আতা ফলের ১৫টি উপকারিতা - শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য জেনে নিন

অতিপরিচিত একটি ফল আতা বা শরিফা। আতা ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকেরই অজানা। শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য জানতে আমরা সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করি। এই ফল বাড়ির আঙিনায় বেড়ে উঠতে দেখা যায়। যদিও বানিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ দেশে করা হয় না। বর্তমানে এই ফল বিলুপ্তির পথে। এই পোস্টে আতা ফলের উপকারিতা - শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হবে। সুতারাং আপনি যদি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আতা ফলের উপকারিতা - শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আতা ফলের ১৫টি উপকারিতা - শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য জেনে নিন

অন্যান্য ফলের মতো আতা ফলও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি। এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো আপনাকে অবাক করবে। সুতারাং আতা ফলের উপকারিতা গুলো আমাদের জানা দরকার। পাশাপাশি আলোচনা করা হবে শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য নিয়ে। চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- আতা ফলের উপকারিতা

আতা ফলের উপকারিতা | নোনা ফল | আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা | আতা ফলের অপকারিতা | নোনা ফলের উপকারিতা | শরিফা ফলের উপকারিতা

আতা ফলের উপকারিতাঃ- অত্যন্ত পুষ্টিকর, খেতে সুস্বাদু একটি ফল আতা। দেশীয় ফল হিসেবে এই ফলটির প্রতি আমাদের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। আকর্ষণ থাকবেই না কেন ? এই ফলের পুষ্টি গুণাগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা আমাদের অবাক করেছে। যেহেতু এই ফলটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি, তাই শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে আমাদের উচিত এই ফলটি খাদ্য তালিকায় রাখা। আতা ফলের উপকারিতা গুলো নিম্নরুপঃ-

রোগ-প্রতিরোধঃ- আতা ফলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি উপাদান পাওয়া যায়। যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

দেহে হাড় গঠন ও মজবুতঃ- আতা ফল থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা দেহের হাড় গঠন ও মজবুত করতে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা দূরঃ-  কপার, ফোলেট, আয়রনের ভালো উৎস আতা। যা দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্যে করে।

হজমশক্তির উন্নতিঃ- আতা ফলের ফাইবার, ফসফরাস উপাদান হজমশক্তি উন্নতি ঘটায় এবং পেটের সমস্যা দূর করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতিঃ- আমরা অনেকেই চোখের সমস্যায় জর্জরিত। আতা ফলের ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন উপাদান চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়। সুতারাং যারা চোখের সমস্যায় ভূগছেন তারা আতা খান  এতে উপকার মিলবে।

ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিতঃ- ত্বকে দাগছোপ, বলিরেখা, ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যা এরকম হাজারো সমস্যা আমাদের হয়ে থাকে। এমনতাবস্থায় ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে আতা ফল। আতা ফলের ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তাছাড়া আতা ফলের ভিটামিন এ উপাদান চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য জন্য খুবই উপকারি।

মাংসপেশির জড়তা দূরঃ- আতা ফলের ম্যাগনেসিয়াম উপাদান মাংসপেশির দূর্বলতা, মাংসপেশির জড়তা দূর করতে সাহায্যে করে।

স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসঃ- আতা ফলের ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসঃ- আতা ফলের ভিটামিন সি উপাদান ফ্রি-র‌্যাডিকেলস ধ্বংস করে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্যে করে।

মানসিক সুস্থতা প্রদানঃ- স্ট্রেসের কারণে আমাদের জীবনে হতাশা, বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সের সেরা উৎস আতা ফল। আতা ফলের ভিটামিন বি৬ উপাদান নিউরো ট্রান্সমিটারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মানসিক চাপ রোধ করে, মানসিকভাবে সুস্থ-প্রাণবন্ত রাখে।

প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ- আতা ফলের খনিজ উপাদান গুলো প্রেসারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ- আতা ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম, ইহা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

কোলেস্টেরল দূরঃ- কোলেস্টেরল শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কোলেস্টেরল এর কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আতা ফলের নিয়াসিন ভিটামিন কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্যে করে।

হাঁপানি অসুখ রোধঃ- আতা ফলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য অ্যাজমা বা হাঁপানি সমস্যা দূর করে। সুতারাং যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে তারা আতা ফল খেলে উপকার পাবেন।

গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাসঃ- আতা ফলে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস করে। বুকের দুধ বৃদ্ধি করে। শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক অবসাদ হ্রাস করে।

গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ- গর্ভাবস্থায় খাবার নিয়ে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। গর্ভকালীন সময়ে খাবার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আপনি মা আপনি যদি খাবারের প্রতি অবহেলা করেন বা অমনোযোগী হন তাহলে আপনার নবজাতক শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যা ভুগবে। তাই গর্ভাবস্থায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গুলো খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় আতা ফল দুর্দান্ত উপকারে আসবে। আতা ফলের উপকারিতা গুলো গর্ভকালীন সময়ে কাজে দিবে। গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নরুপঃ-

  • শারীরিক দুর্বলতা দূর করবে, শরীরে ব্যাথা-বেদনা দূর করবে, গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস করবে, বুকে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
  • রক্তচাপজনিত সমস্যা দূর করবে। কেননা, আতা পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস।
  • আতা ফল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তস্বল্পতাজনিত সমস্যা দূর করবে।
  • গর্ভকালীন সময়ে যদি কোন কারণে হজমে বিক্রিয়া ঘটে তাহলে আতা খান। কারণ, ইহা ফাইবারের ভালো উৎস।
  • আতা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস যা মা ও শিশুর রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • আতার পুষ্টিগুণাগুণ শারীরিক অবসাদ, মানসিক জটিলতা, ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।

আতা ফল in english | আতা ফল ইংরেজি নাম

আতা ফল in english | আতা ফল ইংরেজি নামঃ- অনেকে গুগলে সার্চ করে আতা ফলের ইংরেজি নাম জানতে চায়। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে আতা ফলের যেমন একাধিক নাম রয়েছে অনুরুপভাবে ইংরেজিতে আতা ফলেরও একাধিক নাম রয়েছে। আতা ফলের ইংরেজি একাধিক নামগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। আতা ফলের ইংরেজি নামগুলো হলোঃ- Custard-apple, Sugar-apple, sugar-pineapple or sweetsop etc.

আতা ফলের ছবি | শরিফা ফলের ছবি

আতা ফলের ছবি | শরিফা ফলের ছবিঃ- অনেকে মনে করে আতা ফল এবং শরিফা ফল এই দুটি আলাদা, কিন্তু এটা ভূল ধারণা। দুটিই একই প্রজাতির ফল। কারো কাছে এটা আতা ফল নামে পরিচিত, কারো কাছে শরিফা ফল নামে পরিচিত, কারো কাছে নোনা ফল নামে পরিচিত। ফল একটিই কিন্তু অঞ্চলভেদে ফলের নামকরণ আলাদা করা হয়েছে। ফলের ছবি দেখলেই আপনার ধারণা গুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে।









আগে আপনি যেমন শরিফা ফল, আতা ফলকে আলাদা মনে করতেন, এখন ছবি দেখে নিশ্চয় আপনার ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়েছে। আশা করি আজ থেকে আপনি শরিফা ফল, আতা ফলকে একই প্রজাতির ফল মনে করবেন।

আতা ফলের পাতার উপকারিতা

আতা ফলের পাতার উপকারিতাঃ- আতা ফল যেমন স্বাস্থ্যে জন্য উপকারি ঠিক তেমনি আতা গাছের শেকড়, আতা ফলের পাতার মধ্যে রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ। যা আমরা অনেকেই জানি না। ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে, আপনি আতা ফলের ঔষধি গুণাগুণ  গুলো উপভোগ করতে পারেন। আতা ফলের পাতার উপকারিতা গুলো নিম্নরুপঃ-

আতা ফলের পাতাঃ- এই ফলের পাতার রস মাথার উকুন নিরাময়ে কাজ করে। আমাদের অনেকের ফোড়া বের হয়, যে পোড়া পাঁকে না আবার বসে না এমন সমস্যা দূর করতে আতা ফলের পাতা রস ও লবণ মিশিয়ে ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে ফোড়া থেকে পুঁজ বের হয়ে ফোড়া ভালো হয়ে যায়। পাতার নির্যাস কোষে থাকা বিষাক্ত টক্সিন দূর করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরাধ করে।

আতা গাছের শেকড়ঃ- এই ফল গাছের শেকড়ের রস খেলে আমাশয় জনিত সমস্যা দূর হয়। ইহা আমাশয়ের ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।

আতা ফলের চামড়াঃ- দাঁত পরিষ্কার করে, দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, মাড়িকে মজবুত করে।

আতা ফলের শাঁসঃ- আতা ফলের শাঁস খেলে রক্তের শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীরে জ্বালা-পোড়া অনুভব করলে আতা ফলের শাঁসের রস খেলে শরীরের জ্বালা-পোড়া দূর হয়ে যাবে।

আতা ফলের রসঃ- আতা ফলের রস ও দুধ মিশিয়ে খেলে অপুষ্টিজনিত সমস্যা বা দূর্বলতা দূর হয়।

শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য

শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্যঃ- বস্তুত, এই ফলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অঞ্চলভেদে নামের পার্থক্য রয়েছে। কেউ একে শরিফা ফল বলে, কেউ একে আতা ফল বলে, কেউ একে নোনা ফল বলে থাকে। অনেকে যে জায়গা থেকে পার্থক্য খোজার চেষ্টা করে তারা বলে, এই প্রজাতির ২ ধরণের ফল পাওয়া যায়। তাদের মতে,

আতা ফল বা নোনা ফল বৈশিষ্ট্যঃ- এর চামড়া মসৃণ, স্বাদ নোনতা তাই এর নামকরণ করা হয়েছে আতা বা নোনা ফল বলে।

শরিফা ফল বৈশিষ্ট্যঃ- এই ফলের চামড়ায় গুটি গুটি চোখ থাকে অন্যদিকে আতা ফলের চামড়া মসৃণ এতটুকু পার্থক্য তারা খুজে বের করেছে। ফলে নামকরণ করা হয়েছে শরিফা ফল। কিন্তু ফলের স্বাদ নোনতা।

আতা ও শরিফা ফলের ভিতরে ছোট ছোট কোষ থাকে, কোষের ভিতরে বীজ থাকে। ফল কাঁচা অবস্থায় বীজ সাদা, ফল পাকলে বীজ কালো হয়। বীজের চারপাশে যে নরম, রসালো অংশ থাকে সেটি আমরা খায়।

এই ফলের বীজ থেকে গাছ হয়। গাছের উচ্চতা ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত। কোন প্রকার যত্ন ছাড়াই বাড়ির আঙিনায় বেড়ে উঠে। বেলে-দোআঁশ মাটিতে এই গাছ ভালো হয়। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়, বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়, ফুল ধরে। এর পাতা গুলো বল্লমের মতো, অগ্রভাগ সরু এবং ফুল কাঠালী চাপার মতো।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এই পোস্টে অতি পরিচিত একটি ফল আতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আতা ফলের উপকারিতা | নোনা ফল | আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা | আতা ফলের অপকারিতা | নোনা ফলের উপকারিতা | শরিফা ফলের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা, আতা ফল in english | আতা ফল ইংরেজি নাম, আতা ফলের ছবি | শরিফা ফলের ছবি, আতা ফলের পাতার উপকারিতা, শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এইরকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। পাঠকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের সাইটে প্রতিদিনই ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করা হয়। নিত্য-নতুন তথ্য সেখানে তুলে ধরা হয়। আজ এই পর্যন্ত, আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url