সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - সজনে পাতার ব্যবহার
সজনে গাছের সজনা ও সজনে পাতা দুটোই খাওয়া যায় এবং এই দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। সজনে পাতাকে বলা হয় সুপার ন্যাচারাল ফুড। গ্রাম অঞ্চলে রাস্তার ধারে সজনে গাছ অহরহ দেখা যায়। শহর অঞ্চলে ছাদ বাগানে এই গাছ রোপন করা হচ্ছে। এর কারণ মানুষ ধীরে ধীরে সজনে পাতার উপকারিতা জানতে পারছে। আপনাদের অনেকে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে চেয়েছে। আপনাদের সুবিধার্তে এই পোস্টটি তৈরি করা হলো। সুতারাং আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়েন তাহলে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে যাবে।
বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলে আখ্যা দিয়েছেন। সজনে পাতার ভিতরে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া গেছে যা বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে। ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সবজি করে সজনে বা সজনে পাতা খেয়ে বড় হয়েছি। অথচ আমরা সজনে পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত নই। সজনে পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে অনুরুপভাবে এর আংশিক অপকার দিকও রয়েছে। যাদের জন্য সজনে পাতা উপযুক্ত নই সেই বিষয়ে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
- সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | সাজনা পাতার অপকারিতা
- ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম
- ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতার ব্যবহার
- উপসংহার
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
আপনারা অনেকে সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বছরের যে কোন সময় সজনে বা সজনে পাতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময়ে এই সজনে বা সজনে পাতা বেশি পাওয়া যায়। অনেকভাবেই আপনি সজনে পাতা খেতে পারেনঃ-
ভাজি করেঃ- আমরা যেমন অন্যান্য শাক-সবজি ভাজি করে খাই, অনুরূপভাবে আপনি সজনে পাতাও ভাজি করে খেতে পারেন। সজনে পাতার ভাজি খুবই স্বাদের।
ভর্তা করেঃ- আপনি সুন্দর করে সজনে পতা সেদ্ধ করে পিয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ, সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন।
রান্না করেঃ- অন্যান্য সবজির মতো সজনে পাতা ঝোল করে খেতে পারেন। তবে ঝোল করলে সজনে পাতায় বিদ্যমান ভিটামিন সি উপাদান অনেকাংশে কমে যায়।
জুস করেঃ- সজনে পাতা ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডারে গুড়া করে একটি ভালো পাত্রে/ বয়মে সংরক্ষণ করুন। এই সজনে পাতার গুড়া জুস করে খেতে পারেন।
চা করেঃ- সজনে পাতা ৪/৫ টা ধুয়ে চায়ের মধ্যে দিয়ে সজনে পাতার চা খেতে পারেন। এছাড়া আপনি সজনে পাতার চা + মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, কুসুম গরম পানি + সজনে পাতা গুড়া + লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
সালাদের সঙ্গে সজনে পাতাঃ- বিভিন্ন ধরণের সালাদের সঙ্গে সজনে পাতার গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | সাজনা পাতার অপকারিতা
সজনে পাতার নাম শুনে নি বা সজনে পাতা খায় নি এমন লোক পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানীরা একে অলৌকিক পাতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে বহু গুণাগুণ। সজনে, সজনে পাতা উভয় খেতে সুস্বাদু। সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন সি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। যা দেহের স্বাস্থ্য গঠনে খুবই উপকারি। সজনে পাতার মধ্যে বহু উপকারিতা থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যা আমাদের জানা আবশ্যক।
সজনে পাতার উপকারিতাঃ- সজনে পাতার মধ্যে এমন কিছু গুণাগুণ রয়েছে যা জানলে আপনি অবাক হবেনঃ-
- রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ- যখন দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন শরীরে নানান-ধরণের রোগ বাসা বাঁধে। দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সজনে পাতা অনন্য। তাই খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রাখার চেষ্টা করুন।
- রক্তস্বল্পতা দূরঃ- সজনে পাতা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, জিংক পাওয়া যায়। যা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। সজনে পাতা দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধিঃ- দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড সজনে পাতা থেকে পাওয়া যায়। যা দেহে মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- লিভার সুস্থ রাখেঃ- সজনে পাতার ঔষধি গুনাগুন লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া সজনে পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কোষগুলোর সচল রাখে। তাছাড়া সজনে পাতার পলিফেনল নামক উপাদান লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলো নির্গত করতে সহায়তা করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ- সজনে পাতা দেহের অতিরিক্ত মেদ, চর্বি ঝরিয়ে ফেলে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে। এজন্য যারা শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের খাদ্য তালিকায় সজনে পাতার রস বা গুড়া রাখুন।
- হার্ট সুস্থ রাখেঃ- সজনে পাতা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ- সজনে পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রস বা গুড়া রাখুন।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ- সজনে পাতায় যে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- শরীরকে শক্তিশালী করেঃ- সজনের পাতার ভিটামিন, খনিজ, আয়রন, ক্যালসিয়াম উপাদান গুলো শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করে।
- বুকের দুধ বৃদ্ধিঃ- সজনে পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা নবজাতকের মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই বাচ্চা প্রসবের পর কালোজিরার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রাখুন।
- হরমোনের ভারসাম্যঃ- যখন হরমোনের ভারসাম্য হারিয়ে যায় তখন বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা গুলো প্রকাশ পায়। সজনে পাতা পরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সহায়তা করে।
- প্রদাহজনিত সমস্যা দূরঃ- দেহে বিপাকক্রিয়ার ফলে জ্বালা পোড়া, ব্যথা আরম্ব হয়। শরীরের যেকোন ধরণের ব্যথা, প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করতে সজনে পাতা খুবই উপকারি।
- পেটের সমস্যা দূরঃ- পেটের নানান সমস্যা যেমনঃ- গ্যাস, বদহজম, পেটের জ্বালাপেড়া এই ধরণের সমস্যা সমাধানে সজনে পাতা খুবই উপকারি।
- হাড় মজবুত করেঃ- সজনে পাতা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যা দেহের হাড় গঠন ও মজবুত করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূরঃ- কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে নানা সমস্যা হয় যেমনঃ- টয়লেট কষা হয়ে যাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া। সজনে পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
- চেহারায় বয়সের ছাপ দূর করেঃ- যাদের চেহারা ঝুলে গেছে বা চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে তাদের জন্য সজনে পাতা খুবই উপকারি। কেননা, সজনে পাতার ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ রোধ করে।
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ- সজনে পাতার ভিটামিন-এ উপাদান চোখের স্বাস্থ ভালো রাখে। চোখে ছানি পড়া রোধ করে।
- সজনে পাতার অন্যান্য উপকারিতাঃ- সজনে পাতার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের সংক্রমণ রোধ, মূত্রনালি সংক্রমণ রোধ, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সজনে পাতা পোকা-মাকড়ের কামড়ে এন্টিসেপ্টি হিসেবে কাজ করে, মাথা ধরা - শ্বাসকষ্ট - চুলপড়া - জ্বর, সর্দি - বহুমূত্র রোগ - হাঁপানি এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
সজনে পাতার অপকারিতাঃ- যদিও সজনে পাতা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তবুও অতিরিক্ত খেলে হতে পারে নানান শারীরিক সমস্যা। সেজন্য একটু সতর্ক থাকা আবশ্যক।
- পেটের সমস্যাঃ- অতিরিক্ত সজনে পাতা খেলে পেটে। নানান সমস্যা হতে পারে যেমনঃ- ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এজন্য সজনে পাতা অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ মতো খাওয়া দরকার।
- ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়াঃ- যখন আপনি ব্লাড প্রেসারের জন্য ওষুধ খাবেন তখন সজনে পাতা রস, গুড়া খেলে আপনার ব্লাড প্রেশার আরো কমে যেতে পারে। হাই ব্লাড প্রেসার যেমন আমাদের জন্য ক্ষতিকর তেমনি লো ব্লাড প্রেসারও আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
- দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বলঃ- সজনে পাতার ডালে এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়।
- গর্ভাবস্থায় সর্তকঃ- গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়া মোটে উচিত নয়। কারণ, সজনে পাতার সংলগ্ন ডালে কিছু প্লান্ট ক্যামিকেল থাকে, যার দ্বারা নবজাতক বা শিশুর মায়ের ক্ষতি হতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীরা সতর্কঃ- আপনি ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি সজনে পাতার রস, গুড়া খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে অতিরিক্ত সজনে পাতা খেলে সুগারের মাত্রা একেবারে কমে গিয়ে ডায়াবেটিসের রোগী বিপাকে পড়তে পারে।
- কিডনির রোগীরা সতর্কঃ- সজনে পাতা খেলেই কিডনির সমস্যা সেরে যাবে এমনটা মনে করবেন না অর্থাৎ কিডনির সমস্যার সমাধানের জন্য সরাসরি সজনে পাতার উপর নির্ভরশীল হবেন না। কতটুকু সজনে পাতা আপনার খাওয়া উচিত, তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে হাজারো শারীরিক সমস্যার সমাধান। যেগুলো বিস্তারিতভাবে সজনে পাতার উপকারিতা এই প্যারায় আলোচনা করা হয়েছে। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সজনে পাতা এক বিশেষ নিয়ামত। সুতারাং যারা ঘরোয়া উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য সজনে পাতা বেস্ট অপশন হতে পারে। সজনে পাতার মধ্যে এমন কিছু গুণাগুণ রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। চলুন তাহলে ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ-
- সজনে পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসোমিক বৈশিষ্ট্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- সজনে পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, আইসোথিয়োসাইনেট ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে।
- সজনে পাতায় বিদ্যমান অ্যাসকরবিক অ্যাসিড শরীরে ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে।
- সজনে পাতার প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম কী ? কিভাবে সজনে পাতা গুড়া করতে হয় আমরা অনেকেই জানি না। সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম খুবই সোজা। সুতারাং এই প্যারাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম বিস্তারিত জেনে যাবেনঃ-
- সজনে গাছ থেকে সজনে পাতা নামানোর পর ডগা থেকে সজনে পাতা গুলো আলাদা করে নিন।
- যেহেতু সজনে পাতায় ধূলাবালি থাকতে পারে, তাই সজনে পাতা গুলো সুন্দর করে ধুয়ে নিন যেন ধুলাবালি লেগে না থাকে। এরপর এগুলো রোদে শুকিয়ে নিন।
- যেহেতু আপনি সজনে পাতার গুড়া সংরক্ষণ করবেন তাই অবশ্যই ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিবেন যেন পাতা ভেজা না থাকে।
- কোন অপরিষ্কার জায়গায় সজনে পাতা শুকাবেন না, এতে ময়লা-ধুলাবালি সজনে পাতার সাথে মিশে যেতে পারে।
- সজনে পাতা রোদে শুকানোর পর ভালো করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। এমনভাবে ব্লেন্ড করুন যেন সজনে পাতা গুলো পাউডারের মতো হয়ে যায়। হয়ে গেল সজনে পাতার গুড়া। এভাবে আপনি সজনে পাতা গুড়া করতে পারেন।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
খাদ্য হিসেবে সজনে পাতার যেমন রয়েছে বহু উপকারিতা অনুরুপভাবে ত্বকের নানান সমস্যার সমাধান রয়েছে এই সজনে পাতার মধ্যে। আমরা অনেকেই ত্বকের যত্নের ব্যাপারে সচেতন নই, যার ফলে দেখা দেয় ত্বকের হাজারো সমস্যা যা আমাদের ব্যাক্তিত্বের শান নষ্ট করে দেয়। সুতারাং আপনি যদি ত্বকের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে সজনে পাতা হতে পারে আপনার জন্য সেরা অপশন। চলুন তাহলে ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ-
- ত্বকের যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্রণ ও পিম্পলের সমস্যা। মূলত রক্তে টক্সিন জমে গেলে এই সমস্যা হয়। সজনে পাতার রস, গুড়া এগুলো রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং ব্রণ ও পিম্পলের সমস্যা দূর করে।
- সজনের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
- সজনে পাতা কলিজেন প্রোটিন উৎপাদন করে ত্বকের লোমকূপ ছিদ্র বন্ধ করে।
- সজনে পাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করে।
- সজনে পাতার ফেসপ্যাক ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের ক্ষত, কালচে দাগ, বলিরেখা, কুঁচকানো ভাব দূর করে।
- সজনে পাতার অয়েল ও পাউডার ঠোঁঠের কালচে দাগ দূর করে, ঠোঁঠকে রাখে কোমল, আর্দ্র।
ফেসপ্যাক তৈরিঃ- সজনে পাতার গুড়া ১ টেবিল চামচ + মধু ও গোলাপজল ১ টেবিল চামচ + আধা টেবিল চামচ লেবুর রস সুন্দর করে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এখন এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সজনে পাতার ব্যবহার
খাদ্য হিসেবে সজনে পাতা যেমন পুষ্টিকর অনুরুপভাবে সুন্দর ত্বক ও ঘন চুল পেতে আপনি সজনে পাতা নানানভাবে ব্যবহার করতে পারেন। সজনে পাতার বিদ্যমান পুষ্টিগুণ ত্বককে করবে সুন্দর, চুলকে রাখবে লম্বা, ঘন, উজ্জল। ত্বকের দাগ ও মানহীন চুল আমাদের ব্যাক্তিত্বের শানকে নষ্ট করে দেয়। সজনে পাতা ব্যবহার ত্বক ও চুলের প্রাণ ফিরিয়ে আনে। সুতারাং সজনে পাতার ব্যবহার সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
সজনে পাতা ত্বকের যেসব সমস্যার সমাধান করেঃ-
- সজনে পাতা ত্বকের কালচে-দাগ দূর করে।
- সজনে পাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে দেয়।
- অনেকের ঠোঁঠ নানান কারণে কালচে হয়ে যায়, সজনে পাতার অয়েল ও পাউডার ঠোঁঠের কালচে দাগ দূর করে, ঠোঁঠকে রাখে কোমল, আর্দ্র।
- সজনে পাতার ফেসপ্যাক ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী। তাই যারা ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে চান তারা সজনে পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
- রক্তে যখন টক্সিন জমে যায় তখন ব্রুণ ও পিম্পল এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই রক্তকে টক্সিনমুক্ত করতে সজনে পাতার গুড়া বা রস খুবই উপকারি। এছাড়া সজনে পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ব্রুণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্ষতিকর ফাঙ্গাল থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
- বিভিন্ন কারণে ত্বকের লোমকূপের ছিদ্র বড় হয়ে যায়, সজনে পাতা কোলাজেন প্রোটিন উৎপাদন করে ত্বকের লোমকূপ ছিদ্র বন্ধ করে।
সজনে পাতার ফেসপ্যাকঃ- যে ভাবে তৈরি করবেন সজনে পাতার ফেসপ্যাক নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
উপকরণঃ- সজনে পাতার গুড়া, গোলাপ জল, মধু, লেবুর রস, পানি।
ফেসপ্যাক তৈরিঃ- সজনে পাতার গুড়া ১ টেবিল চামচ + মধু ও গোলাপজল ১ টেবিল চামচ + আধা টেবিল চামচ লেবুর রস সুন্দর করে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এখন এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সজনে পাতা চুলের যেসব সমস্যার সমাধান করেঃ-
- সজনে পাতার হাইড্রেটিং এবং ডিটক্সিফাইং উপাদান চুল দ্রুত লম্বা করতে সহায়তা করে।
- সজনে পাতার বিদ্যমান প্রোটিন চুলকে মজবুত করে।
- সজনে পাতার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকির সমস্যা সমাধান করে। সেই সঙ্গে চুলের রুক্ষতা, স্ক্যাল্পের সমস্যা, চুলের আগা ফাটার সমস্যা দূর করে।
চুলের জন্য সজনে পাতার পেস্টঃ- ২ টেবিল চামচ সজনে পাতার গুড়া + ১ টেবিল চামচ মেহেদির গুঁড়ো + পরিমাণ মতো টক দই + কয়েক ড্রপ ক্যাস্টর অয়েল ভালো করে মিশিয়ে ঘন করে পেস্ট তৈরি করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সুন্দর করে স্ক্যাল্প করুন। এরপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর সুন্দর করে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। এভাবে আপনি সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করবেন।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠক স্বাস্থ্যবিষয়ক মহা মূল্যবান একটি টপিকস “ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ” সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আপনাদের সুবিধার জন্য সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম, সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | সাজনা পাতার অপকারিতা, ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা, সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম, ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা, সজনে পাতার ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য আরও পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url