হিট স্ট্রোক কি - হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন (২০২৪)
বাড়ছে গরম আর সেই সাথে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। এই গরমে মানুষের জনজীবন নাজেহাল। এখন অনেকের কাছে হিট স্ট্রোক শব্দটি নতুন। এই হিট স্ট্রোকের কারণে ইদানীং অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আজকে আমরা এই পোস্ট থেকে জানব হিট স্ট্রোক কি ? আরও জানব হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। চলুন তাহলে বিলম্ব না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে গরমের মাত্রা বেড়েই চলেছে। যে কোন বয়সের মানুষের হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি গ্রীষ্মকালের সাধারণ সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি। কারও হিট স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলে স্থায়ী পঙ্গু অথবা মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। সুতারাং পুরো পোস্ট থেকে আমরা জানব হিট স্ট্রোক কি ? হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হিট স্ট্রোক কি - হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার
- হিট স্ট্রোক কি
- হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার
- হিট স্ট্রোক ঠেকাতে কিসের সমাহার ঘটে
- হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা
- উপসংহার
হিট স্ট্রোক কি
হিট স্ট্রোক বলতে শরীরের তাপজনিত গুরুতর অসুস্থতাকে বুঝায়। শরীরে যখন অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বেড়ে যায় ( অর্থ্যাৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট ) হয়, শরীরের ঘাম শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে না তখন হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোকের কারণে হয় মৃত্যু না হয় স্থায়ী পঙ্গুত্ব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য হিট স্ট্রোক হলে সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা হৃৎপিণ্ড,মস্তিষ্ক, কিডনি এবং পেশির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় কায়িক পরিশ্রম করলে, উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে বাইরে চলাফেরা করলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু গ্রীষ্মকালে হিট স্ট্রোক বেশি হয় তাই একে গ্রীষ্মকালীন সমস্যা বলা হয়। আমাদের দেশে যারা কৃষক তীব্র গরমে মাঠে ঘাটে কাজ করে, দিনমজুর যারা জীবিকার জন্য বাইরে বাইরে কাজ করে অথবা যারা তীব্র গরমে ব্যায়াম করে তাদের হিট স্ট্রোকজনিত সমস্যা হয়ে থাকে। যারা বয়স্ক ব্যাক্তি বা দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগছে এমন ব্যাক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার
যেকোন রোগের লক্ষণ যদি শনাক্ত করা যায় তাহলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা সহজে গ্রহণ করা যায়। অন্যান্য রোগের মত হিট স্ট্রোকেরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা অনেকেই জানে না। যেহেতু হিট স্ট্রোক উষ্ঞ তাপজনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে তাই এ থেকে বাঁচতে আমাদের সুনিদিৃষ্ট কিছু নিয়ম কানুন অবলম্বন করতে হবে। এ পোস্ট থেকে আমরা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণঃ হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো আমাদের সকলেরই জানা দরকার। নিম্নে তা দেওয়া হলোঃ-
- শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।
- শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
- অনেক সময় শরীরে ঘাম বন্ধ হয়ে যায় যার কারণে তাপ শরীর থেকে বের হতে পারে না।
- শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে ও মাথা ঘোরা আরম্ব হয়, অনেকের মাথা ব্যাথাও হয়।
- মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, ঐ সময় ব্যাক্তি কাজ ঠিকমতো করতে পারে না।
- কথা আওড়ায় যায়।
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকে।
- প্রস্রাব কম হওয়া, রক্ত চাপ কমে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখা দেয়।
- শরীরের রং লাল বর্ণ ধারণ করবে।
- পেশিতে খিঁচুনি অনুভব হয় ইহা মূলত ডিহাইড্রেশন বা অতিরিক্ত ঘাম থেকে হয় যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
- হিট স্ট্রোকের কারণে ব্যাক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
- ব্যাক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে, পাগলের মতো প্রলাপ করে।
- তীব্র গরমের কারণে শরীর শুষ্ক হয়ে যায়।
- যারা অ্যালকোহলে আসক্ত তাদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যায় তাদের বেলায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা অন্যদের থেকে বেশি।
- পেটে অস্বস্তি বোধ করা এবং বমি বমি ভাব অনুভব হয় এমনকি বমিও হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের প্রতিকারঃ হিট স্ট্রোক হলে বা হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলতে কি কি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক তা আমাদের জানতে হবে। চলুন তাহলে হিট স্ট্রোকের প্রতিকার গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-
- যেহেতু তীব্র গরমে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাই বেশি বেশি পানি পান করুন।
- প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকুন। যদি বাইরে যেতেই হয় তাহলে ছাতা ব্যবহার করুন।
- তীব্র গরমে ব্যায়াম করবেন না।
- শরীরে এনার্জি ফিরিয়ে সতেজ ফল বা ফলের রস খাদ্যতালিকায় রাখুন।
- এসময় অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, চা, কফি, ধূমপান গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
- ভাজা পোড়া, মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর এমন খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
- এ তীব্র গরমে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।
- যেহেতু ঘামের সাথে আমাদের শরীর থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে যায় সেহেতু ওরস্যালাইন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- তীব্র রোদে বাইরে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
- যেহেতু গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে গরমের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে তাই আপনার বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গায় অথবা বাড়ির ছাদে গাছপালা রোপন করুন এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, পরিবেশকে সবুজায়ন করার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিশেষ উদ্যোগ নিন।
সুতারাং উপরোক্ত বিষয় গুলো যদি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমরা হিট স্ট্রোকজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাব। আশা করি আলোচনা থেকে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছেন।
হিট স্ট্রোক ঠেকাতে কিসের সমাহার ঘটে
হিট স্ট্রোককে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া কোন সুযোগ নেই। এর কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে সবুজায়নের কোন বিকল্প নেই। প্রত্যেক ব্যাক্তিকে নিজ নিজ জায়গা থেকে বৃক্ষরোপনের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। পরিবেশের আবহাওয়ার ভারসাম্য ঠিক রাখতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পর্যায় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি হিট স্টোক থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলতে হবে। যেমনঃ প্রচুর পানি পান করা, ওরস্যালাইন সঙ্গে রাখা, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, ধূমপান, মুখরোচক খাবার, ভাজাপোড়া থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, যদি একান্ত যেতেই হয় তাহলে টুপি অথবা ছাতা ব্যবহার করুন, তীব্র রোদে কাজ করবেন না, শরীরের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।
হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কারও হিট স্ট্রোক হয়ে যায় বা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা কি হবে এগুলো আমাদের জানতে হবে। অনেক সময় সামান্য অসুখে প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর বিরাট ক্ষতি হয়ে যায়। আবার এমনও হয়ে থাকে প্রাথমিক চিকিৎসার কারণে রোগী বড় ধরণের ক্ষতি থেকে বেঁচে যাচ্ছে। তাই বলা যায় যে প্রাথমিক চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই। হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা কি সেগুলো আমাদের জানা দরকার। চলুন তাহলে হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-
- হিট স্ট্রোকের সমস্যা দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত শীতল ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যান।
- তার শরীরের পোশাক গুলো ঢিলা করে দিন।
- ঠান্ডা পানি বা বরফের পানি রোগীর শরীরে ঢেলে দিন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। প্রয়োজনে রোগীর শরীরে ভেজা কাপড় রেখে দিন।
- রোগীর মাথা, ঘাড়, বগল ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিন।
- অসুস্থ রোগীর আশেপাশে জনসমাগম করবেন না এতে রোগী অস্বাভাবিক বোধ করতে পারে। রোগীকে শীতল করার জন্য বাতাস করুন বা ফ্যানের ব্যবস্থা করুন।
- এসময় রোগীকে ঠান্ডা পানি, খাওয়ার স্যালাইন, সম্ভব হলে ফলের পান করান।
- প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরও যদি রোগী অসুস্থতা বোধ করে/ অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে স্থানীয় হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যান।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত একটি টপিকস হিট স্ট্রোক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনায় হিট স্ট্রোক কি, হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার, হিট স্ট্রোক ঠেকাতে কিসের সমাহার ঘটে, হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই রকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো তথ্য পেতে এই লিংকে চাপ দিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url