কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব - কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়
যত গুলো ইসলামিক বিধি-বিধান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কুরবানি। প্রতিবছর মুসলিমরা ১০ জিলহজ ফজর থেকে আরম্ব করে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পশু কুরবানি করে। নবী ইবরাহিম ( আঃ) ও তার শিশুপুত্র নবী ইসমাইল (আঃ) কুরবানির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমরা এইভাবে পশু কুরবানি করবে। কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব, কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এইরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। মূলত তাদের জন্য এই পোস্টটি লিখা হয়েছে। সুতারাং আপনি নিজেও যদি কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব - কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এই বিষয়ে না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
হাদিসের ভাষ্যমতে, কুরবানির দিনে কুরবানির চেয়ে উত্তম আমল আর নেই। অতএব, কুরবানি প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। তাহলে চলুন আর বিলম্ব না করে কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব - কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় ইত্যাদি বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব
- কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম
- কুরবানী কার উপর ওয়াজিব
- কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি
- কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়
- কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব
- উপসংহার
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম
সম্মানিত পাঠক আপনারা গুগলে সার্চ করে কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা চালু আছে। এই পোস্ট থেকে আমরা সেই সকল ভ্রান্ত ধারণার সমাধান নিয়ে আলোচনা করব। কোরবানির নাম দেওয়ায় নিয়ম নিয়ে সেই সকল ভ্রান্ত ধারণা গুলো আমাদের জানা দরকার। ভ্রান্ত ধারণা গুলো হলোঃ-
কোরবানিতে শরিকদের সংখ্যা জোড় না বিজোড়ঃ- কোরবানি তে শরিকদের সংখ্যা জোড় হবে না বিজোড় হবে এই নিয়ে মত বিরোধ রয়েছে। কেউ বলে জোড় সংখ্যা হতে হবে, কেউ বলে বিজোড় সংখ্যা হতে হবে। সমাধান হলোঃ- শরিকদের সংখ্যা জোড় বা বিজোড় উভয় হতে পারে, এতে কোন সমস্যা নেই।
কোরবানিতে কতজন শরিক হতে পারবেঃ- গরু, মহিষ, উট এই পশু গুলো কোরবানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারবে। অর্থাৎ গরু কোরবানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ জন, মহিষ কোরবানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ জন, উট কোরবানির ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারবে।
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়মঃ- আমাদের দেশে কোরবানির সময় প্রত্যেক অংশীদারদের নাম আলাদাভাবে উচ্চারণ করে। নইলে কোরবানি হবে না এমন মত চালু আছে। কিন্তু ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, কোরবানিতে শরিক প্রত্যেক অংশীদারদের নাম আলাদাভাবে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি এই বিষয়টি সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে না। ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, পশু ক্রয়ের সময় নির্ধারণ হয়ে যায় যে, কার পক্ষ থেকে কেরবানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মালিকানা কার সেটা দেখা হয়, যার যার মালিকানা রয়েছে তারা যাদের নামে কোরবানির নিয়ত করবেন, তাদের নামে কোরবানির হক আদায় হয়ে যাবে।
পশু কোরবানি করার সুন্নত পদ্ধতিঃ- নবী (সাঃ) পশু কোরবানির সময় কার পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে, কার নামে কোরবানি হচ্ছে এগুলো বিষয় তিনি কখনোও মুখে উচ্চারণ করেন নি। নবী (সাঃ) পশু কোরবানির সময় বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর বলে পশু কোরবানি করেছেন।
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য গোটা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ১০ জিলহজ ফজর থেকে আরম্ব করে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পশু কোরবানি করে। নবী (সাঃ) হিজরতের পর প্রতি বছর পশু কোরবানি করেছেন। যাদের সার্মথ্য থাকা সত্ত্বেও পশু কোরবানি করে না তাদের ব্যাপারে হাদিসে এভাবে এসেছে যে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে, কিন্তু কোরবানি করে না—সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৩৫১৯; আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব: ২/১৫৫)।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল আর নেই। কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব পাওয়া যায়। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ ঐ ব্যাক্তির কোরবানি কবুল করে নেন। গুগলে অতি আলোচিত একটি টপিকস কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ? কারা কুরবানি দেওয়ার যোগ্য ? তা আমাদের জানা দরকার।
কুরবানী কার উপর ওয়াজিবঃ- কুরবানী যাদের উপর ওয়াজিব নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলোঃ-
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেঃ- সোনা বা স্বর্ণ ( ৭.৫ ) ভরি, রুপা ( ৫২.৫ ) ভরি অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যার বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমান সম্পদ আছে ঐ ব্যাক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব।
- পৃথকভাবে স্বর্ণ (৭.৫) বা রুপা (৫২.৫) ভরি না থাকলেঃ- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ মিলে যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। যা টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলতেঃ- নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক পন্য, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, বসবাস অথবা খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক এগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
- উদাহারণ পড়ুনঃ- ধরুন, আপনার কাছে কিছু নগদ টাকা, কিছু স্বর্ণ আছে, এগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে।
- প্রথম দিন ( ১০ জিলহজ ফজর ) মুসাফির ছিল, কিন্তু তৃতীয় দিন ( ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত ) মুকিম হলে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
- একই ভাবে প্রথম দিন ( ১০ জিলহজ ফজর ) মুকিম ছিল, কিন্তু তৃতীয় দিন ( ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত ) মুসাফির হলে কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
হাজি সাহেবদের ক্ষেত্রে কুরবানির বিধানঃ- যেসকল হাজি সাহেবগন কুরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবেন তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, কিন্তু তৃতীয় দিন ( ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত ) মুকিম হলে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে।
- সতর্ক বার্তাঃ- কোরবানির অর্থ সম্পদ, টাকা পয়সা হালাল হতে হবে, হারাম টাকা দিয়ে কুরবানি করা সহীহ নয়, এক্ষেত্রে অন্য শরীক বা অংশীদারদের ও কুরবানি শুদ্ধ হবে না।
একান্নভুক্ত পরিবারের ক্ষেত্রে কুরবানির বিধানঃ- একান্নভুক্ত পরিবার বলতে যৌথ পরিবারকে বুঝায়। এক্ষেত্রে পরিবারের প্রত্যেক ব্যাক্তির কাছে যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব।
দরিদ্র ব্যাক্তির ক্ষেত্রে কুরবানির বিধানঃ- দরিদ্র ব্যাক্তি যার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, সে যদি কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে।
নারীর ক্ষেত্রে কুরবানীর বিধানঃ- কোন মহিলা যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে।
কোরবানির পশু চুরি বা মারা গেলে কুরবানির বিধানঃ- ধনীদের ক্ষেত্রে আরেকটি পশু কুরবানি করবে, গরীব ( যার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয় ) হলে তার উপর ওয়াজিব হবে না।
কোরবানির মানত করলেঃ- হতে পারে ঐ ব্যাক্তি ধনী অথবা গরিব মানতের উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে ঐ ব্যাক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব।
কোরবানির ওয়াজিব ছুটে গেলে বিধানঃ- ধরুন, আপনার উপর কুরবানি ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানির দিনগুলোতে আপনি কুরবানি করেন নি এক্ষেত্রে বিধান হলো কুরবানির দিন চলে যাওয়ার পর ১টি বকরির মূল্য সাদকা করবেন। এটা আপনার জন্য ওয়াজিব।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি
কুরবানী প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ওয়াজিব। তবে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। সে শর্ত গুলো যদি পূরণ হয় তখন ঐ ব্যাক্তি পশু কুরবানী করার জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কুরবানী করে। পশুর মাংস, রক্ত আল্লাহর নিকট পৌছায় না, বরং আপনার তাক্বওয়া কতটুকু আল্লাহ সেটি পরীক্ষা করেন। পশুর রক্ত মাটিতে প্রবাহিত হওয়ার আগেই আল্লাহ ঐ ব্যাক্তির কুরবানী কবুল করে নেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি তা নিম্নরুপঃ-
মুসলিম হওয়াঃ- কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ঐ কুরবানী দাতাকে মুসলিম হতে হবে। কোন অমুসলিমের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
কুরবানী দাতাকে যেমন হতে হবেঃ- অবশ্যই কুরবানী দাতাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কুরবানী দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে, কোন পাগলের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, পাগল যদি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ( নাবালেগ শিশু, কিশোর ), বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকার ( পাগল ) এদের অভিভাবকরা নিজ সম্পদ থেকে তাদের কুরবানী করতে পারবে (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)।
মুকিম হওয়াঃ- মুকিম বলতে কোন স্থানে ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হওয়া। মুকিম ব্যাক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব, মুসাফির ব্যাক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। মুসাফির বলতে ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করলে ঐ ব্যাক্তিতে মুসাফির বলে।
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াঃ- যখন কোন ব্যাক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তখন ঐ ব্যাক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের হিসাবঃ-
- সোনা বা স্বর্ণের হিসাবঃ- সাড়ে সাত ভরি ( ৭.৫ ) সোনা থাকতে হবে।
- রুপা হিসাবঃ- সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপা থাকতে হবে।
- পৃথকভাবে স্বর্ণ (৭.৫) বা রুপা (৫২.৫) ভরি না থাকলেঃ- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ মিলে যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। যা টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলতেঃ- নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক পন্য, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, বসবাস অথবা খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক এগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
- উদাহারণ পড়ুনঃ- ধরুন, আপনার কাছে কিছু নগদ টাকা, কিছু স্বর্ণ আছে, এগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্নো ভরি ( ৫২.৫ ) রুপার সমমূল্য হয় তখন আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে।
খেয়াল করুনঃ- ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে কেউ যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের ১ বছর অতিক্রম করতে হবে এটি শর্ত নয়।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়
আমাদের সমাজে সবাই কুরবানি দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। যাদের কুরবানি দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তারা যদি কুরবানি না করে তাহলে গুনাহগার হবেন। ত্যাগের মহিমায় গোটা মুসলিম বিশ্ব ঈদ উল আযহার দিন পশু কুরবানি করে। আপনারা অনেকে গুগলে সার্চ করে জানতে চেয়েছেন কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তা নিম্নে ধারবাহিকভাবে তুলে ধরা হলোঃ-
- যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- কোন দরিদ্র ব্যাক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- কোন দাস বা গোলামের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- কোন অমুসলিম ব্যাক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- নিজের উপর কুরবানী ওয়াজিব হলেও সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া পিতার উপর ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে যদি আপনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় অথবা নাবালেগ এমন সন্তানের পক্ষ থেকে পিতা হিসেবে আপনি পশু কুরবানী করেন তাহলে সওয়াবের ভাগিদার হবেন।
- কোন নাবালেগ শিশু - কিশোর, পাগল তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। তবে হ্যাঁ এদের অভিভাবকরা নিজ সম্পদ থেকে তাদের কুরবানী করতে পারবে (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)।
- যে ব্যাক্তি ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে অর্থ্যাৎ মুসাফির ব্যাক্তি তার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- প্রথম দিন ( ১০ জিলহজ ফজর ) মুকিম ছিল, কিন্তু তৃতীয় দিন ( ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত ) মুসাফির হলে কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব
কুরবানির গুরত্ব কতটা তা বুঝানোর জন্য ২টি হাদিস উপস্থাপন করা হলোঃ-
- ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে, কিন্তু কোরবানি করে না—সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৩৫১৯; আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব: ২/১৫৫)।
- হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল আর নেই।
কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব পাওয়া যায়। উপরোক্ত ২টি হাদিস থেকে আপনি নিশ্চয় আন্দাজ করতে পেরেছেন কুরবানির গুরুত্ব কতটা। এখন প্রশ্ন হলো প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব ? এই ব্যাপারে ২টি মতামত রয়েছে।
- হানাফি মাযহাব অনুসারে, কুরবানি করা ওয়াজিব। কোন সামর্থ্যবান সামর্থ্য থাকা সত্বেও যদি কুরবানি না করে তাহলে গুনাহগার হবে।
- ইমাম শাফেযী, ইমাম আহমেদ, ইমাম মালেকদের মতে, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুন্নতে মুয়াক্কাদা এর অর্থ হলো খুবই জরুরী সুন্নত, বিনা কারণে এটা ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ বা অপছন্দনীয়।
আমাদের বাংলাদেশের যেহেতু অধিকাংশ হানাফী মাযহাবের অনুসারী তাই যাদেরকে আল্লাহ নেসাব পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন তাদের জন্য এই কুরবানি ওয়াজিব।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠক আর কিছুদিন পর পবিত্র ঈদ উল আযহা, সবাইকে ঈদ মোবারক। আপনাদের জানানোর উদ্দেশ্যে কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম, কুরবানী কার উপর ওয়াজিব, কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি, কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url