চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম - চেরি ফল খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা

চেরি ফল নাম তো শুনেছেন নিশ্চয় ! লাল লাল রঙের চেরি ফল দেখলেই লোভ লাগে। বিদেশি ফল হলেও বাংলাদেশে এর বেশ পরিচিতি রয়েছে। খাবারের গুণগত মান বাড়াতে চেরি ফলের আয়োজন করা হয়। এই পোস্টে চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম, চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সুতারাং আপনি যদি চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম, চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম - চেরি ফল খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা

চেরি ফলে যে পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে তা আমাদের শরীর গঠনে, মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করে। সুতারাং বুঝতেই পারছেন চেরি ফল আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চেরি ফলে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা যা নিম্নে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম - চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম

চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা | চেরি ফল খেলে কি হয়

চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ- যত গুলো জনপ্রিয় ফল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো চেরি ফল। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। দেখতে লোভনীয়, পুষ্টিতে সেরা এই ফল পেতে কে না চায় ! খাবারে লাল বর্ণ দিতে চেরি ফল ব্যবহার হয়ে আসছে। চেরি ফল নাম শুনলেও এর উপকারিতা গুলো আমরা জানি না। চেরি ফল আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা প্রয়োজন এই আলোচনা থেকে আপনি বিস্তারিত জেনে যাবেন। দৈনন্দিন জীবনে এত ব্যস্ততা আমাদের যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সময় পাই না। অনেকাংশে আমাদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকতে হয়। চেরির মধ্যে এমন সব স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্যে করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- চেরি ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর মাত্রা কম। যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতারাং ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসন্দেহে চেরি ফল খেতে পারেন।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- চেরি ফল ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে। যখন দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখনই শরীরের নানান ধরণের রোগ বাসা বাধে। সুতারাং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য তালিকায় চেরি ফল রাখুন।

চেরির পুষ্টি গুণঃ- চেরি ফলে প্রোটিন, ফ্যাট, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফাইবার, শর্করা, কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। সুতারাং বুঝতেই পারছেন শরীর গঠনে এই উপাদান গুলো আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ- রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে গেলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। চেরি ফলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- চেরি ফলের পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে। সুতারাং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে খাদ্যতালিকায় চেরি ফল রাখুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরঃ- চেরি ফল ফাইবারের অন্যতম উৎস। বদহজমের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। চেরি ফলের পুষ্টি উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্যে করে।

শরীরের প্রদাহ দূরঃ- অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, শরীরে ব্যাথা-বেদনা আরম্ব হয়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে পেশির ব্যথা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, শরীরে ব্যথা হয়ে থাকে। চেরির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের প্রদাহ দূর করতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে।

ঘুমের উন্নতি হয়ঃ- শারীরিক, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে ঘুম কতটা প্রয়োজন তা আমাদের সকলেরই জানা। ভালো ঘুমের জন্য চেরি ফল উপকারি। কারণ, চেরি ফলে মেলাটোনিন উপাদান থাকে। যা ঘুমের উন্নতিতে বিশেষভাবে সাহায্যে করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ- চেরি ফলে ক্যালরির মাত্রা কম। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে।

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ- চেরি ফলের ভিটামিন, খনিজ উপাদান গুলো দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখে।

ইউরিক অ্যাসিড হ্রাসঃ- নিয়মিত চেরি খেলে ইউরিক এসিড হ্রাস পায়।

দ্রুত ক্ষত সরায়ঃ- শরীরের কোন অংশ কেটে ক্ষত হয়ে গেলে এই ক্ষত দ্রুত সরাতে চেরি ফল খান। কারণ, চেরি ফলের ভিটামিন সি উপাদান দ্রুত ক্ষত সরাতে সাহায্যে করে।

রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখেঃ- চেরি ফল দেহে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। এতে করে হার্টের নানান ধরণের অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি মেলে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ- চেরি ফলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্যে করে।

লিভার ভালো রাখেঃ- লিভারে যত প্রকার ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে তা দূর করে চেরি ফল।

গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ- গর্ভকালীন সময়ে কতটুকু চেরি ফল খাওয়া দরকার তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিবেন। অতিরিক্ত চেরি ফল খেলে কিছু শারীরিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিঃসন্দেহে চেরি ফল স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি। যা উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি। গর্ভকালীন সময়ে যেকোন খাবার খাওয়ার আগে একটু সতর্ক হতে হবে। যেহেতু একটি দেহের মধ্যে দিয়ে আরও একটি জীব বেড়ে ওঠে। সুতারাং নবজাতক শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য গর্ভবর্তী মা কে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার। যাতে করে ভ্রণ কোষের কোন ক্ষতি না হয়। গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খেলেঃ-

  • দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • হজম শক্তি বাড়ে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কোলেস্টেরল দূর হয়।
  • শরীরের প্রদাহ দূর।
  • ভ্রণের বিকাশ ঘটে।
  • নবজাতকের হাড় গঠন হয়।

চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা

চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতাঃ- সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমরা উপরের আলোচনায় চেরি ফলের উপকারিতা কি কি তা জেনেছি। যেকোন ফলের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি সামান্য পরিমাণে অপকারিতাও রয়েছে। চেরি ফলেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে যা আমাদের জানা প্রয়োজন। 

চেরি ফলে যেহেতু ফাইবারের পরিমাণ বেশি, অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের ফলে পেটে খিঁচুনি বা ফোলাভাব, অন্ত্রের গ্যাস হতে পারে। আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থাকে, অতিরিক্ত চেরি ফল খাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, গলা বন্ধ, আমবাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সুতারাং মনে রাখতে যেকোন জিনিসের উপকার তখনই পাওয়া যায় যখন আপনি তা পরিমিত পরিমাণে, সঠিক সময়ে খাবেন। অন্যথায় হিতের বিপরীত হতে পারে।

চেরি ফলের দাম | চেরি ফলের দাম বাংলাদেশ

চেরি ফলের দাম | চেরি ফলের দাম বাংলাদেশঃ- বাজারে ২ রঙের চেরি ফল পাওয়া যায় যথাঃ- লাল চেরি, সবুজ চেরি। লাল চেরির দাম সবুজ চেরির চেয়ে একটু বেশি। স্থানভেদে এই চেরি ফলের দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

  • ১ কেজি সবুজ চেরির দামঃ- ১,০০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত।
  • ১ কেজি লাল চেরির দামঃ- ১,২৫০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত।

চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম

চেরি ফল খাওয়ার নিয়মঃ- চেরি ফল খাওয়ার বিশেষ কোন নিয়ম নেই। চেরি ফল ধুয়ে নিয়ে সরাসরি আঙ্গুরের মতো আপনি খেতে পারেন অথবা আপনি ব্লেন্ডারে দিয়ে করে জুসের মতো করে খেতে পারেন। রেষ্টুরেন্টে কাশ্মিরি নান রুচি বানাতে চেরি ফল ব্যবহার করা হয়। কোন খাবারের গুণগত মান বাড়াতে অথবা খাবার লাল করে পরিবেশন করতে চেরি ফল ব্যবহার করা হয়। দিনের যেকোন সময় চেরি ফল খাওয়া যায়। সকালে, দুপুরে, রাতের খাবারের আগে অথবা পরে খেতে পারেন। এতে করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। সাধারণত ফল ভরা পেটে খাওয়াটাই ভালো হবে।

চেরি ফল চেনার উপায়

চেরি ফল চেনার উপায়ঃ- অনেকে চেরি এবং করমচা এই দুটোকে এক করে ফেলে। গুগলে সার্চ করে আপনার চেরি ফল চেনার উপায় জানতে চেয়েছেন। চেরি এবং করমচা এ দুটোর মধ্যে একটি সূক্ষ পার্থক্য রয়েছে।

চেরি ফলের সাইজঃ- ছোট হয়, দেখে মনে হতে পারে ছোট আপেল, ভিতরের অংশ নরম হয়।

করমচা ফলের সাইজঃ- লম্বা হয়, ভিতরের অংশ শক্ত হয়।

চেরি এবং করমচা গাছ দেখতে অনেকটা একই। এখন আমরা জানব চেরি এবং করমচা গাছের মধ্যে পার্থক্যঃ- 

  • চেরি ফলের গাছ চেনার উপায়ঃ- চেরি ফলের গাছে কোন কাঁটা থাকে না।
  • করমচা ফলের গাছ চেনার উপায়ঃ- করমচা ফলের গাছে কাঁটা থাকে।

চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয়

চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয়ঃ- চেরি ফলের বীজ না খাওয়াটাই ভালো। চেরি ফলের বীজ খেলে পেটে নানান ধরণের অসুখ দেখা দিতে পারে। সুতারাং চেরি ফলের বীজ না খেয়ে চেরি ফলের মাংসল অংশটুকু খান এতে উপকার মিলবে।

চেরি ফলের গাছ | চেরি ফল গাছের দাম

চেরি ফল গাছের দামঃ- চেরি ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু নার্সারীতে এখন চেরি ফলের গাছ পাওয়া যাচ্ছে। চেরি ফলের দাম যেমন বেশি তেমনি প্রতি পিচ চেরি ফল গাছের দামও বেশি। চেরি ফলের গাছের দাম কত হতে পারে ধারণা নিতে গুগলে সার্চ করি। প্রতি পিচ চেরি ফলের গাছের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট “ চেরি ফল ” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা | চেরি ফল খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা, চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা, চেরি ফলের দাম | চেরি ফলের দাম বাংলাদেশ, চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম, চেরি ফল চেনার উপায়, চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয়, চেরি ফলের গাছ | চেরি ফল গাছের দাম ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট আরো পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের ওয়েব সাইটে এই ধরণের স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি, আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url