বরই এর অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
টক-মিষ্টি স্বাদের এই শীতকালীন ফল খেতে চায় না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই বরই এর পোকা। এই বরই সরাসরি খাওয়া যায় আবার চাটনি, আচার করেও খাওয়া যায়। মৌসুমী ফল বরই কতটা উপকারি তা কল্পনাও করা যায় না কিন্তু অতিরিক্ত বরই খেলে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই পোস্টে বরই এর অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সুতারাং বরই এর অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
অঞ্চলভেদে কেউ একে বরই বলে, কেউ একে কুল বলে ডাকে। বরই কাঁচা, পাঁকা ২ ভাবে খাওয়া যায়। সারা বছর ধরে খাওয়ার জন্য অনেকে এটা সংরক্ষণ করে। বরই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, অপকারিতা উভয় রয়েছে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বরই এর অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- বরই এর অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
- বরই খাওয়ার উপকারিতা
- টক বরই এর উপকারিতা
- বরই এর অপকারিতা
- লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতাঃ- অনাগত সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য একজন গর্ভবর্তী মা কে খাবার প্রতি যত্নবান হওয়া আবশ্যক। গর্ভবর্তী মা যদি নিজেই পুষ্টি হীনতায় ভূগে তাহলে অনাগত সন্তানও পুষ্টি হীনতায় ভূগবে এটা স্বাভাবিক। যেহেতু একটি দেহের মধ্যে দিয়ে আরও একটি জীব বেড়ে ওঠে এজন্য গর্ভবর্তী নারীদের সবসময় পুষ্টিকর খাবারের প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার। মৌসুমী ফলে রয়েছে বহু ধরণের পুষ্টি উপাদান যা গর্ভবর্তী নারীদের জন্য প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা আপনারা জানতে চেয়েছেন চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ
ভ্রণের বিকাশঃ- বরই যে পুষ্টিগুণাগুণ রয়েছে তা ভ্রণের বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মেন্টাল স্ট্রেস রোধঃ- মানসিক অস্থিরতা গর্ভবর্তী নারীদের কমন একটি সমস্যা। গর্ভকালীন সময়ে বরই খেলে মানসিক স্ট্রেস অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- বরই তে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা গর্ভবর্তী নারীর দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- গর্ভবর্তী নারীরা অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপে ভূগে। বরই এর পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রদাহ দূরঃ- গর্ভবর্তী নারীদের এই সময় পেশীতে ব্যথা, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়ে থাকে। বরই এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে।
হাড় গঠনঃ- বরই এর ক্যালসিয়াম উপাদান নবজাতকের হাড় গঠন, হাড় মজবুত-শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
ঘুমের সমস্যা দূরঃ- অনেক সময় গর্ভবর্তী মায়েদের ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। ঘুমের সমস্যা দূর করতে বরই খান।
রুচি শক্তি বৃদ্ধিঃ- খাবারে অরুচি দেখা দিলে বরই খান। এতে পুনরায় খাবারে রুচি শক্তি ফিরে আসবে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ- হজমের সমস্যা দেখা দিলে বরই খান। এতে উপকার মিলবে।
রক্তের ঘাটতি দূরঃ- গর্ভকালীন সময়ে দেহে রক্তের ঘাটতি দেখা দিলে বরই খান। বরই থাকা বিদ্যমান আয়রন রক্তের ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করে।
বরই খাওয়ার উপকারিতা
বরই খাওয়ার উপকারিতাঃ- চলছে শীতের মৌসুম। এই সময় বাজারে ঝাঁকে ঝাঁকে বরই এর দেখা মিলে। বরই খেলে কি হয় তা হয়ত অনেকে জানে না। বরই দেখলে জিভে পানি চলে আসে। ছোট থেকে বড় সকলেরই পছন্দের একটি বরই। বরই খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণাগুণ আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই ফল দামেও সস্তা। বরই কাঁচা, পাকা, শুকিয়ে যেভাবে খুশি খেতে পারেন। এ সময় ঘর থেকে বের হলেই রাস্তার ধারে ধারে বরই এর দেখা মিলবে। এই সুস্বাদু, আকর্ষণীয় ফলটির কত গুণ রয়েছে তা কি আপনারা জানেন ! এই পোস্টে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
বরই এর পুষ্টি উপাদানঃ- বরই তে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিংক, সোডিয়াম, রিবোফ্লাবিন, ম্যাঙ্গানিজ, থায়ামিন, নিয়াসিন, ফ্যাট, প্রোটিন, পানি, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।
ভালো ঘুম হয়ঃ- বরই এর বিভিন্ন ক্যামিকেল উপাদান স্ট্রেস দূর করে। অনিন্দ্রা জনিত সমস্যা দূর করে এতে ভালো ঘুম হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ- বরই এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি-র্যাডিকেলস দূর করে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হাড় ও দাঁত মজবুতঃ- বরই এর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস উপাদান হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে। দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী করে। দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। শরীরের হাড় ভিতর থেকে মজবুত এবং শক্তিশালী করে।
উচ্চ রক্তচাপ হ্রাসঃ- বরই এর পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ- বরই তে ক্যালরির পরিমাণ কম হওয়ায় ইহা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরঃ- বরই আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় ইহা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- বরই এর স্যাপোনিন নামক উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইহা ব্রেইন কে গতিশীল করে। ডিমেনশিয়া ( যে কোন কিছু ভূলে যাওয়া ) থেকে মুক্তি দেয়।
প্রদাহ দূরঃ- বরই এ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় ইহা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। ইহা শরীরের ব্যথা-বেদনা নিরাময় করে।
রক্তশূন্যতা দূরঃ- বরই এর আয়রন উপাদান রক্তশূন্যতা নিরাময়ে করে। রক্তে উৎপাদনে সহায়তা করে।
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখেঃ- বরই এর ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, আয়রন উপাদান রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। রক্তে জমাট বাধা রোধ করে।
ত্বক ভালো রাখেঃ- ত্বকের দাগ-ছোপ, ব্রণ, ত্বকের বার্ধক্য এই ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে ত্বককে উজ্জল প্রাণবন্ত রাখতে বরই খান। ইহা ফ্রি-র্যাডিকেলস দূর করে। ত্বকের ক্ষতি রোধ করে।
মুখের রুচি বৃদ্ধিঃ- যাদের মুখে রুচি নেই, খাবার খেতে ভালো লাগে না তারা মুখের রুচি ফেরাতে বরই খান। এতে উপকার পাবেন।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- ভিটামিন এ, ভিটামি বি, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস বরই। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি লেগেই থাকে। সুতারাং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরই খান। বরই খেলে জিহবার ঘা, ঠোঠের ঘা যেকোন প্রকারের ঘা দ্রুত নিরাময় হয়।
লিভার সুস্থ রাখেঃ- লিভার সুস্থ রাখতে বরই এর রয়েছে জুড়ি মেলা ভার।
রক্ত বিশুদ্ধ করেঃ- বরই রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে রক্ত কে বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণঃ- বরই এর ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
টক বরই এর উপকারিতা
টক বরই এর উপকারিতাঃ- টক বরই বহু নেতিবাচক গুজব রয়েছে। টক-মিষ্টি স্বাদের এই বরই তে রয়েছে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা। শীতের শেষের দিকে বাজারে অহরহ টক বরই এর দেখা মিলে। টক বরই দেখলে স্বাভাবিকভাবে জিভেতে জল চলে আছে। এই টক বরই আকারে ছোট হলেও এর অনেক গুন রয়েছে। টক বরই খেলে যেসকল উপকার পাবেনঃ-
- ইহা শারীরিক দূর্বলতা দূর করে।
- দেহে রক্তের চলাচল গতিশীল রাখে।
- টিউমার, ক্যান্সার. স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো মরণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করে।
- বদহজম দূর করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য অক্ষুন্ন রাখে।
- দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে যে কোন ধরণের সংক্রমণ থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়।
- ইহা রক্ত বিশুদ্ধ করে।
- চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে।
- খাবারের রুচি ফিরিয়ে আনে।
- মানসিক চাপ, উদ্বিগ্ন, হতাশা দূর করে ঘুমের উন্নতি ঘটায়।
বরই এর অপকারিতা
বরই এর অপকারিতাঃ- মৌসুমী ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। যখন আপনি তা অতিরিক্ত খাবেন তখন তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। মৌসুমী ফল থেকে উপকার তখনই পাওয়া যায় যখন আপনি তা সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে খাবেন। অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেকে আমরা লবণ, গুড়া মরিচ দিয়ে বরই এর চাটনি করে খায়। খেতেও বেশ দারুণ লাগে। কিন্তু মনের অজান্তে যে শরীরের ক্ষতি করে ফেলছি তা হয়ত বা বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই।
নূন দিয়ে অতিরিক্ত বরই খেলে হতে পারে
উচ্চ রক্তচাপঃ- লবণে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। আর প্রতিনিয়ত লবণ দিয়ে বরই খেলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়। ফলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের আশংকা বাড়তে পারে।
শরীর ফুলে যায়ঃ- নূনে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তা শরীরে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীরের অঙ্গ বিশেষ করে পেট ফুলে যায়। ফলে শরীরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। তাই আজ থেকে লবণ দিয়ে ফল খাওয়া ত্যাগ করুন।
কিডনি সমস্যা তৈরি করেঃ- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কিডনি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এজন্য নূন দিয়ে বরই খাওয়া ত্যাগ করুন।
পুষ্টির ঘাটতিঃ- বরই যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে লবণ দিয়ে বরই খাওয়ার কারণে সেই পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরে ঠিক মতো পৌছায় না। সেগুলো পানি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
অন্যান্য সমস্যাঃ- অতিরিক্ত বরই খেলে গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, রক্তের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়া, বদহজম এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ কোন রোগের জন্য ওষধ খেলে বরই না খাওয়াই ভালো। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে অতিরিক্ত বরই খাওয়ার কারণে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এই ধরণের সমস্যা হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ এই পোস্টে স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা, বরই খাওয়ার উপকারিতা, টক বরই এর উপকারিতা, বরই এর অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট নিয়মিত পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করার অনুরোধ রইল। আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পাবলিশ করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url