লটকনের উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা

লটকন ফল পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে একটি।  হলদে রঙের ছোট্ট গোলাকার আকৃতির এই ফলটি আমরা অনেকেই পছন্দ করি। এই ফলের স্বাদের ধরণ হচ্ছে টক মিষ্টি। সাধারত বর্ষা মৌসুমে এই ফলটি পাওয়া যায়। এর পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারি তেমনি রয়েছে এর ঔষধি গুণাগুণ। এই পোস্ট থেকে আমরা জানব লটকনের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। সুতারাং আপনি যদি লটকনের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

লটকনের উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা

লটকন ফলে এমন সব উপাদান রয়েছে যেগুলো কোলন ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগ নিরাময় করে। তাহলে এখন নিশ্চয় এই ফলকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। চলুন তাহলে লটকনের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- লটকনের উপকারিতা

লটকনের উপকারিতা

লটকনের উপকারিতাঃ- বাজারে লটকন ফল দেখলেও, লটকন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। টক মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট এই ফলটিতে রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা যা জানলে আপনি অবাক হবেন। এই ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। সুতারাং বুঝতেই পারছেন এই ফল অবহেলা করার সুযোগ নেই। যেহেতু এই ফলটি সারা বছর পাওয়া যাবে না, সুতারাং মৌসুমী ফল হিসেবে একে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। লটকনের উপকারিতা নিম্নরুপঃ-

শরীরকে হাইড্রেট রাখেঃ- বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। তখন শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। এমনঅবস্থায় শরীরকে হাইড্রেট রাখতে লটকন ফল খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। লটকনের জলীয় অংশে পানির পরিমাণ বেশি থাকে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ- আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ত্বকে নানান ধরণের সমস্যা দেখা যায়। যেমনঃ ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ত্বক ফেটে যাওয়া, বলিরেখা, চর্মরোগ, ব্রণ ইত্যাদি এ ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাদ্য তালিকায় লটকন রাখলে এর পুষ্টিগুণ ত্বকের এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

সংক্রমণজনিত রোগ-প্রতিরোধঃ- বর্ষার মৌসুমে ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর, কাশি এই ধরণের সংক্রমণ দেখা যায়। লটকন ফলের পুষ্টি গুণাগুণ এই ধরণের সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া লটকন ফলের ভিটামিন সি উপাদান দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ঘা তাড়াতাড়ি শুকায়, ত্বক-হাড়-দাঁত মজবুত ও সুস্থ রাখে। তাছাড়া লটকন ফলে বিদ্যমান ভিটামিন বি উপাদান বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিঃ- রক্তে আয়রনের মাত্রা কমে গেলে রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। এমনতাবস্থায় আপনি যদি রোজ ৩/৪ টি লটকন ফল খেতে পারেন তাহলে ইহা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করবে। রক্তশূণ্যতার সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ- অনেক সময় আমাদের প্রেসার হাই অথবা লো হয়ে যায়। দুটোই কিন্তু আমাদের জন্য বিপদজ্জনক। লটকন ফলের পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যে করে।

মুখের রুচি ‍বৃদ্ধিঃ- মুখের রুচি না থাকলে আমাদের খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না, টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। তাই যারা রুচির অভাবে খাবার খেতে পারছেন না, তারা লটকন ফল খাদ্য তালিকায় রাখুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা যায়। তাই ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়। তবে এই ফল অল্প পরিমাণে ( ২/৩ ) খাওয়াই ভালো।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ- এই ফলে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট না থাকায় ওজন বেড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। যেকোন বয়সের মানুষ এই ফল খেতে পারে। ইহা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

লটকন ফলের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ- ইহা মানসিক অবসাদ দূর করে, বমি বমি ভাব দূর করে। তাছাড়া লটকন ফলের অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম কোষের ক্ষয়পূরণ করে, কোষকলা সুস্থ রাখে। লটকনের পাতা বা শিকড় পেটের নানা রকমের অসুখ দূর করে। লটকনের বীজ গনোরিয়া  রোগ দূর করে। লটকন ফল কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এই ফল শারীরিক দূর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পায়ে ব্যথা, মুখে ও ঠোঠে ঘা, বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা নিরাময় করে।

গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কিঃ- জ্বি, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে, কোন সমস্যা হবে না। তবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত লটকন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ, এতে ক্ষুধামন্দা বেড়ে যেতে পারে। তাই দৈনিক ৩/৪ টি লটকন ফল আপনার যথেষ্ট হবে।

গর্ভাবস্থায় লটকন ফল খেলে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। নবজাতক ও গর্ভবর্তী মায়ের সুস্থতার জন্য যাবতীয় পুষ্টি উপাদান এই লটকন ফলের মধ্যে রয়েছে। যেহেতু একটি দেহের মধ্যে দিয়ে আরও একটি জীব বেড়ে উঠে সেক্ষেত্রে যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে তাহলে সেটির প্রভাব সরাসরি নবজাতকের উপর পড়বে। গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচের প্যারায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে সেটি পড়ে নিন।

গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা

একটা সময় ছিলো যখন মানুষ লটকন ফলের সাথে পরিচিত ছিলো না। যখন এর পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুণাগুণ, স্বাদ সম্পর্কে জানতে পেরেছে তখন এর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এখন মানুষ এই ফলকে প্রয়োজনীয় ফল মনে করছে। প্রয়োজনীয় ফল মনে করবে না কেন ? এর যে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। সুতারাং আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা জানব গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ-

আয়রনের ঘাটতি পূরণঃ- গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের আয়রনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। আয়রনের অভাবে দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং গর্ভের বাচ্চার ওজন কম হতে পারে, বাচ্চা প্রসবে জঠিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এমন অবস্থায় বিশেষ্জ্ঞরা আয়রনের ঘাটতি পূরণে লটকন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

ভ্রণের বিকাশ ঘটায়ঃ- লটকন ফলে ভিটামিন সি মাত্রা বেশি থাকায় মাতৃদেহে বেড়ে ওঠা শিশুর জন্য এই ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি ভ্রণের কোলাজেন, ত্বক, হাড়ের বিকাশ ঘটায় এবং ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ভ্রণকে রক্ষা করে।

প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগানঃ- সুস্থ নবজাতক প্রসবের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যা লটকন ফলের মধ্যে থেকে পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকন ফল থেকে আয়রনঃ- ৫.৩৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি ১ঃ- ১০.০৪ গ্রাম, ভিটামিন বি২ঃ- ০.২০ মিলি গ্রাম, কিলোক্যালরিঃ- ৯২ গ্রাম, প্রোটিনঃ- ১.৪২ গ্রাম, ফ্যাটঃ- ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন সিঃ- ১৭৮ মিলিগ্রাম, শর্করাঃ- ১৩৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়ামঃ- ১৭৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়ামঃ- ১৬৯ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। যা গর্ভবর্তী নারীর জন্য প্রয়োজন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- লটকনের ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। লটকন ফলের অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম কোষের ক্ষয়পূরণ করে, কোষকলা সুস্থ রাখে।

বমি বমি ভাব দূরঃ- গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাদের বমি বমি ভাব. মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। এমনতাবস্থায় লটকন ফল এই ধরণের সমস্যা নিরাময় করে।

পানির তৃষ্ঞা মিঠায়ঃ- গর্ভবর্তী মায়েদের দেহে আরও  একটি জীব ধীরে ধীরে বড় হয়। সেক্ষেত্রে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। আর এই পানির তৃষ্ঞা মিটাতে সাহায্যে করে লটকন ফল। কেননা, লটকন ফলের জলীয় অংশে পানির পরিমাণ বেশি থাকে।

মুখের রুচি বৃদ্ধিঃ- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মুখের রুচি হ্রাস পায় এমনতা বস্থায় মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে লটকন ফল খুবই উপকারি। লটকন ফলের টক মিষ্টি স্বাদ মুখের রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

সতর্কতাঃ- অতিরিক্ত লটকন খেলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় খুবই ভয়াবহ। তাই চিকিৎসকরা অতিরিক্ত লটকন ফলে না খেয়ে প্রতিদিন ৩/৪ টি লটকন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

লটকনের বিচি খেলে কি হয়

লটকনের বিচি খেলে কি হয়ঃ- লটকনের বিচি খেলে গনোরিয়া রোগ নিরাময় হয়। লটকন ফলের পাতা, শিকড়, বীজ উভয় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। লটকনের পাতা, শিকড় এগুলো খেলে পেটের নানান অসুখ, জ্বর নিরাময় হয়। লটকন পাতার গুড়া খেলে ডায়রিয়া রোগ নিরাময় হয়। 

তাছাড়া লটকন ফল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি তা লটকনের উপকারিতা এই প্যারায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। লটকন ফলের খুব একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যেকোন বয়সের মানুষ এই ফল খেতে পারে। তবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত খেতে নিষেধ করে। কেননা, অতিরিক্ত খেলে ক্ষুধামন্দা, কিডনির রোগীদের কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এই ফলে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি। 

উপসংহার

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি টপিকস লটকন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে লটকনের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা, লটকনের বিচি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টপিকস আরো পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url