পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম - কি খেলে পায়খানা হবে

পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। খাবার গ্রহণের পর শরীরের যেসকল বর্জ্য তৈরি হয় তা যদি বের না হয় শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যাসিডিটিসহ আরও অন্যান্য। সম্মানিত পাঠক এই পোস্টে পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম নিয়ে আলোচনা করা হবে। সঙ্গে কি খেলে পায়খানা হবে সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, মুখরোচক খাবার খাওয়ার কারণে পেটে নানান রকমের সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া। আপনি যদি পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম ও কি খেলে পায়খানা হবে তা না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম - কি খেলে পায়খানা হবে

জীবনকে আনন্দময় করতে শরীর সুস্থ রাখার কোন বিকল্প নেই। এজন্য শরীরকে সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরী। পাশাপাশি খাবার যেন হজম হয় ও শরীর থেকে বর্জ্য যেন নিয়মিত ক্লিয়ার হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম, কি খেলে পায়খানা হবে সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম

কি খেলে পায়খানা হবে | পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে | পায়খানা নরম হওয়ার উপায় | পায়খানা কষা থেকে মুক্তির উপায়

শরীর সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত টয়লেট হতে হবে। নিয়মিত টয়লেট না হলে শরীর থেকে বর্জ্য বের হতে পারবে না। সেই বর্জ্য গুলো শরীরে জমে গিয়ে গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিবে। এই সমস্যা দীর্ঘদিন হতে থাকলে সেটির প্রভাব কোলনের উপর গিয়ে পড়বে। এক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন ২/৩ লিটার পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি জোর দিতে হবে। যাদের পায়খানা হচ্ছে না, কি খেলে পায়খানা হবে সেই বিষয়ে আমরা এখন জানবো।

প্রোবায়োটিকঃ এটি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পাকস্থলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, হজমশক্তি ঠিক রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। পায়খানা ক্লিয়ার করে। প্রোবায়োটিক হলো এক ধরণের জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া যেগুলো পাওয়া দই, আচার  এই সকল খাবারের মধ্যে।

পানিঃ পানি যখন খাবেন তখন শরীরের ভেতরটা আর্দ্র থাকে। যার কারণে সহজে পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে যায়। টয়লেট ক্লিয়ার রাখার অন্যতম সহজ উপায় হলো বেশি বেশি পানি পান করা। প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ২/৩ লিটার পানি পান করা দরকার। পানি ঠিকমতো পান না করলে টয়লেট কষা হয়ে যায়। যার কারণে সহজে টয়লেট হয় না।

ফলঃ যেসকল ফলে ফাইবার রয়েছে যেমনঃ নাশপাতি, আপেল, কমলা এই সকল খাবার গুলো পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এই সকলে ফলে ফাইবার, পানি, ফ্রুক্টোজ ও সরবিটল রয়েছে। এই খাবার গুলো নিয়মিত খেলে টয়লেট ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

ডালঃ বাঙালি সমাজে অতি পরিচিত একটি খাবার ডাল। আপনি কি জানেন এই ডালে কত উপকারিতা রয়েছে ? এই ডাল যদি আপনি নিয়মিত খান তাহলে এটি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে, পেট রাখবে পরিষ্কার। কেননা, ডালে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।

সবুজ-শাকসবজিঃ সবুজ-শাকসবজির গুণাগুণের অন্ত নেই। নিয়মিত শাক-সবজি খেলে এটি আপনার পাকস্থলীকে ঠিক রাখবে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে। বদহজম দূর করে পেট রাখবে পরিষ্কার।

ইসবগুলের ভুসিঃ ইসবগুলের ভুসি খেলে সহজে পেট নরম হয়। পেট হবে পরিষ্কার। রাতে ঘুমানোর আগে বা সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খান এতে উপকার পাওয়া যাবে। তবে ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রতিদিন প্রচুর পান করতে হবে।

তোকমাঃ পানিতে, ফল বা লেবুর শরবতে ঘন্টাখানেকের মতো ভিজিয়ে রাখুন। এরপর খান তাতেই উপকার পাওয়া যাবে। ইহা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে পেট রাখবে পরিষ্কার।

কলাঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট রাখবে পরিষ্কার। ইহা পায়খানা ক্লিয়ার করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

অন্যান্য ফল ও শাকসবজিঃ মৌসুমী ফল গুলো খেলে আঁশের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তাছাড়া অন্যান্য শাকসবজি যেমনঃ পালংশাক, পুইশাক, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, ঢেড়শ, পেঁপে, লাউ, শসা এই খাবার গুলো খেতে পারেন। যেসকল খাবার মল নরম করে সেই সকল খাবার খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।

অন্যান্য কাজঃ মানসিক দুশ্চিন্তা না করা, ঔষধের ( আয়রন ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ ) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা টয়লেট কষা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা গুলো হয়ে থাকে।

সতর্কবার্তাঃ যাদের টয়লেট হচ্ছে না তারা লাল মাংস যেমন (গরু, ছাগল ) খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার, মুখরোচক খাবার থেকে দূরে থাকুন। উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার পরেও যদি টয়লেট ক্লিয়ার না হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম | পায়খানা না হলে কি ঔষধ

শুরুতে বলে রাখা ভাল, যেকোন ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। একটি রোগের জন্য একাধিক কোম্পানির ঔষধ পাওয়া যায়। সব ওষধ সবার জন্য উপযুক্ত নয়। প্রত্যেকটি ওষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার আপনার শরীর পরীক্ষা করে কোন ওষধটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে তা জানিয়ে দিবে। অনেকে গুগলে সার্চ করে জানতে চায় পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম | পায়খানা না হলে কি ঔষধ খাবে সেই বিষয়ে। ্ওষুধ গুলো হলোঃ

  • ডুরালাক্স (Duralax)
  • ডুলকোলাক্স (Dulcolax)
  • ল্যাকটুলোজ (Lactulose)
  • সেনা ট্যাবলেট (Senna Tablets)
  • বিসাকোডিল (Bisacodyl)
  • Ezyfeel Tablet 
  • Laxavin Tablet
  • Glysup Tablet
  • Ezylife 10 Tablet
  • লুবিগাট ৮ ক্যাপসুল
  • লুবিলাক্স ক্যাপসুল

ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক এই ওষুধ গুলো সেবন করলে কষা টয়লেট নরম হবে। পেট দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই ট্যাবলেটগুলো দিনে কত বার খাবেন, কিভাবে খাবেন, ট্যাবলেটগুলো খাওয়ার আগে খাবেন নাকি পরে খাবেন এইসব ডাক্তার আপনাকে জানিয়ে দিবে। এই ওষুধ গুলো যেকোন ফার্মেসীতে স্বল্পমূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। আলোচনার মূল টপিকস ছিলো পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম আশা করি তা জানতে পারছেন।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম

নিয়মিত শরীরচর্চা না করার কারণে টয়লেট কষা হয়ে যায় বা পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। যারা কায়িক পরিশ্রম রিলেটেড কোন কাজ করে না তাদের এই সমস্যা গুলো হতে দেখা যায়। এজন্য এ ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই। সবচেয়ে সহজ একটি ব্যায়াম হলো হাঁটা। যাদের হাঁটার অভ্যাস নেই তারা এক বেলা (হয় সকাল না হয় বিকাল) করে হাঁটুন অন্তত ১৫-২০ মিনিট। যখন প্রতিদিন হাঁটা আপনার জন্য সহজ কাজ হয়ে যাবে তখন চেষ্টা করবেন দিনে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল হাঁটার জন্য। হাঁটা-হাঁটি ছাড়াও আরও অন্যান্য ব্যায়াম রয়েছে যেমনঃ খেলাধুলা (ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, হকি, সাইকেলিং, সাঁতার কাটা, দড়িলাফ) এই ধরনের খেলাধুলা সম্পর্কিত ব্যায়াম গুলো আপনার উপকারে দিবে। ঘরের কায়িক পরিশ্রম কাজ গুলো যদি করা যায় তাহলে এগুলোও কাজে দিবে। যা আপনার শরীরকে সচল রাখবে, কষা টয়লেট নরম করবে। আশা করি আলোচনা থেকে পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম গুলো জানতে পারছেন।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায় | পায়খানা পরিষ্কার করার সহজ উপায়

যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভূগছেন সহজে পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছে না তাদের জন্য এই প্যারাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। শুধু ঔষধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চললে কষা টয়লেট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছে না এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চললে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায় | পায়খানা পরিষ্কার করার সহজ উপায় গুলো হলোঃ

  • শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে মল শক্ত হয়ে যায় যার কারণে সহজে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। এজন্য বেশি বেশি পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • যেসকল খাবার খাওয়ার কারণে মল শক্ত হয়ে যায় বা পায়খানা ক্লিয়ার হয় না সে সকল খাবার ‍গুলো পরিহার করতে হবে। যেমনঃ কাঁচা কলা, ভাজাপোড়া, লাল মাংস (গরু, খাসি), ফাস্ডফুড, পাস্তা, চকলেট, চিপস, পিৎজা, কফি, প্রচুর চিনিযুক্ত খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  • যেসকল খাবার মল নরম রাখে সেই সকল খাবার গুলো বেশি বেশি খেতে হবে। যেমনঃ পাঁকা কলা, কলমিশাক, পালংশাক, ক্যাস্টর অয়েল, কমলা, গমের আটা, নাশপাতি, ইসবগুলের ভুসি, লেবু, মধু, আঙ্গুর, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, শসা, দই, আচার, ডাল, তোকমা, বিভিন্ন মৌসুমী ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ফল খেতে না পারলে ফলের রস খান যেমনঃ বেলের শরবত, আখের রস, আনারসের শরবত ইত্যাদি। এই খাবার গুলো পায়খানা ক্লিয়ার করবে। আরো জানতে এই লিংকে চাপ দিন।
  • দীর্ঘসময় ধরে আয়রন বা ক্যালসিয়ামের বড়ি খেলে, ব্যাথানাশক ঔষধ খেলে সেই গুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারণে মল শক্ত হয়ে যায়। যাদের পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছে না তারা এই ওষধগুলো খাওয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখুন।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে। যদি শরীরচর্চা না করতে পারেন তাহলে প্রতিদিন ২০ মিনিট করে হাঁটুন। এটি শরীরকে সচল রাখবে। এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • যখনই টয়লেট লাগবে সঙ্গে সঙ্গে টয়লেট করুন। টয়লেট চেপে রাখবেন না।
  • খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। যেমনঃ দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক এই পোস্টে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি টপিকস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনাটি আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অতি আগ্রহ ও উৎসাহের সহিত করা হয়েছে। এই পোস্টে কি খেলে পায়খানা হবে | পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে | পায়খানা নরম হওয়ার উপায় | পায়খানা কষা থেকে মুক্তির উপায়, পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম | পায়খানা না হলে কি ঔষধ, পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম, পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায় | পায়খানা পরিষ্কার করার সহজ উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি আশা করি আপনাদের উপকৃত করেছে। এই রকম স্বাস্থ্য সম্পর্কি আরো পোস্ট পেতে এই লিংকে চাপ দিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url