বাজেট কাকে বলে - সম্পূরক বাজেট কি বিস্তারিত জেনে নিন

বাজেট শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। একটি দেশের উৎপাদন, উন্নয়ন, নির্মাণ কাজের জন্য বাজেট প্রনয়ন করা হয়। সহজ ভাষায়, আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশের বিবরণীকে বাজেট বলে। এই আলোচনা থেকে আমরা বাজেট কাকে বলে, সম্পূরক বাজেট কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। সুতারাং আপনি যদি বাজেট কাকে বলে, সম্পূরক বাজেট কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

বাজেট কাকে বলে - সম্পূরক বাজেট কি বিস্তারিত জেনে নিন

দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের বাজেট কাকে বলে ? সম্পূরক বাজেট কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা দরকার। দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বাজেট। বাজেটের মাধ্যমে সরকার তার দেশের উন্নয়ন চিত্র ফুটিয়ে তোলে এবং সরকার তার নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- বাজেট কাকে বলে

বাজেট কাকে বলে 

সরকার পরিকল্পিত কোন একটি নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশের তথ্যচিত্রকে/বিবরণীকে বাজেট বলে।  এই বাজেটের মধ্যে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা আয় করতে পারবে, কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাজেটের সময়কাল নির্ধারণ করা হয় ( ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত )। বাজেট শব্দটির পরিবর্তে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী এই কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ সংবিধানে। এই বাজেটের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটে।

নির্বাচিত সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা কতটুকু সূদূরপ্রসারী তা বাজেটের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। বাজেটের মধ্যে যে শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব থাকে তা নয়, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ঘাটতি কিভাবে পূরণ করবে, ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হলে সেই উদ্বৃত্ত অর্থ কোন কাজে লাগাবে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। একজন মানুষকেও দৈনন্দিন জীবনে আয়-ব্যয়ের হিসাব করে চলতে হয়। প্রথমে একজন মানুষ আয়ের পরিমাণ ঠিক করে তারপর সেই অনুযায়ী ব্যয় করে।

কিন্তু রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব উল্টো। রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের পরিমাণ নিরুপন করে এরপর আয়ের উৎস ‍গুলো চিহ্নিত করে। সাধারণত একজন মানুষ আয় বুঝে ব্যয় করে, অন্যদিকে সরকার খরচ বুঝে আয় করে। আমরা যখন খরচ চালাতে পারি না তখন যেমন আমাদের ধার করতে হয় অনুরুপভাবে রাষ্ট্রকেও বিদেশ থেকে অর্থ ধার করতে হয়। তবে ধারের অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে রাষ্ট্র কখনোও দেউলিয়া হয় না, এই বছর না হলে পরের বছর ধারের অর্থ পরিশোধ করে দিতে পারে।

বাজেট কি কত প্রকার 

বাজেট কিঃ- সরকারের আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশের বিবরণীকে বাজেট বলে।

বাজেটের প্রকারভেদঃ- সরকারের আয়-ব্যয়ের ধরন অনুযায়ী বাজের ২ ধরণের। যথাঃ- চলতি বাজেট, মূলধনী বাজেট।

চলতি বাজেটঃ- যে বাজেটে সরকারের চলতি আয় ও চলতি ব্যয়ের হিসাব গুলো দেখানো হয় তাকে চলতি বাজেট বলে। চলতি আয় সংগ্রহ করা হয়  ২ জায়গা থেকে। যথাঃ-

  • কর রাজস্বঃ- ভূমি কর, আয়কর, সম্পত্তি কর, মূল্য সংযোজন কর এগুলো কর রাজস্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
  • করবহির্ভূত রাজস্বঃ- ঋণের সুদ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, লভ্যাংশ এগুলো করবহির্ভূত রাজস্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এই বাজেটের অর্থ গুলো সরকার দেশ পরিচালনার কাজে ব্যয় করে যেমনঃ- জনপ্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, বিচার-বিভাগ, চিকিৎসা সেক্টর এইসব জায়গায় ব্যয় করে। এই খাত গুলোতে প্রতিবছর সরকারকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। কেননা, দেশ পরিচালনার জন্য এই  খাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

মূলধনী বাজেটঃ- যে বাজেটে সরকারের মূলধনী আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয় তাকে মূলধনী বাজেট বলে। মূলধনী বাজেটের উদ্দেশ্য হলো দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে গতিশীল করে। এই মূলধনী বাজেট দিয়ে সরকার বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেমনঃ- স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সেতু, কালভার্ট, রাস্তা, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এই ধরণের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করে। সরকারের উন্নয়নকে  ত্বরান্বিত রাখতে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় জায়গা থেকে অর্থসংস্থান করে। অভ্যন্তরীণ উৎস বলতে ব্যাংক ঋণ, অতিরিক্ত কর ধার্য ইত্যাদিকে বুঝায়। বৈদেশিক উৎস বলতে বৈদেশিক অনুদান, বৈদেশিক ঋণ কে ‍বুঝায়।

আয়-ব্যয় সমান কিনা সেই অনুপাতে বাজেট ২ ধরণের হয় যথাঃ- ১) সুষম বাজেট ২) অসম বাজেট

সুষম বাজেটঃ- কোন নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশের বিবরণী সমান হলে তাকে সুষম বাজেট বলে। বাজেটে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যখন ব্যয় নির্ধারণ করা হয় তখন দেশে মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার আশংকা কম থাকে। তবে আমাদের উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্ব দূর করতে, দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে এই সুষম বাজেট যথেষ্ট নয়। সুষম বাজেট বলতে মোট আয় = মোট ব্যয়।

অসম বাজেটঃ- কোন নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান না হলে তাকে অসম বাজেট বলে।

সরকারের আয় ও ব্যয়ের ভিত্তিতে অসম বাজেটকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ- ১) উদ্বৃত্ত বাজেট ২) ঘাটতি বাজেট।

উদ্বৃত্ত বাজেটঃ- কোন নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরে যখন সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ কম হয় তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে।

ঘাটতি বাজেটঃ- কোন নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরে যখন সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয় তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বৈদেশিক ‍ঋণ, বৈদেশিক অনুদান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সংগ্রহ করে থাকে।

সম্পূরক বাজেট কি 

সম্পূরক বাজেটঃ- কোন খাতে ব্যয়ের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয় তার চাইতে বেশি ব্যয় হলে তার অনুমোদন করতে যে বিল পাশ করা হয় তাকে সম্পূরক বাজেট বলে। ধরুণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলতি বছর ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছর ব্যয় দেখিয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা, উক্ত বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করতে যে বিল পাশ করা হয় সেটিই সম্পূরক বাজেট।

ঘাটতি বাজেট কি 

ঘাটতি বাজেটঃ- কোন নিদিৃষ্ট আর্থিক বছরে আয় অপেক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস, বৈদেশিক উৎসের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। 

  • অভ্যন্তরীণ উৎসঃ- এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জনগণের কাছ থেকে ঋণ ইত্যাদি। অভ্যন্তরীণ উৎসের উপর সরকার নির্ভরশীল হয়ে পড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। যদি ব্যাংকের উপর সরকার নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। ব্যাংকের বাহিরের উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে সুদের হার বেশি দিতে হয়। এই সুদের অর্থ পরিশোধের জন্য সরকারকে বেশি টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়। ফলশ্রুতিতে পরের বছরে মুদ্রাস্ফীতে বেড়ে যায়।
  • বৈদেশিক উৎসঃ- এর মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক অনুদান, বৈদেশিক ঋণ ইত্যাদি। বৈদেশিক উৎসের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ অন্যতম। সহজ শর্তে সরকার এই ঋণ সংগ্রহ করে, এই ঋণ পরিশোধের জন্য অনেক সময় পায়, তবে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করলে এখানে শর্ত অনেক থাকে।

উপসংহার

সম্মানিত পাঠক এই পোস্টে গুগলের বহুল আলোচিত একটি টপিকস বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে বাজেট কাকে বলে, বাজেট কি কত প্রকার, সম্পূরক বাজেট কি, ঘাটতি বাজেট কি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এইরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি, আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url