নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত - হাই প্রেসার কত জেনে নিন

সম্মানিত পাঠক আপনি কি নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত, হাই প্রেসার কত তা জানতে চান ? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কেননা, এই পোস্টে আমরা নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত, হাই প্রেসার কত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুতারাং এই পোস্টটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কোন প্রকার স্কিপ না করে ধারাবাহিকভাবে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত - হাই প্রেসার কত

প্রেসার মারাত্নক বিপদের কারণ। হোক সেটা হাই প্রেসার অথবা লো প্রেসার। তাই প্রেসার সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। অনেকে নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত, হাই প্রেসার কত তা জানতে গুগলে অনুসন্ধান করে তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্টসূচিপত্রঃ নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত



লো প্রেসার কত | লো প্রেসার কত থেকে কত 


মানবদেহে রক্তচাপ যখন স্বাভাবিক রক্তচাপের চেয়ে কমে যায় তখন সেটি লো ব্লাড প্রেশারে পরিণত হয়। লো প্রেসার খুবই কমন একটি শব্দ। প্রায় মানুষের এই সমস্যা হতে দেখা দেয়। লো প্রেসারের অপর নাম হলো হাইপোটেনশন। এখন প্রশ্ন হলো লো প্রেসার কত ? বা লো প্রেসার কত থেকে কত বোঝায় ? উত্তরঃ- রক্তচাপের মাত্রা ৯০/৬০ mmHG বা তার কম হলে লো প্রেশার বলে বিবেচিত হবে।

হাই প্রেসার কত  


লো প্রেসার যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর অনুরুপভাবে হাই প্রেসার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তচাপের মাত্রা যখন স্বাভাবিক রক্তচাপের চেয়ে বেশি হয় তখন তাকে হাই প্রেসার বলে। বয়স বাড়লে অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। এখন প্রশ্ন হলো হাই প্রেসার কত ? রক্ত চাপের মাত্রা ১৪০/৯০ mmHG বা তার বেশি হলে হাই প্রেশার বলে বিবেচিত হবে।

নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত  


নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত এটা নির্ভর করবে লিঙ্গ ও বয়সের উপর। বয়সভেদে, লিঙ্গভেদে এটা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রেশার পরিমাপ করা হয় মিলিমিটার মার্কারি ইউনিটে। একটি হলো সিস্টোলিক প্রেশার - যেটার সংখ্যা বেশি। অপরটি হলো ডায়াস্টোলিক প্রেশার  - যেটার সংখ্যা কম। মানবদেহে (সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে) রক্তচাপের আদর্শ মান ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এখানে ১২০ হলো সিস্টোলিক প্রেশার, ৮০ হলো ডায়াস্টোলিক প্রেশার। প্রেশার ২ ধরণের যথাঃ একটি হলো হাই প্রেশার অন্যটি হলো লো প্রেশার।

প্রেশার হাই (উচ্চ) নাকি লো (নিম্ন) বুঝবো কেমনেঃ রক্ত চাপের মাত্রা ১৪০/৯০ mmHG বা তার বেশি হলে হাই প্রেশার বলে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে রক্তচাপের মাত্রা ৯০/৬০ mmHG বা তার কম হলে লো প্রেশার বলে বিবেচিত হবে। একজন ‍সুস্থ মানুষের মানবদেহে স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা ১২০/৮০ mmHG।

বয়সভেদে ও লিঙ্গভেদে প্রেশার কেমন হওয়া উচিতঃ পুরুষ ও মহিলার বয়সভেদে প্রেশার সামান্য কম-বেশি হয়। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাকঃ-

পুরুষের ক্ষেত্রেঃ 

  • ২১-৩০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১১৯/৭০ হওয়া উচিত।
  • ৩১-৪০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১২০/৭০ হওয়া উচিত।
  • ৪১-৫০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১২৪/৭৭ হওয়া উচিত।
  • ৫১-৬০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১২৫/৭৭ হওয়া উচিত।
  • ৬১-৬৫ বা তার বেশি হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১৩৩/৬৮ হওয়া উচিত।

মহিলাদের ক্ষেত্রেঃ

  • ২১-৩০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১১০/৬৮ হওয়া উচিত।
  • ৩১-৪০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ-  ১১০/৭০ হওয়া উচিত।
  • ৪১-৫০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১২২/৭৪ হওয়া উচিত।
  • ৫১-৬০ হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১২২/৭৪ হওয়া উচিত।
  • ৬১-৬৫ বা তার বেশি হলে রক্তচাপের মাত্রাঃ- ১৩৩/৬৯ হওয়া উচিত।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ  


হাই প্রেসারের যেমন লক্ষণ রয়েছে অনুরুপভাবে লো প্রেসারের কিছু লক্ষণ রয়েছে। প্রেসার হাই অথবা লো দুটো হলেই কিন্তু বিপদজ্জনক। এজন্য প্রেসারের রোগীদের তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ লো প্রেসারর কারণে কিডনি, ফুসফুস, ব্রেইন, হার্ট এর উপর গিয়ে প্রভাব পড়ে। তাই লো প্রেসার থেকে বাঁচতে লো প্রেসারের লক্ষণ গুলো আমাদের জানা দরকার। চলুন তাহলে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ-
 
  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব
  • চোখে না দেখা বা ঝাপসা দেখা
  • শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা।
  • অস্বাভাবিক হ্রদ কম্পন অনুভূতি হওয়া।
  • প্রস্রাব কম হওয়া।
  • ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগা।
  • দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।
  • মাথা ঘুরে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া।
  • মাথা হালকা অনুভব হওয়া।
  • শরীরের অঙ্গ (হাত, পা) ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • বুক ধড়ফড় করা
  • শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হওয়া।
  • ত্বক ম্লান হয়ে যাওয়া।

এই লক্ষণগুলো যদি আপনার মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে ধরে নিতে পারেন ইহা লো প্রেশারের কারণে হচ্ছে। লো প্রেশার হলে দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নতুবা ইহা প্রাণনাশের কারণ হতে পারে। আশা করি আলোচনা থেকে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।

লো প্রেসার কেন হয় 


রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রক্তচাপ থেকে কমে গেলে লো প্রেসার বলে গণ্য হবে। বিভিন্ন কারণে লো প্রেসারজনিত সমস্যা হতে পারে। আমরা যদি লো প্রেসার হওয়ার কারণ বা লো প্রেসার কেন হয় তা যদি উদঘাটন করতে পারি তবেই আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। আমরা যদি কারণ অনুসন্ধান করতে না পারি তাহলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো না। লো প্রেসার কেন হয় সে বিষয়ে আমাদের জানা দরকার চলুন জেনে নেওয়া যাক।

  • মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে লো প্রেসার হয়ে থাকে।
  • শরীরে পানির ঘাটতি বা পানি শূন্যতা দেখা দিলে।
  • শরীরে কুলায় না অর্থ্যাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে।
  • সময়মতো খাবার না খেলে বা খাবারের প্রতি অনীহা।
  • শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে।
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব লো প্রেসারের জন্য দায়ী।
  • অতিরিক্ত ডায়রিয়া বা বদহজম হলে বা অতিরিক্ত বমি হলে।
  • শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে লো প্রেসার জেঁকে বসে।
  • গর্ভাবস্থায় নারীদের লো প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • হরমোনজনিত কারণে বা হরমোনের ভারসাম্য হারিয়ে গেলে লো প্রেসার দেখা দেয়।
  • নার্ভের সমস্যা থাকলে এই ধরণের সমস্যা হয়।
  • কোন রোগে দীর্ঘদিন যাবত আক্রান্ত হলে।
  • গ্যাস্ট্রিকের কারণেও লো প্রেসার হয়ে থাকে।
  • দীর্ঘদিন সময় যাবত ব্যায়াম করলে লো প্রেসার হতে পারে।
  • যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লো প্রেসার দেখা দিতে পারে।

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে 


নিম্ন রক্তচাপকে সংক্ষেপে বলা হয় লো প্রেশার। মানুষের দেহে স্বাভাবিক রক্তচাপের আদর্শ মান হল ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। রক্তচাপের মাত্রা ৯০/৬০ মিলিমিটার মার্কারি নিচে নেমে আসলে লো প্রেশার বলে বিবেচিত হবে। হাই প্রেশার যেমন ক্ষতিকর লো প্রেশার তেমনিই ক্ষতিকর। তাই লো প্রেশার হলে প্রেশার বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। লো প্রেশার হলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ক্লান্তিভাব, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

  • ডিম লো প্রেশার রোগীদের জন্য খুবই উপকারি। কারণ ডিম ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস।
  • যেসকল খাবারে ভিটামিন বি ১২, সি, ফলেট, আয়রন রয়েছে সে সকল খাবার গুলো বেছে বেছে খেতে হবে। কারণ, এই খাবার গুলো রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে।
  • দুধ, শরবত, কফি, স্যুপ, ফলের রস, ঘোল বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • যেসকল খাবারে ভিটামিন সি আছে যেমনঃ লেবু, কমলা, মাল্টা সেই খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • ডাবের পানি রক্তচাপ বাড়ায়। কারণ এতে সোডিয়াম রয়েছে। 
  • যেসকল খাবার আয়রন রয়েছে সেই খাবার গুলো খেতে হবে। যেমনঃ গরুর মাংস, কলিজা, খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, পালংশাক, কচুশাক, শুকনো ফল, ডাল, সিমের বিচি, তিসির বিচি ইত্যাদি আয়রনের ভালো উৎস।
  • যাদের প্রেশার একবারে লো তারা ডার্ক চকলেট খান।
  • অতিরিক্ত জ্বর, ডায়রিয়ার কারণে প্রেশার কমে যায় তখন সেক্ষেত্রে স্যালাইন খেলে কাজে আসবে।
  • প্রেশার কমে গেলে আঙ্গুরের রস খান। এটাও উপকারে আসবে।
  • এমনিতে লবণ বেশি খাওয়া যায় না। লো প্রেশারের কারণে যদি মাথা ঘোরে তখন পানিতে লবণ ছিটিয়ে নূনতা পানি খান। লো প্রেশার রোগীদের ডায়েটে নূনের পরিমাণ বেশি রাখুন।
  • লো প্রেশার জনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করুন।
  • কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম এই গুলো খাদ্য তালিকা রাখু। লো প্রেশার জনিত সমস্যায় উপকার মেলে।
  • বিটে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে বিটের জুস খান।
  • যেকোন ধরণের স্যুপ হতে পারে চিকেন, হতে পারে বিফ, সবজি, ডাল আরও অন্যান্য। স্যুপে সস রাখলে ভাল হয়।কারণ সসে প্রচুর সোডিয়াম পাওয়া যায়।
  • মাখনে প্রচুর সোডিয়াম থাকে। আপনি চাইলে মাখন দিয়ে বাদাম ভেজে খেতে পারেন।
  • নোনতা বিস্কুট, পনির, আচারে প্রচুর সোডিয়াম রয়েছে। লো প্রেশারের সমস্যা থাকলে খাদ্য তালিকায় এগুলো রাখুন।
  • কড়া ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় লো প্রেশারের সমস্যা দূর করে।যেমনঃ হট কফি, হট চকলেট।
  • রাতে ৫/৭/১০ টি কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে খান।

চা খেলে কি প্রেসার বাড়ে

 
আমরা কম-বেশি সকলে চা পান করি। পানির পরে জনপ্রিয় পানীয়ও হলো চা। যারা প্রেসারের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত তাদের অনেকেরই প্রশ্ন চা খেলে কি প্রেসার বাড়ে ?  উত্তরঃ না, চা খেলে প্রেসার বাড়ে না বরং প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রেসার কখন বাড়ে ?  যখন রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে যায়। চা রক্তনালী সংকীর্ণ হতে দেয় না। চা রক্তনালীকে প্রশস্ত করে। রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।চা তে রয়েছে পলিফেনল উপাদান। যা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে। চা তে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খুবই উপকারি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি ভীষণ উপকারি। কফি রক্তনালীকে সংকুচিত করে দেয় যার কারণে প্রেসার বেড়ে যায়। তাই আপনার যদি প্রেসারের সমস্যা থাকে তাহলে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। চা তে থাকা কিউএরটেসিন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

শেষ কথা


সম্মানিত পাঠক পুরো পোস্ট জুড়ে লো প্রেসার নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। আরও যেসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলোঃ- লো প্রেসার কত | লো প্রেসার কত থেকে কত, হাই প্রেসার কত, নরমাল প্রেসার কত থাকা উচিত, প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ, লো প্রেসার কেন হয়, প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে, চা খেলে কি প্রেসার বাড়ে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই রকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পেতে এই লিংকে চাপ দিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url