দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প - দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া
দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প, দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া জানতে আপনারা অনেকে গুগলে সার্চ করেছেন। আপনাদের জন্য এই পোস্টটি অতি যত্ন সহকারে লিখা হয়েছে। সুতারাং দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প, দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া জানতে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়তে থাকুন।
মুমিনদের কাছে সব থেকে দামি সম্পদ হলো দ্বীন। আর অভিশপ্ত শয়তান এইটা চুরির করার প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালায়। সমাজের অসংখ্য খারাপ মানুষকে আল্লাহ অকল্পনীয়ভাবে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে এনেছেন। চলুন তাহলে দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প ও দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প
- দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া
- ঈমান বৃদ্ধির দোয়া
- ঈমান মজবুত করার উপায়
- শিরক থেকে বাঁচার দোয়া
- দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প
- উপসংহার
দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া
সমাজে যেভাবে গুনাহের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থায় একজন প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে ইমানের উপর বা দ্বীনের উপর অবিচল থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুনিয়াবী জীবনে একজন মুমিনের সম্পদ বা বেঁচে থাকার সম্বল হচ্ছে তার ঈমান। লাখো প্রতিকূলতার মধ্যেও মুমিন কখনোও ঈমান হারা হতে চায় না এটি হচ্ছে মুমিনের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দ্বীনের উপর থাকলে দুনিয়াতে শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা দরকার। দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন দোয়া কথা উল্লেখ করা আছে। দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া গুলো হলোঃ-
দোয়া-১ঃ رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারনঃ রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বাদা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুংকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।
অর্থঃ হে আমাদের রব! আপনি আমাদের যে হেদায়াত দান করেছেন, তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করবেন না। আর একান্তভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি অসীম দানশীলতার অধিকারী।' (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৮)।
দোয়া-২ঃ يَا مُقَلِّبَ القُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
উচ্চারনঃ ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি, ছাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিকা
অর্থঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।’
দোয়া-৩ঃ اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুবি সাররিফ কুলুবিনা আলা ত্বাআতিকা
অর্থঃ হে আল্লাহ! হে অন্তরসমূহের নিয়ন্ত্রক! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার ইবাদতের ওপর অবিচল রাখুন।’ (মুসলিম)
দোয়া-৪ঃ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারনঃ ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ্দাল্লিন
অর্থঃ আমাদের সহজ সরল পথের হেদায়েত দিন। যে পথে চলা লোকদের ওপর আপনি নেয়ামত দান করেছেন। অভিশপ্ত ও গোমরাহির পথ থেকে বিরত রাখেন
তাই, দ্বীনের উপর অটল থাকতে কোরআন ও হাদিসে যে ভাষায় দোয়া করার কথা বলা আছে সে ভাষায় দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তনকারী। হেদায়েত দেওয়ার মালিক আল্লাহ, তিনি যাকে খুশি তাকে হেদায়েত দান করেন। আল্লাহর রহমত ছাড়া দ্বীনের পক্ষে অবিচল থাকা সম্ভব নয়। তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দ্বীনের পক্ষে অটল থাকার জন্য কোরআন ও সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া গুলো বেশি বেশি করা।
ঈমান বৃদ্ধির দোয়া
ইসলামে ৫টি স্তম্ভের মধ্যে প্রথমটি হলো ঈমান। কোন কাফেরকে ইসলামে প্রবেশ করতে হলে তাকে আগেই ঈমান আনতে হবে। তাকে কালমা শাহাদাত পাঠ করতে হবে। মনে প্রাণে এটি বিশ্বাস করতে হবে যে “ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসুল ”। ঈমানের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নামাজ, এরপর ধারাবাহিকভাবে রোজা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি। বর্তমান মুসলিম এক ভয়াবহ সংকটময় সময় পার করছে । এর কারণ হলো কোরআন ও সুন্নাহ প্রকৃত জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ শিরক, কুফর, নানান বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে- “ তাদের অধিকাংশ আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে, কিন্তু তারা মুশরিক ” (সূরা ইউসূফ, আয়াত: ১০৬)। তাই ঈমানের পক্ষে অবিচল থাকার জন্য আমাদের উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। অভিশপ্ত শয়তান মানুষকে বিপদগামী করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, আমাদের উচিত কোরআন ও সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া গুলো বেশি বেশি করা যাতে আমরা ঈমানের পক্ষে অবিচল থাকতে পারি। নিম্নে ঈমান বৃদ্ধির দোয়াঃ-
দোয়া- ১ঃ رَبَّـنَـا لاَ تُـزِغْ قُـلُـوْبَـنَـا بَـعْـدَ اِذْ هَـدَيْـتَـنَـا وَهَـبْ لَـنَـا مِـنْ لَّـدُنْـكَ رَحْـمَـةً اِنَّـكَ اَنْـتَ الـوَهَّـابُ
উচ্চারনঃ রাব্বানা লা তুযিগ্ ক্বুলুবানা বা’দা ইয্ হাদায়তানা ওয়া হাব্লানা মিল্লা দুনকা রাহমাহ্ ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ্হাব।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ-প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘন বা বক্র করো না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান কর। নিশ্চয়ই তুমি মহা দাতা।
দোয়া- ২ঃ اَللّٰهُمَّ جَدِّدِ الْإِيْمَانَ فِي قُلُوْبِنَا
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা জাদ্দিদিল ঈমানা ফি কুলুবিনা
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি আমাদের হৃদয়ের ইমানকে নবায়ন করে দাও।
মুসলমানদের কাছে সব থেকে দামি সম্পদ হলো ঈমান। যখন কোন মানুষ ঈমান থেকে বিছিন্ন হয়ে যায় তখন তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ধ্বংস হয়ে যায়। আদম সন্তান শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে পাপ করবে, আমাদের উচিত বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার করা এবং ঈমানের উপর অটল থাকার জন্য কোরআন ও সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া গুলো বেশি বেশি করা।
ঈমান মজবুত করার উপায়
ঈমান মজবুত করার জন্য বেশি বেশি দোয়া করার পাশাপাশি বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যেগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার। ঈমান হলো বিশ্বাস ও কর্মের সমষ্টি। সৎকর্মের ফলে মানুষের ঘুমন্ত ঈমান জাগ্রত হয় অর্থ্যাৎ ঈমান বাড়ে, অসৎ কর্মের ফলে মানুষের জাগ্রত ইমান নিভে যায় অর্থ্যাৎ ঈমান কমে যায়। ঈমানের ব্যাপারে কোরআন মাজীদে উল্লেখ আছে “ নিশ্চয় যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোনো ” (ফুসসিলাত-৩০)। ইমান মজবুত করার উপায় গুলো নিম্নরুপঃ-
- মহান আল্লাহর গুনবাচক নামগুলো অর্থসহ বেশি বেশি স্মরণ করা। মহান আল্লাহর রয়েছে ৯৯ টি নাম। যারা এই নাম গুলোর অর্থ বুঝে আল্লাহকে ডাকবে, তাদের ইমানের স্তর সুদৃঢ় হবে, আল্লাহর প্রতি তারা আকৃষ্ট হবে, আল্লাহ ভীতি তাদের ভিতর কাজ করবে। এ ব্যাপারে হাদিসে বলা আছে “ যে ব্যক্তি মর্মার্থ অনুধাবনসহ সেগুলো গণনা করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (বুখারি ও মুসলিম) ”।
- কোরআন ও সুন্নাহ ইলম হাসিল করা। সেই অনুযায়ী জীবন গঠন করা। ভালো-মন্দ পার্থক্য করা, হালাল-হারাম বুঝে চলা, উত্তম চরিত্র গঠন করা, আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) যা আদেশ করেছে তা বাস্তবায়ন করা এবং যা নিষেধ করেছে তা বর্জন করা, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা, সৎকর্মে মনোনিবেশ করা, অসৎকর্ম বর্জন করা উত্তম মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য।
- আল্লাহ সৃষ্টি সম্পর্কে গবেষণা করা। আল্লাহ আপনাকে যেসকল নিয়ামত দিয়েছে, আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ গুলো করেছে তা বেশি বেশি স্মরণ করা। এ ব্যাপারে কোরআন মাজীদে বলা আছে “ নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নিদর্শন ” (সূরা ইমরান-১৯০)। অন্য আয়াতে বলা আছে “ তোমাদের নিজেদের মধ্যেও তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না ” (সূরা নাজম-২১)।
- সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা। এ ব্যাপারে কোরআন মাজীদে উল্লেখ আছে “ যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো ” (সূরা ইমরান-১৯১)। সুখের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং বিপদের সময় সবর করা।
- নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আনুগত্য বেশি বেশি করা। নবী (সাঃ) যা আদেশ করেছে তা মেনে চলা এবং যা নিষেধ করেছে তা বর্জন করা।
- দুনিয়াবী সকল লোভ-লালসা ত্যাগ করে আল্লাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
- আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিব বিধান গুলো যথাযথভাবে পালন করা।
- সকল প্রকার শিরক, কুফরি, ভ্রান্ত আকিদা নিজেকে দূরে রাখা।
- এমন ব্যাক্তিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা যাদের সংস্পর্শে গেলে ঈমান বেড়ে যায়। যারা অন্যকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মাজীদে বলা আছে “ হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো” (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)।
- বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা ও শ্রবণ করা। এ ব্যাপারে কোরআনে উল্লেখ আছে “ আর যখন তাদের সামনে তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়...।” (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)।
- নবীদের সিরাত, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়া, আল্লাহর অলিদের জীবনী পড়া।
- আল্লাহর জিকিরে নিজেকে নিমজ্জিত রাখা। অধিক হারে তওবা, ইস্তেগফার করা।
- সর্বঅবস্থায় আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবে।
- জিনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন - “ কোনো জিনাকারী যখন জিনা করে তখন তার ইমান থাকে না ” (সহিহ বুখারি ২৪৭৫)।
- ভালোবাসা বা ঘৃণা সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ: ৪৬৮১)।
- নফল ইবাদাতে বেশি বেশি মনোনিবেশ করা। যে ব্যাক্তি নফল ইবাদাত যত বেশি করবে সে আল্লাহর তত নিকটবর্তী হবে।
- তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। এতে আল্লাহর সাথে বান্দার সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়।
- বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা।
- গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
- গোপনে নেক আমল বেশি বেশি করা।
- ইসলামী জালসা বা ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহন করা। এতে গুনাহ মাফের সুযোগ রয়েছে।
- মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষকে জানানো।
শিরক থেকে বাঁচার দোয়া
সব থেকে বড় পাপ হচ্ছে শিরক। আল্লাহ শিরক কারীদের অপছন্দ করে। শিরক কারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহ কড়া হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। শিরক হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শামিল করা। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ। শিরকের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন “ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে লোক আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করে; সে যেন অপবাদ আরোপ করে ” (সুরা নিসা ৪৮)।
শিরক থেকে ফিরে আসার জন্য কেউ যদি তওবা করে আল্লাহ তাকেও ক্ষমা করে দেন। এ ব্যাপারে অন্য আয়াতে বলা আছে “ আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, তবে যদি তারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে ” (সুরা আল-ফুরকান ৭০)। শিরক থেকে বাঁচার দোয়া নিম্নরুপঃ-
দোয়া-১ঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকা বিকা ওআনা আ’লাম ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে কাউকে শরিক করা থেকে । আর আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ঐ সকল বিষয়ে, যা আমি জানি না।
দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প
পাকিস্থানী গায়ক জুনায়েদ জামশেদঃ “ দিল দিল পাকিস্থান ” খ্যাত গায়ক জুনায়েদ জামশেদের কথা বলছি। তিনি একসময় পাকিস্থানের পপ স্টার গায়ক ছিলেন। ছিলেন রঙিন জগতের এক পরিচিত মুখ। এরই মধ্যে তিনি গান গেয়ে যশ-খ্যাতি অর্জন করেছেন। অবশেষে ২০০৩ সালে ১৪ আগষ্ট সঙ্গীত জগতকে বিদায় জানান। অতঃপর তিনি তার জীবনের পরের অংশ তাবলীগ জামাতে ব্যয় করেন। জুনায়েদ জামশেদের জীবন পরিবর্তন হওয়ার পিছনে মূল অবদান ছিল পাকিস্থানের প্রখ্যাত আলেম তারিক জামিলের। পরে বিভিন্ন ইসলামী সংগীতের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। জীবনের বাকী অংশ তিনি দাওয়াতী কাজে ব্যয় করেছিলেন। ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে সস্ত্রীক বিমান দূর্ঘটনায় শাহাদাত বরণ করেন।
অস্ট্রেলিয়ান যুবক আলী বানাতঃ অস্ট্রেলিয়ান যুবক আলী বানাত ছিলেন একজন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী। তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ ছিল, তার ব্যবহৃত পোশাক, বাড়ি-গাড়ি, ঘড়ি এগুলো ছিল কোটি কোটি টাকার। আলী বানাত উচ্চ বিলাসী জীবন যাপন করতেন। কিন্তু আলী বানাতের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তার জিহবার ক্যান্সার। ডাক্তার বলেছিল তিনি আর মাত্র ৭ মাস বাঁচবেন। তখনই তিনি জীবনের মর্ম উপলব্ধি করেন। ধীরে ধীরে তিনি আল্লাহর দিকে ধাবিত হন। তার সমস্ত অর্থ সম্পদ অসহায়, বিধবা, এতিম শিশুদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। ২৯ মে ২০১৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বলিউড নায়িকা সানা খানঃ একসময় বলিউডে দাপটের সহিত অভিনয় করে গেছেন নায়িকা সানা খান। বলিউডে যখন তিনি অভিনয় করতেন তখন টাকা, পয়সা, অর্থ, সম্পদ, যশ, খ্যাতি কোনটারই কমতি ছিল না। সানা খান তখন বুঝতেন এটাই মনে হয় সফলতা। যখন তিনি কোরআন থেকে জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারলেন তখন তিনি ইসলামের জন্য নিজেকে সমর্পন করেছেন। পরে গুজরাটের ব্যবসায়ী মুফতি আনাস সাঈদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠক পুরো পোস্ট জুড়ে দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া আরোও অন্যান্য বিষয় যেমনঃ-দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া, ঈমান বৃদ্ধির দোয়া, ঈমান মজবুত করার উপায়, শিরক থেকে বাঁচার দোয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই রকম তথ্য বহুল ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url