচি পাতার রস গরম করে সোহাগার খৈ এর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি থেকে মুক্তি মেলে।
নিয়ম ৬ঃ- জিরা + ঘি + পাথরকুচি পাতার রস একসাথে খেলে আমাশয় বা ডায়রিয়া দ্রুত নিরাময় হয়।
নিয়ম ৭ঃ- পাথরকুচি পাতা + সিয়া সিড একসাথে খেলে শরীর ভালো থাকবে।
নিয়ম ৮ঃ- পাথরকুচি পাতার রস শরবতের মতো করেও খাওয়া যায়।
নিয়ম ৯ঃ- পাথরকুচি পাতা + লবণ দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়
পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়ঃ- দিনে যেকোন সময় এই পাথরকুচি পাতা বা পাথরকুচি পাতার রস খাওয়া যায়। উপরে বর্ণিত পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ঐ প্যারায় যে সকল উপকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে ঐ রোগের মধ্যে কোন একটি রোগে আপনি আক্রান্ত হলে দিনে ২ বার সকালে, বিকালে পাথরকুচি পাতা খাওয়া যায়। তাছাড়া খালি পেটেও পাথরকুচি পাতা খাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে পাথরকুচি পাতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | পাথরকুচি পাতার উপকারিতা | পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা, পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক, খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়, পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম, পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম, পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট আমাদের সাইটে নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। এই রকম তথ্যবহুল আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি, আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url