সফেদা ফলের ১৭টি উপকারিতা - সফেদা ফল কিভাবে খায় - সফেদা ফলের দাম

বাজারে হরহামেশা এই ফল পাওয়া যায়। কেননা, সফেদা বারোমাসি ফল। যারা এই ফল খেয়ে একবার স্বাদ পেয়েছে তারা এই ফলের সহজে লোভ ছাড়তে পারে না। আপনি কি জানেন এই লোভনীয় ফলের কত গুণ ? খেতে স্বাদ তাই অনেকে আমরা এই ফল খায়। এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনাকে অবাক করবে। এই পোস্ট থেকে আমরা জানব সফেদা ফলের উপকারিতা, সফেদা ফল কিভাবে খায়, সফেদা ফলের দাম সম্পর্কে। সুতারাং আপনি যদি সফেদা ফলের উপকারিতা, সফেদা ফল কিভাবে খায়, সফেদা ফলের দাম না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

সফেদা ফলের উপকারিতা - সফেদা ফল কিভাবে খায় - সফেদা ফলের দাম

এই ফল পাঁকলে খেতে মিষ্টি, দেখতে আকর্ষণীয়। সফেদাকে বলা হয় পুষ্টির আতুর ঘর। সফেদা ফল খেতে পারলে অনেক ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফসফরাস এর অন্যতম উৎস সফেদা ফল। চলুন তাহলে আর দেরি না করে সফেদা ফলের উপকারিতা, সফেদা ফল কিভাবে খায়, সফেদা ফলের দাম জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- সফেদা ফলের উপকারিতা

সফেদা ফলের উপকারিতা

সফেদা ফলের উপকারিতাঃ- সফেদা ফলের মধ্যে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা যা অনেকেই জানে না। আপেল, আঙ্গুর, কলা, কমলা সহ অন্যান্য ফল যেভাবে মানুষের ঘরে ঘরে পাওয়া যায় সফেদা ফল ঠিক সেরকম পাওয়া যায় না। এক কথায়, এই ফলটি আড়ালে থেকে গেছে। শরীর সুস্থ রাখতে এই ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ফল খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে এই ফল খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার। সফেদা ফল খেলে যেসকল উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নরুপঃ-

হাড় মজবুতঃ- সফেদার আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস উপাদান শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত করে।

গ্যাস্ট্রিক দূর করেঃ- সফেদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ পেটের বহু সমস্যা নিরাময় করে।

চোখ সুরক্ষা রাখেঃ- সফেদার ভিটামিন এ উপাদান চোখের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ইহা রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি দেয়।

সফেদার পুষ্টিগুণঃ- সফেদা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, তামা, লোহা, জিংক, ফসফরাস, আমিষ, ক্যালসিয়াম, শর্করা, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম এর অন্যতম উৎস।

মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখেঃ- ইহা মানসিক চাপ, অনিদ্রা, উদ্বেগ, স্নায়ু চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে। এই ফল দেহে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বজায় রাখে ফলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মস্তিষ্কের জন্য এই ফল খুবই উপকারি।

হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ- সফেদা ফল ফাইবারের সেরা উৎস। এই ফলে আঁশ থাকে। যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

পেটের সমস্যা দূরঃ- সফেদা ফল খেলে আন্ত্রিক প্রদাহ, পেট জ্বলা পোড়া নিরাময় হয়। এই ফল আধা পাকা অবস্থায় পানিতে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- সফেদার ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, ট্যানিন উপাদান শরীরের প্রদাহ দূর, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ- ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এই ফল খেতে পারেন। এই ফল খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে না। তাছাড়া ইহা স্থূলতাজনিত সমস্যার সমাধান করে।

গর্ভবর্তী নারীদের জন্যঃ- গর্ভাবস্থায় যাদের মাথা ঘোরে, বমি বমি ভাব হয় তারা সফেদা ফল খান। এতে উপকার মিলবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ- এই ফল শরীরে কোষের ক্ষয় রোধ করে। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

দাঁত ভালো রাখেঃ- এই ফলের পুষ্টি গুণাগুণ দাঁতের সুস্থতার জন্য আবশ্যক। ইহা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখে।

ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূরঃ- যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে তারা এই ফল খান। ইহা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে, ফুসফুস ভালো রাখে। হঠাৎ সর্দি, কাশি হলে প্রতিষেধক হিসেবে সফেদা ফল কাজ করে। বসে যাওয়া কফ, কাশি নিরাময় করে।

ত্বক সুস্থ রাখেঃ- ত্বকের সুস্থতার জন্য এই ফল খুবই উপকারি। ইহা ত্বকের দাগ-ছোপ, ব্রণ, বলিরেখা, ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

শরীরে এনার্জি যোগায়ঃ- সফেদা ফল থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ পাওয়া যায়। যা শরীরে এনার্জি যোগায়, কাজের গতি ফিরিয়ে আনে।

কিডনি ভালো রাখেঃ- সফেদার বীজ গুড়া করে খেতে পারলে তা  কিডনির জন্য খুবই ভালো হবে।

রক্তশূন্যতা দূরঃ- সফেদা ফল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, জিংক পাওয়া যায়। যা রক্তশূন্যতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সফেদা ফল খাওয়ার অপকারিতা

সফেদা ফল খাওয়ার অপকারিতাঃ- সফেদার তেমন কোন অপকারি দিক নেই। কোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া হলে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক সহ নানান ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পর্যায়ে খাওয়াটা ভালো। যারা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক রোগে আক্রান্ত তারা যেকোন ধরণের খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক বলে দিবে কোন খাবার কতটুকু খাওয়া দরকার। যেমনঃ যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের এই ফল অতিরিক্ত না খাওয়াটাই ভালো। কেননা, এই ফল পাঁকলে মিষ্টি হয়, অতিরিক্ত খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীরা এই ফল অতিরিক্ত না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাবেন।

গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতাঃ- সাধারণত গর্ভবর্তী নারীদের বেছে বেছে পুষ্টিকর খাবার, ফল-মূল খাওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। কেননা, গর্ভবর্তী নারী নিজেই যদি পুষ্টিহীনতায় ভূগে তাহলে সুস্থ নবজাতক জন্ম দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এজন্য নবজাতকের সুস্থতার জন্য গর্ভবর্তী নারীদের পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। যত গুলো পুষ্টিকর ফল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সফেদা। সফেদা গর্ভবর্তী নারীদের জন্য খুবই উপকারি। চলুন গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-

  • গর্ভাবস্থায় সফেদা খেলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, শারীরিক দূর্বলতা দূর হয়।
  • গর্ভাবস্থায় নবজাতকের শারীরিক বিকাশের জন্য এই ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • এই ফলের ভিটামিন সি উপাদান ইমিউনিটি শক্তি বাড়ায়।
  • গর্ভবর্তী নারীর রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  • এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি শরীরে ব্যথা-বেদনা দূর করে।
  • এই ফলের ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ উপাদান শারীরিক শক্তি ‍বৃদ্ধি করে।
  • ইহা গর্ভবর্তী নারীর মানসিক, ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে।

সফেদা ফল কিভাবে খায়

সফেদা ফল কিভাবে খায়ঃ- সফেদা ফল কাঁচা খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা, কাঁচা অবস্থায় ইহা প্রচন্ড টক হয়। সফেদা ফল পাঁকলে চামড়া ফেলে দিয়ে মাংসল, রসালো অংশ খেতে পারেন। যদি আপনি ফলের জুস খেতে চান তাহলে ব্লেন্ডারে জুসের মতো করে নিতে পারেন। সফেদা ফল পরিপক্ক হলে গাছ থেকে নামিয়ে ঘরে পাঁকাতে হবে। সফেদা ফলের ভিতরে ২-৫ টি বীজ পাওয়া যায়। পাকঁলে এই বীজ গুলো কালো রঙয়ের হয়ে যায়।

সফেদা ফল পাকার সময়

সফেদা ফল পাকার সময়ঃ- সফেদা গাছে সারা বছরই ছোট ছোট ফুল থাকে। বছরে ২ বার গাছ থেকে সফেদা ফল পাওয়া যায় ( ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারী, এপ্রিল-জুন )। সফেদা ফলের রং বাদামী, চামড়া খসখসে। সফেদা ফল পেঁকেছে কিনা গাছে থাকা কালীন বুঝার উপায় নেই। উদাহারণস্বরুপঃ- আম কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাঁকলে হলুদ হয়ে যায় অন্যদিকে সফেদা কালার বাদামী রঙয়ের, এটা যদি পেঁকে ভিতরে হলুদ হয়ে বুঝার উপায় নেই। এজন্য সফেদা ফল পরিপক্ক হওয়া মাত্রই গাছ থেকে নামিয়ে খড়, বস্তা দিয়ে ঢেকে ঘরেই পাঁকাতে হবে। সফেদা ফল ‍পাঁকলে ভিতরে থাকা এর বিচি কালো হয়ে যায়।

টিপসঃ- গাছে থাকাকালীন এই ফল পরিপক্ক/পাঁকলে কাঁঠবিড়ালী, বাদুর উপদ্রব বেশি হবে।

সফেদা ফলের দাম

সফেদা ফলের দামঃ- দেশের বাজারে সফেদা ফলের ভালোই কদর রয়েছে। আর এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সকলকে মুগ্ধ করেছে। প্রথম দেখাতেই মনে হতে পারে ছোট আলু। কাঁচা অবস্থায় এই ফল টক হয়, পাঁকলে এই ফল অত্যন্ত মিষ্টি হয়। অঞ্চলভেদে এই ফলের দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সম্ভাব্য ১ কেজি সফেদা ফলের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

সফেদা ফলের ছবি | সবেদা ফলের ছবি

সফেদা ফলের ছবিঃ- ইহা সুস্বাদু পুষ্টিকর একটি খাবার। যাদের কাছে সফেদা ফল নতুন বা অপরিচিত তাদের অনেকে গুগলে সফেদা ফলের ছবি, সবেদা ফলের ছবি লিখে সার্চ করে। সফেদা ফল দেখতে কেমন ছবিতে দেখুনঃ-

সফেদা ফল..১

সফেদা ফল..২

সফেদা ফল..৩

সফেদা ফল..৪

সফেদা ফল..৫

সফেদা ফল..৭

সফেদা ফল..৬

সফেদা ইংরেজি কি

সফেদা ইংরেজি কিঃ- সফেদা একটি মিষ্টি জাতীয় ফল। ইহা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। এর ইংরেজি নাম হলোঃ- Sapodilla, বৈজ্ঞানিক নাম হলোঃ- Manilkara zapota. ভারতীয় উপমহাদেশে এই ফলটির ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। তাছাড়া আজকাল ছাদবাগানে অনেকে শখ করে সফেদা গাছ লাগাচ্ছে। এই ফলের গাছ বহুবর্ষজীবী, চির সবুজ বৃক্ষ। এই গাছের আয়ুষ্কাল লম্বা। যেকোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই গাছ ঠিকে থাকতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে দেশীয় ফল সফেদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছেঃ- সফেদা ফলের উপকারিতা, সফেদা ফল খাওয়ার অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা, সফেদা ফল কিভাবে খায়, সফেদা ফল পাকার সময়, সফেদা ফলের দাম, সফেদা ফলের ছবি | সবেদা ফলের ছবি, সফেদা ইংরেজি কি এগুলো বিষয়ে। আশা করি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস আরো পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আজ এই পর্যন্ত, পরবর্তীতে হাজির হব অন্য কোন ব্লগ পোস্ট নিয়ে। সেই পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url