ইন্টারনেট কি - ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার জেনে নিন
ইন্টারনেট শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। বস্তুত, ইন্টারনেট মানে কি তা জানতে আমরা গুগলে সন্ধান করি। International Network এর সংক্ষপ্তি রুপ হচ্ছে Internet. Internet কে সংক্ষেপে আমরা Net বলে থাকি। এই পোস্ট থেকে আমরা জানব ইন্টারনেট কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। পাশাপাশি আরও জানব ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার সম্পর্কে। সুতারাং এই পোস্টটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে ইন্টারনেট কি, ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক গুলো নেটওয়ার্কে একত্রে ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেটকে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বলেও সম্বোধন করা হয়। ইন্টারনেটের কল্যাণে আজ গোটা পৃথিবীর তথ্য আমাদের হাতের মুঠোয়। চলুন তাহলে আর দেরি না করে ইন্টারনেট কি - ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- ইন্টারনেট কি
- ইন্টারনেট কি
- ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার | ইন্টারনেট ব্যবহার
- ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি
- অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল
- ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয়
- দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার অষ্টম শ্রেণি
- লেখকের মন্তব্য
ইন্টারনেট কি
International Network বা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক কে সংক্ষেপে ইন্টারনেট বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেটওয়ার্কের সমন্বিত রুপকে ইন্টারনেট বলে। গোটা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সিস্টেম হলো ইন্টারনেট। এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম অনেক গুলো কম্পিউটার একসাথে যুক্ত থাকে যেখানে আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে ডেটা/তথ্য আদান-প্রদান করে। ইন্টারনেটের সাথে যেসকল কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে তাদের প্রধান কাজ হলো একে অন্যের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করা। আগে চিঠি আদান-প্রদান করা হতো তার বিকল্প হিসেবে এসেছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা।
আগে শুধু ফোনে কথা বলা যেত, এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সিং বা টেলি কনফারেন্সিং সাহায্যে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে। পৃথিবীতে বড় বড় যতগুলো কোম্পানি রয়েছে তারা ইন্টারনেটের কল্যাণে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিত বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে। ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যম গুলোর ব্যাপক পরিচিতির মূলে রয়েছে সময় এবং অর্থের সাশ্রয়। ইন্টারনেটের উপাদান ৪ টি যথাঃ- কম্পিউটার, তথ্য, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবহারকারী ইত্যাদি। ইন্টারনেটের পত্তন ঘটে ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরে Advanced Research Project Agency Network বা (ARPANET) প্রজেক্টের মাধ্যমে।
এর উদ্দেশ্য ছিলো মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরে অভ্যন্তরীণ যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ইহা আশির দশকে প্রথম ভাগে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সীমিতভাবে উন্মুক্ত ছিল। পরে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে Transmission Control Protocol (TCO) বা Internet Protocol (IP) উদ্ভাবন করা হয়। এরপর ইন্টারনেট ধারণাটি প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার | ইন্টারনেট ব্যবহার
ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার | ইন্টারনেট ব্যবহারঃ- দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে আজ ইন্টারনেটের প্রভাব বিদ্যমান। আগে অফলাইনের দুঃসাধ্য কাজ গুলো এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে অনলাইনে করা সম্ভব হচ্ছে। আগে বিদ্যুৎ বিল লাইনে দাড়িয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হতো, এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে আপনি যেকোন জায়গায় থেকে সহজে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছেন। ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অনেক কঠিন কাজ সহজ করে দিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু না থাকলে হয়ত আমরা কখনো তা বুঝতেই পারতাম না। আসুন দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার জেনে নেওয়া যাকঃ-
তথ্যে সেরা উৎস বা তথ্য ভান্ডারঃ- আগেকার সময়ে মুখে মুখে না বললে মানুষ সেই তথ্য পেত না, কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে গুগলে যেকোন তথ্য সার্চ দিলে তা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসছে। আপনি যে জিনিসটা বুঝতে পারছেন না সেই শব্দটা লিখে গুগলে সার্চ করলে ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য আপনি পেয়ে যাচ্ছেন।
অনলাইনে বই পড়াঃ- ধরুণ, আপনি এমন একটি বই খুঁজছেন, যেটা আপনার হাতের কাছে নেই। আপনি ইন্টারনেটে গিয়ে সেই বইয়ের নাম লিখে সার্চ করলে বইটি আপনি পেয়ে যাচ্ছেন। তারপর পিডিএফ ফাইল আকারে আপনি তা ডাউনলোড করতে পারছেন।
অনলাইনে ক্লাসঃ- যখন দেশে করোনা মহামারী চলছিল, তখন দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এমনতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রজেক্টেরের মাধ্যমে ক্লাসঃ- আগে শিক্ষকরা সরাসরি ক্লাস নিতো, ক্লাসে ব্ল্যাক-বোর্ডের মাধ্যমে পাঠদান করাতো। অনেক বিষয় শিক্ষার্থীদের বুঝেতে অসুবিধা হতো। এখন অনলাইনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে পাঠ্যবিষয় বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাচ্ছে।
অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রমঃ- যখন শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল না, তখন ভিড়ের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হতো। যা ছিল অস্বস্থিকর। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে ঘরে বসে আপনি ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন।
ভিডিও দেখে পাঠদানঃ- এখন অনেকে ফেসবুক, ইউটিউবে পড়াশোনার ভিডিও আপলোড করে। আপনি ইউটিউবে, ফেসবুকে অধ্যায়ের নাম লিখে সার্চ করলে তা আপনার সামনে চলে আসছে। আপনি সহজে পড়াশোনা শিখতে পারছেন।
ভিডিও কনফারেন্সিংঃ- আগেকার দিনে অনলাইনে ফেস টু ফেস যোগাযোগের বিষয়টি কল্পনা করা যেত না। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ফেস টু ফেস যোগযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সিং মাধ্যমে জরুরী মিটিং করা সম্ভব হচ্ছে।
ই-মেইল সেবা প্রদানঃ- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসের ( মোবাইল, কম্পিউটার ) সাহায্যে তথ্য-আদান প্রদান সম্ভব হচ্ছে সাথে ছবি, অডিও, ভিডিও, ডিজিটাল ফাইল প্রেরণ করতে সক্ষম হচ্ছি।
টেলি কনফারেন্সিংঃ- টেলিফোন সংযোগ ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সভায় অংশগ্রহণ করার পদ্ধতিকে টেলি কনফারেন্সিং বলা হয়। এই পদ্ধতিতে আপনি আপনার মতামত, রিপোর্ট, কার্যবিবরনী তুলে ধরতে পারছেন।
অনলাইনে কর্মসংস্থানঃ- এখন ইন্টারনেট কর্মসংস্থানের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে আপনি অনলাইনভিত্তিক কর্ম করতে পারছেন। যেমনঃ ব্লগিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে। সেখান থেকে আপনি ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারছেন।
টেলিমেডিসিন সেবাঃ- টেলিমেডিসিন এমন একধরণের সেবা যার মাধ্যমে আপনি দূববর্তী স্থানে বসে ডাক্তারি সেবা নিতে পারছেন। ধরুণ, আপনি যে গ্রামে থাকেন সেখানে ঐ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই সেক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে আপনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন, ওষুধের প্রেসক্রিপসন জেনে নিতে পারছেন।
বিনোদন সেবাঃ- আপনি ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছেন। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি সেগুলো উপভোগ করতে পারছেন।
ব্যাংকিং সেবাঃ- ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি সহজে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন। এর মাধ্যমে আপনি বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাসের বিল, টেলিফোনের বিল পরিশোধ করতে পারছেন। এছাড়া ব্যাংক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তার বৈদেশিক মুদ্রা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকে আনতে পারছে।
পন্য ক্রয়ঃ- ধরুণ, আপনি হেয়ার প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চাচ্ছেন কিন্তু সেটা আপনার নিকটবর্তী দোকানে নাই। তখন আপনি সেই হেয়ার প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারেন। এভাবে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে পন্য কেনা-কাটা করতে পারছেন।
ভ্রমণ সেবা প্রদানঃ- ইন্টারনেট ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। ধরুণ, আপনি দুবাই ভ্রমণ করবেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভ্রমণ সম্পর্কি যা যা তথ্য প্রয়োজন তা ওয়েবসাইট থেকে আপনি সংগ্রহ করে নিতে পারছেন।
যোগাযোগের মাধ্যমঃ- ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ এগুলো ইন্টারনেটের সাহায্যে চলে।
অন্যান্য ব্যবহারঃ- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধর্মীয় যেকোন বিষয় জেনে নিতে পারছেন, ব্যবসা-বানিজ্য সম্পাদন করতে পারছেন, সরকারি যাবতীয় কার্যাবলী আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারছেন।
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কিঃ- ইন্টারনেটের পূর্ণরুপ হলো Inter Connected Network. যোগাযোগের সেরা মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের প্রভাব আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গিয়ে পড়েছে যেন মনে হয় ইন্টারনেট ছাড়া চলায় যায় না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিমিষেই এক প্রান্তের ডাটা অন্য প্রান্তে ট্রান্সফার করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেটওয়ার্কের সমষ্টিকে ইন্টারনেট বলা হয়। ইহা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
আগে এক প্রান্তের ডেটা বা তথ্য অন্য প্রান্তে পৌছে দেওয়া দুঃসাধ্য ছিল, কিন্তু আজ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ফেস টু ফেস একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হচ্ছি। ইন্টারনেট এমন একটি বিপ্লব যা আমাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যবসা, বানিজ্য, চিকিৎসা, বিনোদন, তথ্য প্রচার-প্রসার, অর্থনীতি সবই আজ ইন্টারনেটের আওতাধীন। ইন্টারনেটের প্রসার এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী দিনগুলোতে প্রতিটি সেক্টর অনলাইনের আওতাভুক্ত হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল
আধুনিক বিশ্ব ইন্টারনেটের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। মুঠোফোন ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করা যায় না। আর যদি ইন্টারনেট না থাকে অস্বস্থি যেন আরো বেড়ে যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এখন ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেব বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে যুবক শ্রেণীর মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। এমনিতে মনে হয় সময় যেন কাটে না, অথচ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করলে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় বুঝাই যায় না। আমরা ফোনের প্রতি এতটাই আসক্তি যে মোবাইলে নটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও দেখা আরম্ভ করে দিই।
ফেসবুক, ইউটিউব ভিডিও তে যে টাইটেল ব্যবহার করা হয় তা আমাদের আকৃষ্ট করে। ইন্টারনেটের ভালো মন্দ উভয় দিক রয়েছে। কোন দেশে একদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখলে বিজনেস সেক্টরে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা লস হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত মাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহার করলে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় হয়। নিম্নে অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল নিম্নরুপঃ-
স্বাস্থ্যের ক্ষতিঃ- অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। শারীরিক সুস্থতার জন্য শরীর চর্চা আবশ্যক। ইন্টারনেট ব্যবহার করলে শরীর চর্চার কোন সুযোগ নেই। এতে ওজন বেড়ে যায়, কার্ডিওভাসকুলার (হার্ট এবং রক্ত সম্পর্কিত) স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্রেইন ক্লান্ত হয়ে যায়। এতে মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
সামাজিক বিছিন্নতাঃ- মানুষ সামাজিক জীব। মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠার পরিবর্তে ইন্টারনেটের এ যুগে মানুষ আর মুঠোফোনের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্পর্কে গড়ে উঠেছে। এতে একে অপরের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার প্রবণতা কমে এসেছে। মানুষের মাঝে দূরত্ব বাড়ছে। মানুষ পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
পড়াশোনার ক্ষতিঃ- ইন্টারনেটের সাহায্যে অনলাইন গেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখা, চ্যাটিং করা, অনলাইনের ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়ার প্রবনতা যেভাবে বেড়েছে আমাদের পড়াশোনার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা যখন পড়াশোনা করতে বসে টেবিলে তখনো স্মার্টফোন আমাদের হাতে থাকে। পড়াশোনার ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করে ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা কাটিয়ে দিই। এভাবে আমাদের পড়াশোনার মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে এখন যেকোনো প্রশ্নের উত্তর সহজে পাওয়া যায় এত করে চিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। আমাদের ক্রিটিভিটির সক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।
সময় অপচয়ঃ- মানব জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ হলো সময়। যে কোন জিনিস জীবন থেকে একবার হারিয়ে গেলে তা পুনরায় ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু জীবন থেকে সময় একবার চলে গেলে তার লক্ষ কোটি টাকার বিনিময়েও ফেরত আসবে না। এক কথায় সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, সময় চলে আপন গতিতে। আপনি যদি জীবনের সফল হতে চান আপনাকে সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে হবে।
অনলাইনে আমরা যেভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিই, সে সময়টা আমরা যদি পড়াশোনা অথবা অর্থ উপার্জনের পিছনে ব্যয় করতাম তাহলে আমরা জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হতাম। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে মানুষ বাস, রেল স্টেশনে বই পড়তে দেখা যায়, কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে বাস রেলস্টেশন অথবা যেখানেই যান মানুষ স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত। এজন্য আমাদের অনলাইন শুধু কাজের জন্য ব্যবহার করতে হবে, বিনোদনের জন্য নয়। যদি আমরা বিনোদনের জন্য অনলাইন ব্যবহার করি তাহলে জীবন থেকে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাবে।
কাজের ক্ষতিঃ- আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হোন অথবা কর্পোরেট জব করেন, আপনার মধ্যে যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা বেশি থাকে তাহলে আপনার জব যেকোনো সময় চলে যেতে পারি। কেননা, আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাস থাকলে, আপনি কাজে মনযোগ দিতে পারবেন না। এতে করে আপনার কাজ ঠিকঠাক কমপ্লিট হবে না, আপনি সময় মত কাজ জমা দিতে পারবেন না এতে করে কাজের ক্ষতি হবে, যেকোনো সময় আপনার জব চলে হয়ে যেতে পারে।
ঘুমের ক্ষতিঃ- সুস্থ থাকতে দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। আমরা যখন ফোন স্ক্রল করি, তখন ফোনের লাইট আমাদের চোখে গিয়ে পড়ে। এত চোখের উপর বেশি চাপ পড়ে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যখন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তখন স্বাস্থ্য হানির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ভূয়া তথ্য প্রচারঃ- মানুষ ইন্টারনেটে যে তথ্য পায় তা সত্য বলে মনে করে। আর ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করার সুযোগও কম। এতে ভুয়া তথ্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা, দাঙ্গা হাঙ্গামা, ব্যক্তিগত হয়রানি মত মারাত্মক সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি থাকে।
গোপনীয়তা নষ্টঃ- আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার ফলে সাইবার ক্রাইমের শিকার আপনি হতে পারেন।
ভাইরাসের আক্রমণঃ- ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে স্প্যামিং, মেলওয়্যার সংক্রমণ, হ্যাকিং এর মতো জটিল সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে।
পর্ণগ্রাফির আসক্তিঃ- যুব সমাজের মধ্যে পর্ণগ্রাফির আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে। পর্ণগ্রাফি এটাকে আরও সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। তাছাড়া অশ্লীল ভিডিও - গান-বাজনা - বিনোদন - চ্যাটিং এর প্রবণতা বাড়ছেই। তাছাড়া সামাজিক অবক্ষয়, নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় এগুলো ত বাড়ছেই।
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয়
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয়ঃ- ইন্টারনেট ব্যবহার করতে যেসকল জিনিস আবশ্যক তা আমাদের জানতে হবে।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজনঃ- ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী যন্ত্র ( মোবাইল, কম্পিউটার )।
- ইন্টারনেটে কোন বিষয় খুঁজে পেতে প্রয়োজনঃ- দক্ষ সার্চ ইঞ্জিনের ( গুগল ক্রোম সব থেকে সেরা এবং জনপ্রিয় )।
- ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনঃ- সার্চ ইঞ্জিন।
- ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আবশ্যকঃ- আইএসপি (ISP) বা Internet Service Provider.
দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার অষ্টম শ্রেণি
দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার অষ্টম শ্রেণিঃ- আমরা ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার | ইন্টারনেট ব্যবহার এই প্যারাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ ও উন্নত করেছে। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটা ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার ও পরিধি দিন দিন বাড়ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রভাবঃ-
কারো হাতের কাছে যদি বই না থাকে ইন্টারনেটে ই-বুক আকারে প্রকাশিত পড়াগুলো ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়তে পারছেন। তাছাড়া কোন পড়া বুঝতে না পারলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে সেই পড়া বিস্তারিত জেনে নিতে পারছেন। ধরুণ, আপনার হাতে সময় কম বা প্রাইভেটে যাওয়ার সুযোগ আপনার হচ্ছে না এমনতাবস্থায় ইন্টারনেট থেকে চমকপ্রদ কোর্সগুলো বিনামূল্যে অথবা ক্রয় করে পেয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য আপনি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন।
আগেকার দিনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় ছিলো কিন্তু এখন আপনি অনলাইনের সাহায্যে ভর্তি কার্যক্রম সেরে ফেলতে পারছেন। আগেকার দিনে পরীক্ষার ফলাফল পেতে অতিরিক্ত সময় লেগে যেত কিন্তু এখন রোল নাম্বার, রেজিস্টেশন নাম্বার দিয়ে ইন্টারনেটের কল্যাণে স্মার্টফোনের মাধ্যমে রেজাল্ট জেনে নিতে পারছেন। জগৎ বিখ্যাত লেখকদের বই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়া সম্ভব হচ্ছে।
দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের প্রভাবঃ-
- আগে সকাল বেলা খবরের কাগজ পড়া আমাদের অভ্যাস ছিল, এখন ইন্টারনেট সংযুক্ত হওয়ায় আপনি অনলাইনে খবরাখবর পড়ে নিতে পারছেন।
- আগে আমরা যেকোন তথ্য জানতে রেডিও, টেলিভিশন এর উপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে সেই তথ্য আমরা মোবাইলে পেয়ে যাচ্ছি।
- পূর্বে অচেনা জায়গা যেতে মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হত, এখন জিপিএসের মাধ্যমে সহজে অচেনা জায়গায় আমরা পৌছে যেতে পারছি।
- পূর্বে আমরা শুধু মোবাইলে বন্ধু, বান্ধব, আত্নীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতাম, এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে ফেস টু ফেস ভিডিও কলে কথা বলতে পারছি। তাছাড়া অফিসের দূর-দূরাত্নের মিটিং গুলো আমরা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারছি।
- এখন আমরা চিঠির পরিবর্তে ইমেইল আদান প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি।
- ইন্টারনেটের কল্যাণে বিনোদন সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি সংস্কৃতি, সিনেমা, গান, খেলাধুলা উপভোগ করতে পারছি।
- তাছাড়া জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভিডিও, অডিও, ছবি আদান-প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছি।
- ইন্টারনেটকে তথ্যের ভান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে। এর মাধ্যমে যেকোন অজানা তথ্য সার্চ দিয়ে বের করতে পারছেন। অনেক গুলো সার্চ ইন্জিন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো গুগল.কম যা বিশ্বব্যাপী সু-পরিচিত। বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি বিদরা একটি সার্চ ইন্জিন তৈরি করেছে যার নাম হলো www.pipilika.com. গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য www.wolframalpha.com এই সাইটটি অনেক জনপ্রিয়।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছি।
- অনলাইনে পন্য কেনা-কাটা ক্রয় করতে পারছি।
- এক দেশ অন্য দেশে ভ্রমণ করতে নিদিৃষ্ট ওয়েবসাইট থেকে ভ্রমন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছি।
- টেলিমেডিসিন এর সাহায্যে সহজে আমরা ঘরে বসে ডাক্তারি সেবা নিতে পারছি। ইন্টারনেটের সাহায্যে বিদেশি ডাক্তারদের এপোয়েন্টমেন্ট নিতে পারছি।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। আপনি ইন্টারনেটকে ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে এর সুফল ভোগ করবেন আর মন্দ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে এর কুফলও আপনি ভোগ করবেন। সুতারাং ইন্টারনেট ব্যবহার যেন হয় কল্যাণের উদ্দেশ্যে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্টে ইন্টারনেট কি, ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার | ইন্টারনেট ব্যবহার, ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি, অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয়, দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার অষ্টম শ্রেণি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে। এইরকম টেকজাতীয় ব্লগ আমাদের সাইটে নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। এইরকম টেক ব্লগ আরো পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url