বেলের ১৬টি উপকারিতা ও অপকারিতা - বেল খাওয়ার সঠিক সময়

প্রচন্ড গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। একটু স্বস্থি পেতে আমরা বিভিন্ন ধরণের শরবত খেয়ে থাকি। তার মধ্যে অন্যতম হলো বেলের শরবত। বেল খেতে পছন্দ করি না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। আপনি কি  বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন ? নিশ্চয়ই জানেন না। এই পোস্টে আমরা বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। অনেকে বেল খাওয়ার সঠিক সময় লিখে  গুগলে সার্চ করে সে বিষয়ে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে। সুতরাং বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময় জানতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বেলের ১৬টি উপকারিতা ও অপকারিতা - বেল খাওয়ার সঠিক সময়

বেলে রয়েছে হাজারো পুষ্টি গুনাগুন। বেল খেলে পেটের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। সুতরাং সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের বেল খাওয়া একান্তই জরুরি। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময় জেনে নেওয়া যাক। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

বেল খাওয়ার উপকারিতা | বেল উপকারিতা | বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা | বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা | পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

আমরা শুধু শরবত হিসেবে বেল খাই, কিন্তু এই বেল খেলে ছোট বড় নানান ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মেলে পুষ্টিবিদদের এমনটাই মত। বেলের মধ্যে রয়েছে বহু উপকারিতা এবং সামান্য কিছু অপকারী দিকও রয়েছে যেগুলো ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশে বেলের প্রচুর উৎপাদন হয়, এর দামও তুলনামূলক কম। পুষ্টির এক অনন্য উৎস বেল।

বেলের উপকারিতা

বেলের পুষ্টিগুণঃ- ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ফাইবার এর অন্যতম উৎস বেল ফল।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভূগছেন তাদের জন্য বেল ঔষধের মতো কাজ করবে। কেননা, বেলের মেথানল নামক উপাদান রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস রোধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরঃ- যাদের মল কষা বা মল পরিষ্কার হয় না তারা বেলের শরবত খান। এতে মল দ্রুত পরিষ্কার হবে, মল নরম হবে। সুতারাং যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভূগছেন তারা বেলের শাঁস বের করে চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে খান। এতে উপকার মিলবে।

ডায়রিয়া নিরাময়ঃ- ডায়রিয়া নিরাময়ে কাঁচা বেল খান। প্রথমে, কাঁচা বেল স্লাইস করে কেটে নিন এরপর তা রোদে শুকান। রোদে শুকানোর পর গুড়া করে ব্রাউন সুগার, গরম পানি মিশিয়ে খান। এভাবে কয়েকদিন খেলে ডায়রিয়া দূর হয়ে যাবে।

ত্বক ভালো রাখেঃ- ত্বকের স্বাস্থের জন্য বেল খুবই উপকারি। বেলে খেলে ত্বকের দাগছোপ, ব্রণ, ত্বকের বার্ধক্য, এককথায় ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।

আলসার দূরঃ- যারা দীর্ঘদিন ধরে আলসারের সমস্যা ভুগছেন, তারা ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি বেলের শরবত খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া বেল পাতার রস খেলে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

যক্ষা নিরাময়ঃ- বেলে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান। যা যক্ষা  নিরাময় করতে সাহায্য করে। ব্রাউন সুগার বা মধু + বেল শরবত করে খেলে যক্ষা থেকে মুক্তি মেলে। 

ব্যথা উপশমঃ- অনেক সময় আমাদের হাতে পায়ে ব্যথা, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়। বেল খেলে এ ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা বেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।

স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধঃ- স্কার্ভি এমন একটি রোগ যা দ্রুত দাঁত ক্ষয় করে। মূলত ভিটামিন সি এর অভাবে এই  রোগটি হয়ে থাকে। বেল ভিটামিন সি'র অন্যতম উৎস। যা খেলে স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসঃ- ক্যান্সার ভয়াবহ ও মারাত্মক ব্যাধি। বেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,  অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন নামক উপাদান ক্যান্সের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। তাই, নিজেকে সুস্থ রাখতে বেল খাদ্য তালিকায় রাখুন। 

শরীর স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতিঃ- বেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে, বার্ধক্য রোধ করে, যৌবন ধরে রাখে। 

ম্যালেরিয়া নিরাময়ঃ- কাঁচা বেলের গুড়া + মধু + তুলসীর রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময় হয়। 

এনার্জি বৃদ্ধিঃ- যখন শরীর ক্লান্ত হয়ে যাবে শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে বেলের শরবত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ- যারা ব্লাড প্রেসার জনিত সমস্যায় আক্রান্ত তারা বেলের শরবত খান। এতে ব্লাড প্রেসার সহজে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ- যাদের খাওয়ার হজম হয় না, খাবার খেলে বমি হয়ে যায় তাদের জন্য বেল খুবই উপকারী। বেল খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি হ্রাসঃ-  বেল প্রস্টোজেন হরমোন বৃদ্ধি করে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। 

বেলের অপকারিতা

কোন জিনিস যখন আপনি সঠিক পরিমাণে, নিয়মমাফিক না খেয়ে অতিরিক্ত খাবেন তখন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। বেল নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। বেল খেতে মিষ্টি, বেল মিষ্টি না হলে আবার খাওয়াও যায় না। এক টানা দীর্ঘদিন যাবত বা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বেল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যৌনশক্তি হ্রাস পায়, গ্যাস্ট্রিক, বদহজম সহ শরীরে নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই বেল থেকে উপকার পেতে হলে নিয়মমাফিক সঠিক সময়ে খেতে হবে। 

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতাঃ- খালি পেটে বেল খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় আপনারা তা জানতে চেয়েছেন। অনেকে বলে থাকেন ফল খালি পেটে খেতে নেই। কিন্তু বেল আপনি খালি পেটে অথবা ভরা পেটে খেতে পারেন এত কোন সমস্যা নেই। বরং, কোন কোন বিশেষজ্ঞদের মত বেল ভরা পেটের চেয়ে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এখন আমরা জানবো খালি পেটে বেল খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সেসব বিষয়ে।

প্রাকৃতিক শর্করার উৎসঃ- সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্লাড সেল এবং ব্রেন সেলকে সক্রিয় করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করার প্রয়োজন হয়। এই প্রাকৃতিক শর্করার অন্যতম উৎস বেল।  যা দেহে চিনির চাহিদা পূরণ করে, ব্লাড সেল এবং ব্রেন সেলকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। 

খারাপ কোলেস্টেরলের দূরঃ- ইহা ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস। সকালে খালি পেটে বেল খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের দূর হয়। এতে হার্ট ভালো থাকে। 

পুষ্টির চাহিদা পূরণঃ- সকালে খালি পেটে বেল খেলে ইহা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে, অসুখ-বিসুখের সম্ভাবনা হ্রাস করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়ঃ- সকালে খালি পেটে বেল খেলে ইহা হজম শক্তির বিকাশ ঘটায়। 

লিভারের যত্নঃ- বেল বিটা ক্যারোটিন, থিয়ামিন আর রাইবোফ্লেভিন এর অন্যতম উৎস। বেল খেলে লিভার, কিডনি সুস্থ থাকে।

রক্ত পরিষ্কার করেঃ- বেলের শরবত খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। যাদের রক্তের সমস্যা রয়েছে, তারা বেলের শরবত খান এতে উপকার মিলবে। 

গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতাঃ- বেলে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রয়োজন। গর্ভবতী নারীদের গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার। অনেকে প্রশ্ন করেন এইভাবে যে, গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া যাবে কিনা ? উত্তরঃ জ্বি, গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া যাবে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কেননা অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভাবস্থায় বেল খেলে যেসব উপকার পাওয়া যাবেঃ-

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে যা গর্ভকালীন সময়ে কমন একটি সমস্যা। 
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেসার উঠা-নামা করে।
  • ডায়রিয়া, আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
  • বেলের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান হাতে পায়ে ব্যথা, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা উপশম করবে। 
  • ইহা শরীরে এনার্জি বুস্ট করে আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখবে। 
  • হজম শক্তির উন্নতি ঘটাতে করে। 

বেল খাওয়ার সঠিক সময়

বেল খাওয়ার সঠিক সময়ঃ- বেল খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় সূচি নেই। আপনি দিনের যেকোনো সময় বেল খেতে পারেন। আপনি যখন শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে বেল খান। বেল আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে। বেলে রয়েছে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা যা উপরের প্যারায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা রোদে ক্লান্ত হয়ে বাহির থেকে বাসায় এসে অমনি শরবতে চুমুক দিই।

যত ধরনের শরবত আমরা খাই তার মধ্যে অন্যতম হলো বেলের শরবত। তাছাড়া বাসায় যখন মেহমান আসে আমরা বেলের শরবত দিয়ে আপ্যায়ন  করি। রমজান মাসে ইফতারির সময় আমরা বেলের শরবত খায়। এতে করে সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় বেল খাওয়ার কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই, দিনের যে কোন সময় বেল খাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না। কেননা, এতে করে স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম

পাকা বেল খাওয়ার নিয়মঃ- বেল খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনার রুচিতে যে ভাবে ভালো লাগে আপনি সেভাবে খেতে পারেন। বেলের খোসা ছাড়িয়ে ফেলে সরাসরি আপনি বেলের শাঁস খেতে পারেন। অথবা বেল শরবত করে আপনি খেতে পারেন। বেলের শরবত বিভিন্নভাবে তৈরি করা যেতে পারে। বেলের রস +চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার কেউ চাইলে বেলের রস + মধু মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা বেলের রস + মধু+ তুলসীর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এক কথায় যার রুচিতে যেভাবে ভালো লাগে সেইভাবে বেলের রস উপভোগ করুন।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক ‍বৃন্দ এই পোস্টে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ফল বেল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে গুগলে সার্চকৃত টপিকস বেল খাওয়ার উপকারিতা | বেল উপকারিতা | বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা | বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা | পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময়, পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাইটে এই ধরণের স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট আরো পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url