প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় - ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে

ডাব অত্যন্ত সুস্বাদু পানীয়। যা সারা বছর পাওয়া যায়। বিশেষ করে যখন প্রচন্ড গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় তখন একটু এনার্জি পেতে আমরা ডাবের পানি বেছে নিই। ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে বহু উপকারিতা। অনেকে গুগলে সার্চ করে প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ? ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে ? ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চায়। সুতারাং যারা প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ? ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে ?  ইত্যাদি বিষয়ে জানেন না তাদের জন্য এই পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় - ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে

শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেকোন বয়সের মানুষের নিকট অত্যন্ত সুস্বাদু পানীয় হচ্ছে ডাবের পানি। ডাবের পানির বহু উপকারিতা কথা নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সাথে গুগলের বহুল আলোচিত একটি টপিকস প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ? ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে ? ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা 

একজন গর্ভবর্তী নারীকে নিজের এবং তার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হয়। এজন্য পুষ্টিকর খাবার গুলো খাওয়ায় প্রয়োজন পড়ে। যত গুলো পুষ্টিকর খাবার রয়েছে তার মধ্যে ডাবের পানি অন্যতম। কেননা, ডাবের পানি থেকে ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতাঃ-

  • নবজাতকের ব্রেইনের স্বাস্থ্যের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারি। এজন্য প্রতিদিন ১ গ্লাস করে ডাবের পানি খান। ডাবের পানি মা ও নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।
  • গর্ভবর্তী নারীদের শারীরিক দূর্বলতা দূর করার জন্য নিয়মিত ডাবের পানি খান।
  • ব্ল্যাড প্রেশারের ঝুঁকি হ্রাস করে। তাছাড়া দেহে ক্ষতিকর উপাদান গুলো ইউরিনের সাহায্যে বের করে দেয়।
  • বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ডাবের পানি।
  • তাছাড়া ডাবের পানিতে বিদ্যমান ফাইবার, ফ্যাটি অ্যাসিড মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
  • গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পানির সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি খান।
  • গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। কারণ, এই সময় প্রোজেসটেরন হরমোন বেড়ে যায়, রেগুলার আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ায় এই ধরণের সমস্যা হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ডাবের পানি হচ্ছে আঁশসমৃদ্ধ একটি খাবার। ডাবের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায়। 
  • ডাবের পানির পটাসিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইটিক ভারসাম্য ঠিক রাখে। এটি শরীরে পানি আসা ও গর্ভাবস্থায় লেগ ক্রাম্প প্রতিহত করে।
  • ডাবের পানির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
  • ডাবের পানির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • গর্ভাবস্থায় নারীদের কখনো ওজন বেড়ে যায় আবার কখনোও ওজন কমে যায়, তাই এই সময় ওজন সঠিক রাখতে ডাবের পানি খেতে পারেন। কেননা, ডাবের পানিতে জিরো ফ্যাট, কোলেস্টেরেল রয়েছে। যা দেহে ওজন সঠিক রাখতে খুবই কার্যকরী। 

সতর্কবার্তাঃ- ডাবের পানি খাওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজনঃ-

  • ঘন ঘন ডাবের পানি পান করবেন না। দিনে ১/২ গ্লাসের বেশি নয়। 
  • ট্রি নাট অ্যালার্জি থাকলে ডাবের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, অ্যালার্জি কারণে হাত, পা, সারা দেহে চুলকানি হয়।

খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা 

যেকোন মৌসুমের অন্যতম সুস্বাদু পানীয় হলোঃ- ডাবের পানি। প্রাকৃতিক এই পানীয়টির মধ্যে রয়েছে বহু গুণাগুণ। প্রচন্ড গরমে পানির পিপাসা মিটাতে আমরা ডাবের পানিকে বেঁচে নিই। খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা থাকলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। প্রথমে আমরা খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা জানব পরে জানব এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। 

খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতাঃ- খালি পেটে ডাবের পানি খেলে আপনি যেসকল উপকার পাবেন তা নিম্নরুপঃ-

  • শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা, এতে বিদ্যমান অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক যা শরীর গঠনে খুবই কার্যকরী। 
  • ডাবের পানিতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। ডাবের পানি শরীরে হাড়কে শক্ত, পাকা পোক্ত করে।
  • ডাবের পানি দেহের ক্ষতিকর উপাদান গুলো ইউরিনের সাহায্যে বের করে দিয়ে দেহকে বিষমুক্ত করতে সহায়তা করে।
  • রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কেননা, ডাবের পানির অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফাইবার ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ডাবের পানির পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। সাথে শরীরে বিদ্যমান টক্সিন উপাদান গুলো ইউরিনের সাহায্যে বের করে দিয়ে শরীরকে নানান জটিলতা থেকে রক্ষা করে।
  • কায়িক পরিশ্রম, শরীরচর্চার, ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম এর কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই পানি শূন্যতা দূর করতে ডাবের পানি স্যালাইনের মতো কাজ করে।
  • যারা আজীবন যৌবনের ছাপ ধরে রাখতে চান তারা রোজ ডাবের পানি খান। ডাবের পানির সাইটোকিনিস নামে অ্যান্টি-এজিং উপাদান শরীরে বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  • ডাবের পানির এনজাইম হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতি ঘটায়। ফলে দেহে মেদ জমে ওজন বৃদ্ধি আশংকা থাকে না। ডাবের পানি শরীরের ওজন সঠিক মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে।
  • ডাবের পানির নিয়াসিন, থিয়ামিন, পাইরিডোক্সিন, রাইবোফ্লবিন মতো উপাদান গুলো শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে ফলে কোন ক্ষতিকর জীবাণু ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। ডাবের পানির অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল উপাদান সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে, পাশাপাশি দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • মাইগ্রেন বা ডিহাইড্রেশন এর কারণে যখন প্রচন্ড মাথা ব্যথা অনুভব হয় তখন ১ গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নিন। এতে মাথা ব্যাথা কমে যাবে।
  • ডাবের পানি শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্যে করে। ডাবের পানি দেহে ভালো কোলেস্টেরল পরিমাণ বাড়িয়ে  হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

খালি পেটে ডাবের পানির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ- সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমরা এতক্ষণ খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা জেনেছি। খালি পেটে ডাবের পানি খেলে শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-

  • পেটে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হতে পারে।
  • এছাড়া অ্যাসিডিটি, বদহজম, গ্যাসের মতো নানা বিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • দৈনিক ডাবের পানি ১/২ গ্লাসের বেশি খাওয়া উচিত নয়।

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় 

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় তা আমাদের জানা আবশ্যক। গরমকালে তৃষ্ণা মিঠানোর জন্য আমরা ডাবের পানি খাই। ডাব শুধু পানির তৃষ্ণা মিটায় না, বহু রোগের মহা ঔষধ বলা হয় ডাবের পানিকে। চিকিৎসা শাস্ত্রে, ডাবের পানির রয়েছে বিশেষ চাহিদা। সারা বছর ডাবের পানি পান করলে বেঁচে যাবেন বহু বিপদজনক রোগ থেকে। প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ-

শরীরে পানির অভাব পূরনঃ- য়ারা ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় রয়েছেন তারা নিয়ম করে ডাবের পানি খান। তাছাড়া ড়ায়রিয়া, বমি, জ্বর, অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়। ডাবে বিদ্যমান ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান শরীরে খনিজের ঘাটতি মিটাতে সাহায্য করে। শরীরে পানির ঘাটতি রোধ করার জন্য চিকিৎসকরা নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

মাথা যন্ত্রণা দূরঃ- ডিহাইড্রেশনের কারণে বা মাইগ্রেনের কারণে যখন মাথা ব্যাথা আরম্ব হয় তখন ডাবের পানি খান। কেননা, ডাবের পানিতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম উপাদান যন্ত্রণা নিরোধক হিসেবে কাজ করবে।

বার্ধক্য রোধঃ- বার্ধক্য দূর করে, যৌবনের ছাপ ধরে রাখতে নিয়ম করে ডাবের পানি পান করুন। ডাবের পানিতে রয়েছে সাইটোকিনিস নামের অ্যান্টি-এজিং উপাদান যা শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বক ঝুলে পড়া রোধ করে, ত্বক রাখে টান টান। এতে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রেস দূরঃ- গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, ডাবের পানি স্ট্রেস দূর করে, পেশীর সচলতা বৃদ্ধি করে। কেননা, ডাবের পানিতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির যোগায়। আমরা সকলে জানি ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি।

কিডনির কর্মক্ষমতাঃ- ডাবের পানি থেকে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যা কিডনির  কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে বিদ্যমান টক্সিন ইউরিনের সাহায্যে বের করে দিয়ে শরীরকে নানান জটিলতা থেকে রক্ষা করে।

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেঃ- হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানি খুবই উপকারি। কেননা, ইহা শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করে,শরীরে ভালো কোলেস্টেরল পরিমাণ বাড়ায় যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- নিয়াসিন, থিয়ামিন, পাইরিডোক্সিনের, রাইবোফ্লবিন মতো উপাদান গুলোর অন্যতম উৎস ডাবের পানি। যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিপদজনক ব্যাকটেরিয়ার হাঁত থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। 

ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণঃ- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারি। ডাবের পানির অ্যামাইনো এসিড ইনসুলিনের মতো কাজ করে। যা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ- ডাবের পানিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম মতো উপাদান রয়েছে। যেগুলো ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিদ্যমান পটাসিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ- ডাবের পানিতে উপস্থিত এনজাইম হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতি করে। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় মেদ জমার কোন সুযোগ থাকে না। তাছাড়া ওয়াটার রিটেনশনের কারণে ওজন বাড়ার আশংকা কম। কেননা, ডাবের পানিতে লবণের মাত্রা সঠিক পরিমাণে রয়েছে। 

ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ- ডাবের পানি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, ব্রণের ভয়াবহতা থেকে ত্বককে হেফাজত করে ইত্যাদি।

শরীরে এনার্জি বুষ্ট করেঃ- শরীরচর্চা বা পরিশ্রম করার পর যখন শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে যায় তখন এক গ্লাস ডাবের পানি পান করলে শরীরে পুনরায় এনার্জি ফিরে আসে।

গ্যাসট্রিকের সমস্যা দূরঃ- ডাবের পানি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে যার ফলে পেটে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো 

ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো ?  কখন খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি ? তা জানতে আমরা ইচ্ছুক। অনেকে এভাবেও প্রশ্ন করে ডাবের পানি সকালে, দুপুরে,  বিকালে কোন সময় খেলে শরীরের জন্য উপকারি? উত্তরঃ আপনি দিনের যেকোন সময় খেতে পারেন। আমরা সকালে হাল্কা নাস্তা করার পর পানি, চা, কফি পান করে থাকি। এগুলোর সাথে আপনি যদি ডাবের পানি খান তাহলে শরীরের জন্য এটা খুবই কাজে আসে। ডাবের পানি হচ্ছে প্রাকৃতিক স্যালাইন। শরীরে হারানো এনার্জি ফিরে পেতে ডাবের পানি খুবই উপকারী। 

ডাব খেলে কি গ্যাস হয় 

ডাব খেলে কি গ্যাস হয় ? উত্তরঃ না, ডাবের পানি গ্যাস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। একটু খাবারের অনিয়ম হলেই পেটে গ্যাস, অ্যাসিডিটি সমস্যা দেখা দেয়। পেটে গ্যাস, অ্যাসিডিটি সমস্যা থেকে বাঁচতে ডাবের পানি খুবই কার্যকরী। ডাবের পানি শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো ইউরিনের সাহায্যে বের করে দেয়। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসে পেট ফুলা কমে যায়। ডাবের পানিতে থাকা বিদ্যমান এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল হজম শক্তির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হলে হজম প্রক্রিয়ার সহজ হয়, পেটে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাছাড়া ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রোজেনের মতো সমস্যা গুলো দূর করে। 

ডাব খেলে কি ঠান্ডা লাগে 

ডাব খেলে কি ঠান্ডা লাগে ? খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমাদের অনেকেরই অনুমান এরকম যে, নিয়মিত ডাবের পানি বা কলা খেলে ঠান্ডা লাগে। আসলে ডাবের পানির সাথে ঠান্ডা লাগার কোন সম্পর্ক নেই। ডাবের পানি তে ফ্রিজের পানির মতে ঠান্ডা নয়। ডাবের পানির যে তাপমাত্রা থাকে সেটা হচ্ছে সহনীয় তাপমাত্রা। প্রকৃতির তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই তাপমাত্রা নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ ডাবের পানির তাপমাত্রা হচ্ছে ন্যাচারাল তাপমাত্রা। আলোচনা থেকে আশা করি উপলব্ধি করতে পেরেছেন ডাবের পানির সাথে ঠান্ডা লাগার কোন সম্পর্ক নেই।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম 

ডাবের পানিকে বলা হয় প্রাকৃতিক স্যালাইন। ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ডাবের পানি থেকে ভিটামিন, খনিজ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইট এর মতো উপাদান পাওয়া যায়। এই ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে বহু গুণাগুণ। ইহা শরীরের আর্দ্রতা ঠিক রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়, শরীরের ওজন কমায়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডাবের পানি আমাদের জন্য কতটা উপকারী। ডাবের পানি সরাসরি পান করা ছাড়াও বিভিন্নভাবে এটি খেতে পারেন। চলুন তাহলে ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম গুলো ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া যায়ঃ-

স্বাভাবিকভাবে পান করাঃ- যদি ডাবের আসল স্বাদ অনুভব করতে চান, তাহলে গাছ থেকে নামিয়ে অথবা বাজার থেকে তাজা, কচি ডাব ক্রয় করে ডাবের পানি ও শ্বাস খাওয়ার মাধ্যমে ডাবের আসল স্বাদ অনুভব করতে পারেন।

ফলের জুসের সাথে যোগ করেঃ- আমরা ফলের জুস খেতে কে না পছন্দ করি। আম, কমলা, তরমুজ, ডালিম, সহ আরও অন্যান্য ফলের জুস এর সাথে ডাবের পানি যোগ করে পান করলে অন্যন্য স্বাদ পাওয়া যায়। ইহা স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টি যোগায় এবং শরীরের আর্দ্রতা ঠিক রাখে।

রান্নায় ব্যবহারঃ- ভাত রান্নায় বা কিনওয়া রান্নায় সাধারণ পানি ব্যবহারের পরিবর্তে ডাবের পানি ব্যবহার করলে ইহা খাবারের স্বাদে অনন্য মাত্রা যোগ করে।

বরফ তৈরি করেঃ- গরমকালে আমরা বাসায় সাধারন পানি বা ফলের রস দিয়ে বরফ তৈরি করে থাকি। আপনি আইস বক্সে ডাবের পানি দিয়ে বরফ তৈরি করতে পারেন।

বাসায় আইসক্রিম তৈরি করেঃ- ডাবের পানির সাথে যে কোন ফলের টুকরো যোগ করে ফ্রিজে রাখলে অত্যন্ত সুস্বাদু আইসক্রিম তৈরি করা যায়।

ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে 

ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে ?  উত্তরঃ না, শরীর ডিহাইড্রেশন রোধ, শরীরে ইমিউনিটি তৈরি করা সহ নানান উপকারিতায় রয়েছে এই ডাবের পানির মধ্যে। প্রেসারকে বলা হয় নীরব ঘাতক। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবে প্রসার হয়। প্রেসারের পরিণাম ভয়াবহ। প্রেসারের কারণে হার্টফেল, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেকোন বয়সের মানুষের প্রেসার হতে পারে। যারা প্রেসার / রক্তচাপ নিয়ে চিন্তিত তারা রোজ ডাবের পানি খান। কেননা, ডাবের পানি প্রেসার / রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

ডাবের পানি থেকে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম, উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাছাড়া ইহা ডিহাইড্রেশনের রোধ, হজমশক্তি শক্তি বৃদ্ধি, অ্যাসিডিটির হাত থেকে শরীরকে সুস্থ রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ডাবের পানি বড় নিয়ামত, ডাবের পানিতে বিদ্যমান পুষ্টি  উপাদান ফাইবার যা শরীরে পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও ডাবের পানি ভীষণ উপকারী। তাহলে এখন নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন ডাবের পানি আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারী। 

উপসংহার

সম্মানিত পাঠক প্রতিদিনের মতো আজকেও আমরা হাজির হয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস নিয়ে। এই পোস্টে  গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা, খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা, প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়, ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো,  ডাব খেলে কি গ্যাস হয়, ডাব খেলে কি ঠান্ডা লাগে, ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম, ডাব খেলে কি প্রেসার বাড়ে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এইরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url