জাম্বুরার ১৭টি উপকারিতা ও ৪টি অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা

কারো কাছে জাম্বুরা, কারো কাছে বাতাবি লেবু নামে পরিচিত। জাম্বুরা সাইট্রাস জাতীয় ফল। একাধিক গবেষণায় জাম্বুরার স্বাস্থ্য উপকারিতার প্রমাণ মিলেছে। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফল যেকোন বয়সের মানুষ খেতে পছন্দ করে। যতগুলো দেশীয় ফল রয়েছে তার মধ্যে জাম্বুরা অন্যতম। এই পোস্টে আমরা জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা নিয়েও আলোচনা করব। জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা জানতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

জাম্বুরার ১৭টি উপকারিতা ও ৪টি অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা

মৌসুমী ফল হিসেবে আমরা জাম্বুরা বাসায় নিয়ে আসি। কিন্তু  আমরা এর উপকারিতা, অপকারিতা, প্রেগনেন্ট অবস্থায় এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নই। এই ফল শীতের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত বাজারে দেখা মিলে। এই ফল গাছের খুব একটা বেশি যত্ন নেওয়া লাগে না। একটি গাছে অনেক জাম্বুরা ফল ধরে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা | জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা | জাম্বুরার অপকারিতা

দেশীয় ফল হিসেবে এই ফল সবাই পছন্দ করে। জাম্বুরার খোসা ছড়ালেই নরম গোলাপী রঙের দানার দেখা মিলে। সরাসরি এই দানা গুলো আপনি খেতে পারেন। অনেকে স্বাদ বাড়ানোর জন্য জাম্বুরার দানার সাথে লঙ্কা, বিটলবণ, ধনেপাতা, কাসুন্দি, সরিষার তেল মাখিয়ে খাই। তবে মশলা না মাখিয়ে ফ্রেশ জাম্বুরা খাওয়াটাই ভালো। এই ফল খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার মিলে। এখন আমরা জাম্বুরার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- জাম্বুরায় ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ থেকে ফ্রি-র‌্যাডিকেলস দূর করে। যখন দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন শরীরে নানান ধরণের রোগ বাসা বাধেঁ। সুতারাং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ‍বৃদ্ধির জন্য জাম্বুরা খান। এতে উপকার মিলবে।

স্নায়ু কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখেঃ- জাম্বুরার রাইবোফ্ল্যাভিন, থায়ামিন, ভিটামিন উপাদান স্নায়ু কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্যে করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ- জাম্বুরার ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, সুতারাং ওজন বেড়ে যাওয়ার  কোন সম্ভাবনা নেই।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- জাম্বুরার পটাসিয়াম উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্যে করে।

খাবারের রুচি বৃদ্ধিঃ- জাম্বুরার পুষ্টি উপাদান গুলো খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্যে করে। সুতারাং যাদের খাবারের রুচি নেই তারা খাবারের রুচি বাড়ানোর জন্য জাম্বুরা খান।

হজশক্তি বৃদ্ধিঃ- জাম্বুরায় ফাইবার রয়েছে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে। ইহা কোষ্ঠকাঠিন্য ‍দূর করে। সুতারাং  যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা জাম্বুরা খান।

ক্ষুধার চাপ নিবারণঃ- জাম্বুরা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার পাওয়া যায়। যা শরীরে দীর্ঘ সময় থাকে। ফলে বাড়তি ক্ষুধার চাপ লাগে না।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ- জাম্বুরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর সেরা উৎস। ইহা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

কোলেস্টেরল দূরঃ- জাম্বুরা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্যে করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

রক্ত পরিষ্কারঃ- রক্ত পরিষ্কার করতে খাদ্য তালিকায় জাম্বুরা ফল রাখুন।

সর্দি-কাশি দূরঃ- যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি লেগে থাকে তারা জাম্বুরা ফল খান। এতে সর্দি-কাশি দূর হবে, মুখের রুচি বাড়বে, মুখের ঘা থাকলে তা নিরাময় হয়ে যাবে।

বার্ধক্য প্রতিরোধঃ- অনেকে আছে যাদের অল্প বয়সেই বুড়োর মতো লাগে। জাম্বুরার স্পারমেডিন বিশেষ উপাদান বার্ধক্য দূর  করতে সাহায্যে করে।

ত্বক ভালো রাখেঃ- ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস জাম্বুরা। ইহা ত্বকের স্বাস্থের জন্য খুবই কার্যকরী। ইহা ত্বকের দাগ-ছোপ, বলিরেখা, ত্বকের বার্ধক্য দূর করতে সাহায্যে করে।

মজবুত হাড়ঃ- ,দেহে যখন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় তখন হাড়ে নানান রোগ দেখা যায়। জাম্বুরার ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদান হাড় মজবুত করে, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- যখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় তখন ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। জাম্বুরা রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে  করে।

ক্ষত নিরাময়ঃ- টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এগুলো অপারেশনের ক্ষত, পড়ে যাওয়ার ক্ষত, যেকোন প্রকারের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্যে করে।

লিভার ভালো রাখেঃ- জাম্বুরারয় শক্তিশালী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে। যা লিভারকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিক রাখে।


জাম্বুরার অপকারিতাঃ- জাম্বুরার উপকারি দিক গুলো আমরা জেনেছি, তবে এর কিছু অপকারি দিক রয়েছে যা আমাদের জানা নেই। সুতারাং জাম্বুরার অপকারিতা গুলো হলোঃ-

  • যেহেতু জাম্বুরা টক জাতীয় ফল, যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে জাম্বুরা খাবেন না। কেননা, এতে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিবর্তে কম মাত্রায় খাবেন, জাম্বুরা খাওয়ার পর কুলকুচা করে নিবেন।
  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা জাম্বুরা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খেতে চাইলে কম পরিমাণে খান।
  • যাদের রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি তারা জাম্বুরা না খাওয়াই ভালো।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা লবণ দিয়ে জাম্বুরা খাবেন না।

জাম্বুরা ফলের ছবি

জাম্বুরা ফলের ছবিঃ- অঞ্চলেভেদে একে বিভিন্ন নামে চিনে। কেউ একে জাম্বুরা বলে, কেউ একে বাতাবি লেবু বলে, কেউ একে ছোলম বলে। আপনারা যারা জাম্বুরা ফলের ছবি দেখতে চান তাদের জন্য নিচে কয়েকটি ছবি দেওয়া হলোঃ-

জাম্বুরা-১

জাম্বুরা-২


জাম্বুরা-৩

জাম্বুরা-৪

জাম্বুরা-৫

জাম্বুরা-৬

জাম্বুরা-৭

গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে নারীদের টক,ঝাল জাতীয় খাবার গুলো খেতে ইচ্ছে করে। তেমনি টক-মিষ্টি স্বাদের একটি ফল জাম্বুরা। নবজাতকের সুস্বাস্থের জন্য গর্ভবর্তী মহিলাদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাওয়া আবশ্যক। ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস জাম্বুরা। এখন আমরা  গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জানবঃ-

  • ফলিক অ্যাসিড, বিটা-ক্যরোটিন এর অন্যতম উৎস জাম্বুরা। সুতারাং নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করতে নিয়মিত জাম্বুরা খান।
  • গর্ভকালীন সময়ে অনেক মহিলাদের হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। এজন্য হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে গর্ভবর্তী নারীদের জাম্বুরা খাওয়া দরকার।
  • জাম্বুরা থেকে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি, এনজাইম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা  শিশুর দাঁত, মাড়ি, শরীরের হাড় মজবুত করে।
  • সর্দি, কাশি, মুখের ঘা, আলসার এই ধরণের সমস্যা নিরাময় করে জাম্বুরা।
  • জাম্বুরায় উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম  রয়েছে যা শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যে করে।
  • গর্ভাবস্থায় মাংসপেশীতে যদি ব্যাথা অনুভব হয় জাম্বুরা খান এতে উপকার মিলবে।
  • যদি গর্ভবর্তী নারীদের রক্তস্বল্পতা দেখা যায় তাহলে শিশুর বিকাশে বাধাগ্রস্থ হয়। তাই এই ধরণের সমস্যা দূর করতে জাম্বুরা খান।
  • যাদের দেহে উচ্চ মাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে তারা নিয়মিত জাম্বুরা ফল খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
  • যেসকল গর্ভবর্তী নারীদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা জাম্বুরা খেলে উপকার পাবেন।
  • গর্ভবর্তী নারী ও শিশুর ত্বকের জন্য জাম্বুরা ফল খুবই উপকারি।
  • গর্ভবর্তী নারীদের কোলেস্টেরলের সমস্যা দূর করতে জাম্বুরা খাওয়া দরকার। এতে বাজে কোলেস্টেরল দূর হয়।
  • গর্ভবর্তী নারীদের দেহে রক্ত চলাচলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্যে করে জাম্বুরা। এতে দেহে বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন পৌছে যায়।
  • যে সকল মায়েদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তারা জাম্বুরা খান এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হবে।
  • ইহা গর্ভবর্তী মহিলাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে।

সতর্কতাঃ- জাম্বুরা খাওয়ার পর পানি পান, দুগ্ধজাত জাতীয় খাবার খাবেন না। এতে বদহজম সহ পেটের নানান সমস্যা হতে পারে। জাম্বুরা খাওয়ার ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর অন্য খাবার খাবেন।

জাম্বুরা ইংরেজি কি | জাম্বুরা in english

জাম্বুরা ইংরেজি কিঃ- জাম্বুরার ইংরেজি নাম হলোঃ- grapefruit, Pomelo, pummelo, pommelo. এর বৈজ্ঞানিক নাম হলোঃ- Citrus maxima, Citrus grandis. জাম্বুরা ফলে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টি গুণাগুণ। এই ফলের গাছ বহুবর্ষজীবী, চির সবুজ বৃক্ষ। এশিয়া অঞ্চলে এই ফলের বেশি ফলন হয়। অনেকে শখের বসে বাড়ির ছাদে, আঙিনায় এই ফল গাছ লাগায়। তাছাড়া বানিজ্যিকভাবে অনেক জায়গায় এই ফলের চাষাবাদ হয়।

খালি পেটে জাম্বুরা খেলে কি হয়

খালি পেটে জাম্বুরা খেলে কি হয়ঃ- জাম্বুরা স্বাস্থের জন্য কতটা উপকারি তা আমরা বিস্তারিত আলোচনা  করেছি। ফল জাতীয় কোন কিছু খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায় না। জাম্বুরায় অ্যাসিড রয়েছে। খালি পেটে জাম্বুরা খেলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, ডায়রিয়া, পেটে জ্বালা পোড়া, বমি, মাথা ঘোরা সহ নানান ধরণের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। সুতারাং খালি পেটে জাম্বুরা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক এই পোস্টে দেশীয় ফল জাম্বুরা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা | জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা | জাম্বুরার অপকারিতা, জাম্বুরা ফলের ছবি, গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা,  জাম্বুরা ইংরেজি কি | জাম্বুরা in english, খালি পেটে জাম্বুরা খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি, আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url