তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা - তরমুজের বীজের উপকারিতা
গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু যত গুলো ফল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তরমুজ। এই ফল ভিতরে লাল রঙের হয়, ছোট ছোট বীজ থাকে যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তরমুজে জলীয় অংশ বেশি, ইহা পানি শূন্যতা দূর করে। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারির সময় তরমুজ খেলে পানি শূন্যতা দূর হয়ে যায়, শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যায়। এই পোস্টে আমরা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, তরমুজের বীজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। সুতারাং আপনি যদি তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, তরমুজের বীজের উপকারিতা না জানেন তাহলে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
তরমুজ ফল বা জুস করে আপনি খেতে পারেন। তরমুজ ফলের বীজে রয়েছে স্বাস্থ্য গুণাগুণ। সুতারাং তরমুজ ফলের বীজ ফেলে না দিয়ে আপনি খেতে পারেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, তরমুজের বীজের উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
- তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা | তরমুজ এর উপকারিতা | তরমুজের অপকারিতা
- তরমুজের বীজের উপকারিতা
- তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম
- তরমুজ খেলে কি হয়
- তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
- খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে কি হয়
- তরমুজের বীজের দাম
- তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
- তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায়
- লেখকের মন্তব্য
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা | তরমুজ এর উপকারিতা | তরমুজের অপকারিতা
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতাঃ- সুস্বাদু পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি যে কোন বয়সের মানুষ খেতে পছন্দ করে। এই ফলটি দেখলে লোভ হয়, খেতে মনে চায়। এই ফলটি মধ্যেও যে স্বাস্থ্য গুণাগুণ রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না। তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি তা জানলে আপনি অবাক হবেন। তরমুজ ফল থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন এ, সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদান পাওয়া যায়। তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো নিম্নরুপঃ-
পানিশূন্যতা দূরঃ- তরমুজ গ্রীস্মকালীন ফল। সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমের কারণে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়। এতে দেহে পানির সংকট দেখা দেয়। আর তরমুজে পানির পরিমাণ বেশি। ১০০ গ্রাম তরমুজ থেকে ৯২ থেকে ৯৫ ভাগ পানি পাওয়া যায়। সুতারাং তরমুজ খেলে পানি শূন্যতা দূর হয়।
ত্বক সুস্থ রাখেঃ- তরমুজ থেকে ভিটামিন এ, বি, সি, লাইকোপেন নামক উপাদান পাওয়া যায়। যা ত্বকের সুস্থতার জন্য খুবই দরকার। এই উপাদান গুলো ত্বকের যে কোন ধরণের সংক্রমণ রোধ করে। ত্বকের বলি রেখা দূর করে, ত্বকের বার্ধক্যজনিত সমস্যা রোধ করে।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিঃ- তরমুজ একটি মৌসুমী ফল। যেকোন মৌসুমী ফলের মত তরমুজ ফলও স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি। ইহা শারীরিক দূর্বলতা দূর করে, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ- যাদের রক্তচাপ জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য তরমুজ ফল খুবই উপকারি। তরমুজ ফলের পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ- তরমুজের ক্যারোটিনয়েড নামক উপাদান রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য তরমুজ ফল ভীষণ উপকারি। ইহা চোখ ভালো রাখে, চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
কিডনি ভালো রাখেঃ- যারা কিডনি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত চিকিৎসকরা তাদের ডাবের পানি খাওয়ার পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর তরমুজে প্রচুর পানি থাকায় ইহা কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্যে করে।
শরীরের চর্বি হ্রাসঃ- তরমুজের অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান কোলেস্টেরল দূর করে এবং চর্বি কমাতে সাহায্যে করে। সুতারাং যাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি, তারা চর্বি কমানোর জন্য তরমুজ ফল খান। এতে উপকার মিলবে।
হাড় মজবুতঃ- তরমুজ ফলে ১০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা দেহে হাড় গঠন ও মজবুত করতে সাহায্যে করে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ তরমুজের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি উপাদান গুলো দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে। সুতারাং দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তরমুজ ফল খেতে পারেন।
জ্বর ও সর্দি দূরঃ- তরমুজের ভিটামিন সি উপাদান দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জ্বর ও সর্দি সংক্রান্ত রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসঃ- তরমুজের লাইকোপেন নামক উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্যে করে। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে তরমুজ খাদ্য তালিকায় রাখুন।
শরীর ব্যাথা দূরঃ- শরীরে প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে তরমুজ খুবই উপকারি। তাই পেশির ব্যথা, বাতের ব্যথা এ ধরণের সমস্যার জন্য তরমুজ খান। এতে উপকার মিলবে।
হার্ট ভালো রাখেঃ- তরমুজের পটাসিয়াম উপাদান হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি। তাই হার্টের যে কোন সমস্যা দূর করতে, কোলেস্টেরল কমাতে তরমুজ উপকারি।
হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ- যাদের হজম শক্তি দূর্বল, তারা হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য তরমুজ খান। এতে উপকার মিলবে।
তরমুজের অপকারিতাঃ-
তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি তা আমরা জেনেছি। যেকোন জিনিসের উপকারিতা তখন মিলে যখন তা পরিমিত পরিমাণে উপযুক্ত/সঠিক সময়ে খাবেন। যখন উপকার পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন তখন শারীরিক নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। তরমুজের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ঠিক সেরকম। তরমুজ খেতে সুস্বাদু, দামেও সহজলভ্য, মৌসুমী ফল ভেবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু শারীরিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-
হজমে সমস্যাঃ- অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া, হজমে গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। কারণ তরমুজে পানির পরিমাণ, ডায়েটরি ফাইবার, চিনির বিশেষ যোগ রয়েছে। তাই হজমের সমস্যা দূর করতে অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ডায়াবেটিসের রোগীরা সতর্ক হোনঃ- রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তরমুজ মিষ্টি, চিনির মাত্রা বেশি। রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া অথবা কমে যাওয়া নির্ভর করে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, গ্লাইসেমিক লোডের উপর।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০ এর বেশি হলে উচ্চ মাত্রা এবং ৫৫ এর কম হলে নিম্ন মাত্রা ধরা হয়। আর তরমুজে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭২। তার মানে তরমুজে শর্করার মাত্রা বেশি। আর ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য শর্করার মাত্রা বেশি হওয়া মানে বিপদজ্জনক। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা তরমুজ অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খান।
শরীরে অতিরিক্ত পানি জমাঃ- এমনিতেই তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ শতাংশ। আর অতিরিক্ত তরমুজ খেলে সেই পানির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। দেহে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায়। এতে করে নানান পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমনঃ- পা ফুলে যাওয়া, কিডনি দূর্বল হয়ে যাওয়া, ক্লান্ত বোধ করা ইত্যাদি।
যকৃত প্রদাহঃ- যারা অ্যালকোহল পান করেন তারা তরমুজ অল্প পরিমাণে খান অথবা এড়িয়ে চলুন। তরমুজের লাইকোপেন উপাদান এবং অ্যালকোহল বিক্রিয়া করে যকৃত প্রদাহ তৈরি করে।
হ্রদরোগঃ- তরমুজের পটাসিয়াম উপাদান হার্টের রোগীদের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, নাড়ির গতি কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। তাই তরমুজ পরিমিত পরিমাণে খান।
তরমুজের বীজের উপকারিতা
আমরা অনেকে তরমুজের বীজ খাই না ফেলে দিই। তরমুজের বীজে অবাক করার মতো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তরমুজের বীজ নিউট্রেশনের সুপার উৎস। তরমুজ খাওয়ার সময় অনেকে বীজ খেয়ে ফেলেন। এই বীজ শরীরের জন্য ভালো না খারাপ তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন থাকে। স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা তরমুজের বীজের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করেছেন। চলুন তা জেনে নেওয়া যাকঃ-
তরমুজের বীজের স্বাস্থ্যকর উপাদানঃ- উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, আর্গিনাইন অ্যামাইনো অ্যাসিড, গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন, ট্রিপ্টোফান প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি ৬, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফ্যাট, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ- তরমুজ বীজের অ্যামাইনো এসিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্যে করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা তরমুজের বীজ খান। এতে উপকার মিলবে। তাছাড়া ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্যে করে।
হার্ট ভালো রাখেঃ- তরমুজে বীজ থেকে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে হার্টের স্বাস্থ্যের ভালো রাখে। তরমুজ বীজের ম্যাগনেসিয়াম উপাদান হৃদগতির ছন্দ ধরে রাখে।
ব্লাড সুগারের সমস্যা হ্রাসঃ- তরমুজ বীজের আয়রন, জিংক, সোডিয়াম, কপার, ফসফরাস উপাদান গুলো ব্লাড সুগারের সমস্যা দূর করতে সাহায্যে করে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ- তরমুজ বীজের ম্যাগনেসিয়াম উপাদান ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে।
স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষণাবেক্ষণঃ- তরমুজের বীজে ভিটামিন বি উপাদান পাওয়া যায়। যা স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে সাহায্যে করে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ- তরমুজ বীজের জিংক উপাদান দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে।
হজম শক্তির উন্নতিঃ- তরমুজের বীজ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ পাওয়া যায়। যা দেহে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ- তরমুজের বীজ থেকে প্রচুর প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ- তরমুজের বীজ থেকে ক্যালসিয়াম উপাদান পাওয়া যায় যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্যে করে।
তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম
তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়মঃ- তরমুজের মতো তরমুজের বীজও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এখন ভাবছেন তরমুজ বীজ কিভাবে খায় ? জেনে নিন নিয়মঃ-
- তরমুজ খাওয়ার সময় সরাসরি তরমুজের বীজ খেয়ে নিতে পারেন। তরমুজের বীজ ভেজে অথবা রোদে শুকিয়ে খেতে পারেন।
- তরমুজ বীজের রোদে শুকানো দানা ওভেনে বেইক করে লবণ অথবা অন্যান্য উপাদান মিশেয়ে খেতে পারেন। তরমুজের বীজ গুড়া করে সালাদ বা অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- তরমুজ বীজের গুড়া দুধ, দই, সালাদ, আইসক্রিমের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- তরমুজ বীজ রান্না করেও খাওয়া যায়।
তরমুজ বীজ খাওয়ার পূর্বে একটু সতর্ক হনঃ-
- তরমুজের বীজ আঁশ, প্রোটিন, চর্বির ভালো উৎস। এই বীজ নিয়মিত খাওয়া যায়। তবে এতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকায় প্রতিদিন ৩০ গ্রামের বেশি বীজ খাওয়া উচিত হবে না।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এই বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- এই বীজে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় পাকস্থলীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে যেমনঃ- অনিয়মিত মল ত্যাগ। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটা ভালো হবে।
- তরমুজ কিডনির জন্য ভালো তবে তরমুজের বীজ কিডনির জন্য ভালো নয়। যাদের কিডনি জনিত সমস্যা রয়েছে তারা ইহা পরিহার করুন।
তরমুজ খেলে কি হয়
তরমুজ খেলে কি হয়ঃ- পানির শূন্যতা দূর হয়, হজমশক্তি বাড়ে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীরের ব্যাথা দূর হয়, ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়, চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্ট ভালো থাকে, শরীরের চর্বি হ্রাস পায়, কিডনি ভালো থাকে, হাড় মজবুত হয়, ওজন বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে না ইত্যাদি। তরমুজ খেলে এ ধরণের উপকার গুলো পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত তরমুজ খেলেঃ- ডায়রিয়া, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা, শরীরে পানি জমা, যকৃত প্রদাহ, হ্রদ রোগ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়েঃ- না, তরমুজ খেলে ওজন বাড়ে না। অনেকে মনে করে তরমুজ খেলে ওজন বেড়ে যায় যা ভূল ধারণা। কেননা, তরমুজে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এতে ওজন বাড়ার কোন আশংকা নেই। তরমুজে পানির পরিমাণ বেশি। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করে।
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়ঃ- তরমুজের পানির পরিমাণ বেশি। খালি পেটে তরমুজ খেলে খুব একটা ভালো হবে না, উল্টো শারীরিক নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই যেকোন খাবার থেকে উপকার পেতে চাইলে তা সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। তরমুজ থেকে উপকার পেতে হলে খালি পেটে না খেয়ে ভরা পেটে খান। এতে উপকার মিলবে। সকালের নাস্তা করার ঘন্টা খানিক পর থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার খাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তরমুজ খাওয়ার উপযুক্ত সময়।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে কি হয়ঃ- গর্ভাবস্থায় খাবারের প্রতি একটু বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার। নতুবা তার প্রভাব সরাসরি নবজাতকের উপর গিয়ে পড়বে। অনেকে গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে থাকেন। গর্ভাবস্থায় তরমুজ কতটুকু তা আপনারা জানতে চান। উত্তরঃ- গর্ভাবস্থায় তরমুজ সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি খাবার। এবং তরমুজের পুষ্টি গুণাগুণ গর্ভবর্তী মা ও নবজাতকের জন্য খুবই উপকারি। চলুন গর্ভাবস্থায় তরমুজের উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-
পানি ঘাটতি পূরণঃ- তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশ পানি। গর্ভাবস্থায় পানির ঘাটতি দেখা যায়। তাই এই সময় পানির ঘাটতি পূরণে তরমুজ পরিমিত পরিমাণে খান। এতে পানির ঘাটতি পূরন হবে। ডিহাইড্রেশন জনিত সমস্যা গুলোর সমাধান হবে। তরমুজ দেহে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা বজায় রাখে।
গর্ভাবস্থায় অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়ঃ- সাধারণত গর্ভাবস্থায় জ্বালা পোড়া, প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়। হাত-পা ফোলে যায়। এই সময় তরমুজ খেলে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
অ্যাসিডিটি দূরঃ- গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটি সমস্যা হয়। তরমুজের এমন কিছু বিশেষ যৌগ রয়েছে যা অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্যে করে। ইহা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্যে করে।
তরমুজের লাইকোপেন উপাদানঃ- তরমুজের লাইকোপেন উপাদান প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার এর কারণে উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তরমুজ খেলে এই ধরণের মারাত্নক ক্ষতি থেকে মুক্তি মেলে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়ঃ- তরমুজের ভিটামিন সি উপাদান রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোলাজেন গঠনে সাহায্যে করে। ভিটামিন বি৬ উপাদান শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটায়। ভিটামিন এ উপাদান চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
একটু সতর্ক থাকুনঃ- তরমুজে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা বেশি, ইহা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই গর্ভকালীন সময়ে কতটুকু তরমুজ খাওয়া নিরাপদ হবে তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
তরমুজের বীজের দাম
তরমুজের বীজের দামঃ- তরমুজের বীজের বিভিন্ন ভ্যারাইটি রয়েছে। একেক ভ্যারাইটির বীজের দাম একেক রকম। অঞ্চলভেদে সেই দামের মধ্যে তারতম্য হতে পারে। তরমুজ বীজের দাম কি রকম হতে পারে তার হালকা ধারণা দিচ্ছি। তবে একোরেট তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আপনি যখন তরমুজের বীজ কিনতে যাবেন বীজের দোকান থেকে জেনে নিতে পারবেন।
- তরমুজ বীজ ৫০০ গ্রাম ----৬৫০ টাকা।
- হাইব্রিড জাতের তরমুজ বীজ মহারাজা দাম-----৩৬০ টাকা।
- স্পেশাল হাইব্রিড তরমুজ রিজেন্ট -২ বীজ ১০০ গ্রাম-----৪৫০০ টাকা।
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়েঃ- ১০০ গ্রাম তরমুজে গ্লাইসেমিক ইনেডেক্স ৭২, যা উচ্চ মাত্রা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বলে ধরা হয়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা বেশি হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভয়াবহ। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি পরিমাণে নয় বরং অল্প পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন। তরমুজ খাওয়ার পর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার এডিয়ে চলুন। বরং তরমুজের সাথে বাদাম, বীজ, অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান খেলে উপকার পাওয়া যাবে। ডায়াবেটিসের রোগীরা সালাদের সাথে সামান্য তরমুজ মেশাতে পারেন। শুধু মাত্র তরমুজের স্বাদ নেওয়ার জন্য।
তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায়
তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায়ঃ- তরমুজ থেকে আপনি তরমুজের বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। অথবা আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি লোকাল নার্সারি বা বীজের দোকান থাকে তাহলে সেখান থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। নতুবা আপনি অনলাইন থেকে বীজ অর্ডার করতে পারেন। অবশ্যই বীজ ক্রয়ের পূর্বে যাচাই-বাচাই করে বীজ ক্রয় করবেন।
লেখকের মন্তব্য
তরমুজের যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর স্বাস্থ্য অপকারিতা রয়েছে। স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শারীরিক নানান পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক এই পোস্টে আমরা মৌসুমী ফল তরমুজ নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা গুগলে যেসকল তথ্য লিখে সার্চ করেন তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা | তরমুজ এর উপকারিতা | তরমুজের অপকারিতা, তরমুজের বীজের উপকারিতা, তরমুজ খেলে কি হয়, তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম, তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে, খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে কি হয়, তরমুজের বীজের দাম, তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে, তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই রকম স্বাস্থ্য রিলেটেড আরো তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি অবশ্যই নিয়মিত ভিজিট করবেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url