মিসওয়াক করার নিয়ম - মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
নবী (সাঃ) এর দৈনন্দিন আমলের মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো মিসওয়াক করা। নবী (সাঃ) মিসওয়াক করতে পছন্দ করতেন। এমনকি মৃত্যুর আগ মূহুর্তেও তিনি মিসওয়াক করেছেন। অথচ মুসলমানদের কাছে এই আমলটি আজ অবহেলিত। প্রিয় পাঠক এই পোস্টে মিসওয়াক করার নিয়ম, মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আপনি যদি মিসওয়াক করার নিয়ম, মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক, তাই আমাদের অবশ্যই মিসওয়াক করার নিয়ম জানতে হবে। পাশাপাশি আমাদের মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা গুলোও জানতে হবে। যাতে আমরা মিসওয়াকের প্রতি আগ্রহী হই এবং নবী (সাঃ) এই দৈনন্দিন আমলটা যেন আমরা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মিসওয়াক করার নিয়ম
- মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
- মিসওয়াক করার নিয়ম
- কোন গাছের মেসওয়াক ভালো
- মেসওয়াকের হাদিস
- মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত
- মিসওয়াকের উপকারিতা
- মেসওয়াক করার দোয়া
- মিসওয়াকের ফজিলত হাদিস
- উপসংহার
মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
মিসওয়াকে এমন কিছু উপকারিতা আছে যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। নবী (সাঃ) জীবনের শেষ আমল ছিল মিসওয়াক। মিসওয়াক নবী (সাঃ) অনেক পছন্দের একটি আমল ছিল। নবী (সাঃ) মিসওয়াক করতে পছন্দ করতেন। নবী (সাঃ) আমাদেরকে যে মিসওয়াকের শিক্ষা দিয়েছেন তা আজ বৈজ্ঞানিকভাবে সমাদৃত। এখন পুরো পোস্ট জুড়ে মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষাঃ আমরা প্রতিনিয়ত খাবার খেয়ে থাকি। এতে খাবারের ছোট ছোট কণা দাঁতের ফাকে আটকে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে কুলি করলেও সেগুলো দূর হয় না। এতে দাঁতের ফাকে জমে থাকা ছোট ছোট কণা থেকে নানান রোগের সম্ভাবনা থাকে। মিসওয়াক করলে দাঁতের ফাকে জমে থাকা ছোট ছোট কণাগুলো দূর হয় ও রোগের সংক্রমণের আশংকা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষাঃ দাঁতের সাথে চোখের একটি নিবিড় সংযোগ রয়েছে। তাই কোন কারণে দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে চোখের সমস্যাও সৃষ্টি হয়। এতে চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়। দাঁতের অপরিচ্ছন্নতার কারণে নানান রোগের সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়মিত মিসওয়াক করার কারণে এ ধরণের রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মুখের ঘা প্রতিরোধঃ মুখে লেগে থাকা জীবাণু, দূর্গন্ধ থেকে মুখের ঘা সৃষ্টি হয়। এতে মুখ জ্বালাতন করে। খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। মুখের জীবাণু ও দুর্গন্ধ দূর করতে নিয়মিত মিসওয়াক করা জরুরী।
টনসিল প্রতিরোধঃ টনসিলের সমস্যা এখন অহরহ। যেকোন বয়সের মানুষের টনসিল হয়ে থাকে। যারা নিয়মিত মিসওয়াক করে তাদের টনসিল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যাদের টনসিল রয়েছে তারা মিসওয়াক করলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে।
মিসওয়াক জীবাণু ধ্বংসকারীঃ মুখে এমন কিছু জীবাণু থাকে যা ব্রাশ ও পেস্ট দ্বারা দূর করা সম্ভব নয়। মিসওয়াক জীবাণুর বিরুদ্ধে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। মিসওয়াক মুখের গভীরে লুকিয়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে। তাই মিসওয়াককারী বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে।
কানের সমস্যা প্রতিরোধঃ যাদের কানের সমস্যা রয়েছে তাদের কান দিয়ে পুঁজ বের হয়, কানের ব্যথায় অস্থির হয়ে যায়। অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায়, দাঁত ও মাড়ির সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে। দাঁতের চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত মিসওয়াক করলে এই কানের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পাকস্থলী সমস্যা সমাধানঃ মুখে, দাঁতে, মাড়িতে লেগে থাকা জীবাণু, খাবার খাওয়ার সময় পাকস্থলীতে চলে যায়। ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত মিসওয়াক করা জরুরী।
কফ-কাশি দূরঃ যাদের কফ লেগে থাকে, নিয়মিত মিসওয়াক করার কারণে কফের সমস্যা দূর হয়ে যায়। সর্দি,কাশির জন্য মিসওয়াক অত্যন্ত জরুরী।
মিসওয়াক করার নিয়ম
গুগলে আলোচিত একটি টপিকস হচ্ছে মিসওয়াক করার নিয়ম। বহুত পাঠক মিসওয়াক করার নিয়ম জানতে গুগলে অনুসন্ধান করে। মিসওয়াক করার নিয়ম খুবই সহজ এখানে কঠিন কিছু নেই। আপনি এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়লে মিসওয়াক করার নিয়ম জেনে যাবেন।
মিসওয়াক কেমন হতে হবেঃ মিসওয়াক এক বিঘত লম্বা ও আঙ্গুলের মতো মোটা হতে হবে। এতে মিসওয়াক করতে সুবিধা হয়।
মিসওয়াকের ডাল বা শিকড় নির্বাচনঃ মিসওয়াক ডাল বা শিকড় দুটো দিয়েই করা যায়। মিসওয়াকের ডাল বা শিকড় হতে হবে নরম ও কাঁচা এতে মিসওয়াক করতে সুবিধা হয়।
কোন ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা হয়ঃ যে সকল গাছের স্বাদ তিক্ত সেই সকল গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা হয়। আপনি নিম গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতে পারেন। এতে নিমের উপকারিতা পাওয়া যায়। আর পিলু গাছের মিসওয়াক করলে দাঁতের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ হবে। নবী (সাঃ) জয়তুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতেন। জয়তুন গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম।
মিসওয়াক করার নিয়ম বা সুন্নত পদ্ধতিঃ যা আমাদের সকলের জানা দরকার। যেগুলো হলোঃ
- প্রথমে মিসওয়াক ভালো করে ভিজিয়ে নেওয়া।
- মিসওয়াক ডান হাতে ধরুন। কারণ এটা মুস্তাহাব। কনিষ্ঠ আঙ্গুল মিসওয়াকে নিচে ও বৃদ্ধ আঙ্গুল মিসওয়াকের সামনে উপরের দিকে রাখুন। আর বাকী তিন আঙ্গুল (তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা) মিসওয়াকের উপর রাখুন।
- বিসমিল্লাহ বলে মিসওয়াক করা আরম্ব করুন।
- ডান দিক থেকে মিসওয়াক করা শুরু করুন। দাঁতের প্রস্থে ও জিহবায় লম্বালম্বি করে মিসওয়াক করুন।
কোন গাছের মেসওয়াক ভালো
মেসওয়াকের ব্যবহৃত উপকরণ হলো গাছের ডাল বা শিকড়। এখন প্রশ্ন হলো কোন গাছের মেসওয়াক ভালো হবে ? নবী (সাঃ) কোন গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন ? যেসকল গাছের স্বাদ তিতা সে সকল গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা উত্তম। নবী (সাঃ) জয়তুনের ডাল বা খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করতেন। শুরুতে বলেছি যেসকল গাছের স্বাদ তিতা সেগুলোর ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা ভালো। নিম গাছের স্বাদ তিক্ত হওয়ায় আপনি নিমের ডালের মেসওয়াক করতে পারেন। এতে নিমের বাড়তি ফায়দা পাওয়া যায়। আপনার দাঁতে যদি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব থাকে তাহলে পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারেন। এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ হবে এবং মস্তিষ্ক সতেজ থাকবে।
মেসওয়াকের ডাল কেমন হতে হবে ? মেসওয়াকের ডাল কাঁচা ও নরম হতে হবে। মেসওয়াকটি আঙ্গুলের মতো মোটা হতে হবে এবং লম্বায় এক বিঘত হতে হবে। যাতে ধরতে সুবিধা হয়। আশা করি আলোচনা থেকে আপনি অবগত হয়েছেন জয়তুনের ডাল, খেজুরের ডাল, নিমের ডালের মেসওয়াক করা যায়।
মেসওয়াকের হাদিস
মেসওয়াক নবী (সাঃ) অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি দৈনন্দিন সুন্নাহ। যারা মেসওয়াক করে আল্লাহ তাদের অত্যন্ত পছন্দ করেন। নবী (সাঃ) জীবনের শেষ সুন্নাহ ছিলো এই মেসওয়াক। আজকে আমরা এই মেসওয়াককে দাঁত ব্রাশের মতো চিন্তা করি। আজকে এই সুন্নাহটি মুসলিম সমাজ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরার জন্য আমরা আজকে মেসওয়াকের হাদিস গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
মেসওয়াকের হাদিস-১ঃ নবী (সাঃ) বলেছেন, যখনই জিবরাইল (আ.) আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতেন। এতে আমি আশঙ্কাবোধ করলাম যে (মিসওয়াক করে) আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেব (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২২২৬৯)।
মেসওয়াকের হাদিস-২ঃ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন তখনই অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন ’ (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত, হাদিস নং ৩৫২)।
মেসওয়াকের হাদিস-৩ঃ মহানবী (সা.) বলেছেন, নবী-রাসুলদের সুন্নত হলো চারটি। যথা—১. লজ্জা করা, অন্য বর্ণনায় খতনা করা, ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. বিয়ে করা, (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫১)।
মেসওয়াকের হাদিস-৪ঃ মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, মিসওয়াক হলো মুখ পরিষ্কার করার উপকরণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় (আহমদ, নাসায়ি, মিশকাত হাদিস নং ৩৫০)।
মেসওয়াকের হাদিস-৫ঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেছেন, যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তবে অবশ্যই তাদের এশার নামাজ বিলম্ব করার এবং প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম (বুখারি হাদিস নং ৮৮৭; মুসলিম হাদিস নং ২৫২)।
মেসওয়াকের হাদিস-৬ঃ হুজায়ফা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা প্রথমে নিজের মুখ পরিষ্কার করতেন (সহিহ বুখারি, মুসলিম, ৩৪৮)।
মেসওয়াকের হাদিস-৭ঃ ঘুম থেকে উঠেই বা তাহাজ্জুদ আদায়ের আগে: হুজাইফা (রা.)–র বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের বেলা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে মিসওয়াকে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। (বুখারি, হাদিস: ১,১৩৬; মুসলিম, হাদিস: ৫১৬)।
মেসওয়াকের হাদিস-৮ঃ আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, প্রথমে মিসওয়াক করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৩)।
মেসওয়াকের হাদিস-৯ঃ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর সময় শয্যার পাশে মিসওয়াক রেখে ঘুমাতেন। যখনই ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, প্রথমেই তিনি মিসওয়াক করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৯৬৯)।
মেসওয়াকের হাদিস-১০ঃ আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘দিনে বা রাতে যখনই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, অজু করার আগে মিসওয়াক করে নিতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৪,৯০০)।
মেসওয়াকের হাদিস-১১ঃ নামাজ ও অজুর সময়: রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর আগে মিসওয়াক করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
মেসওয়াকের হাদিস-১২ঃ আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বরাতে একটি হাদিসে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমার দিন গোসল ও মিসওয়াক করা কর্তব্য এবং সে সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধিও ব্যবহার করবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৮৪৫)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৩ঃ নবিজি বলেছেন, মুমিন মুসলমানের প্রকৃতিগত কাজসমূহে একটি হলো- মেসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার রাখা।’ (মুসলিম, মিশকাত)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৪ঃ অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন বা মেসওয়াক করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে’ (জামে)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৫ঃহজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মেসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৬ঃ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেসওয়াক এত প্রিয় ছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে দেওয়া দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করেছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৭ঃ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করার ক্ষেত্রে তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন বা মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। (মুসনাদে আহমাদ)।
মেসওয়াকের হাদিস-১৮ঃ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মেসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)।
হাদিস গুলো কোড করা হয়েছেঃ
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। যদিও এই আমলটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। তাই এই আমলটি আবার জিন্দা করার জন্য এর গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি বেশি প্রচার করা দরকার। আপনি যদি মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত জানেন তবেই তো আপনি আমল করতে পারবেন।
হাদিসঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেছেন, যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তবে অবশ্যই তাদের এশার নামাজ বিলম্ব করার এবং প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম (বুখারি হাদিস নং ৮৮৭; মুসলিম হাদিস নং ২৫২)।
হাদিসঃ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেসওয়াক এত প্রিয় ছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে দেওয়া দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করেছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)।
উপরে ২টি বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা গেল, আমরা মিসওয়াককে যত সাধারণ ও সহজ মনে করি, নবী (সাঃ) মিসওয়াককে তত সাধারণ ও সহজ মনে করতেন না তিনি বিষয়টি (মিসওয়াকের) অতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতেন। মিসওয়াকের হাদিস গুলো উপরের প্যারায় অতি যত্নসহকারে তুলে ধরা হয়েছে আপনি সেগুরো পড়ে নিতে পারেন। তাহলে চলুন মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত গুলো ধারাবাহিক ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
- মিসওয়াকের প্রথম ফজিলত এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
- ইহা আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, মুখ পরিষ্কার করে।
- ঈমানী মৃত্যু নসিব হয়।
- ঈমানকে শানিত করা যায়। ঈমানের ধার বৃদ্ধি করা যায়।
- পৃথিবী থেকে যত নবী-রাসূল গত হয়ে গেছেন তাদের সকলের একটি সাধারণ সুন্নাহ ছিলো মিসওয়াক।
- মিসওয়াককারী ব্যাক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তখন ফেরেশতারা ঐ মিসওয়াককারী ব্যাক্তির কাছাকাছি অবস্থান করে, ঐ ব্যাক্তিকে অনুকরণ করে ও অনুসরণ করে।
- মিসওয়াকের আমল করার কারণে আমলনামায় সওয়াব যুক্ত হয়।
- ইবাদতে স্বাদ পাওয়া যায়।
- শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
- বিলুপ্ত প্রায় এই আমল পুনরায় জিন্দা করার জন্য জান্নাতের যাওয়ার পথ গুলো আপনার জন্য সহজ হবে। নবী (সাঃ) জীবনের শেষ আমল ছিলো এই মেসওয়াক।
উপরে বর্ণিত মেসওয়াকের হাদিস গুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, নবী (সাঃ) কত গুরুত্বসহকারে মিসওয়াকের আমল করেছেন। এই মিসওয়াকের সব থেকে বড় ফায়দা হলো ঈমানী মৃত্যু নসিব হয় ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
মিসওয়াকের উপকারিতা
ইহকালে বা দুনিয়ার জীবনে মিসওয়াকের উপকারিতা এতটাই বেশি যা জানলে আপনি অবাক হবেন। ব্রাশ ব্যবহার করার পর থেকে আমরা মিসওয়াক করা ভূলেই গেছি। মিসওয়াক করে আপনি যে উপকার পাবেন ব্রাশ ব্যবহার করে আপনি সেই উপকার পাবেন না। কেননা, মিসওয়াকে রয়েছে বিশেষায়িত কিছু গুণাগুণ যেগুলো আমাদের দুনিয়াবী জীবনকে আরোও প্রাণবন্ত করে তুলবে।
- ইহা মুখ পরিষ্কার করে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
- দাঁতে যদি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব থাকে সেটি পূরণ করে।
- দাঁতের সাথে মস্তিষ্কের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত মিসওয়াক করার কারণে মস্তিষ্ক বা ব্রেইন সতেজ থাকে।
- যাদের দাঁতের মাড়ি দূর্বল তাদের উচিত নিয়মিত মিসওয়াক করা। এতে মাড়ি শক্ত হয়।
- মনের ভিতর আধ্যাত্নিক শান্তি অনুভব করা যায়।
- স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- চেহারার সৌন্দর্য বেড়ে যায়।
- পাকস্থলী জীবাণু মুক্ত হয়।
- শরীর থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
- বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
- কফ থাকলে কফ কেটে যাবে।
- প্লেগ রোগ নিরাময় করা যায়।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে মুখে সুগন্ধি যুুক্ত হয়।
মেসওয়াক করার দোয়া
এতক্ষণ আমরা মিসওয়াকের বিভিন্ন বিষয় জানলাম। এখন আমরা জানবো মেসওয়াক করার দোয়া। যেকোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করাটাই উত্তম। আপনি মিসওয়াক করার সময় বিসমিল্লাহ বলে আরম্ব করতে পারেন। মেসওয়াকের আর কোন দোয়া আছে কিনা তা জানতে স্থানীয় আলেমদের কাছে যান।
মিসওয়াকের ফজিলত হাদিস
মিসওয়াকের ফজিলত হাদিস বা হাদিসে মিসওয়াকের ফজিলত নিয়ে কি বলা হয়েছে তা জানতে চান ? তাহলে এই প্যারাটি পড়ুন। এই প্যারাটি পড়লে মিসওয়াকে ফজিলত হাদিস গুলো জানতে পারবেন।
আবু উমামাহ (রা.) বর্ণনায় আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মিসওয়াক করো। কারণ, মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং এটা মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাইল (আ.) এসেছেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। অনেক ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, মিসওয়াক করলে ঈমানী মৃত্যু নসিব হয়।
মিসওয়াককারী ব্যাক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তখন ফেরেশতারা ঐ মিসওয়াককারী ব্যাক্তির কাছাকাছি অবস্থান করে, ঐ ব্যাক্তিকে অনুকরণ করে ও অনুসরণ করে।
ইবাদতে স্বাদ পাওয়া যায়। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
মিসওয়াকে রয়েছে ইহকালে ও পরকালে কল্যাণ। তাছাড়া মিসওয়াক সম্পর্কে হাদিস, মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত, মিসওয়াকের উপকারিতা গুলো উপরের প্যারায় সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আপনি সেগুলো পড়লে মিসওয়াকের ফজিলত গুলো জানতে পারবেন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। এই পোস্টে মিসওয়াকের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, মিসওয়াক করার নিয়ম, কোন গাছের মেসওয়াক ভালো, মেসওয়াকের হাদিস, মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত, মিসওয়াকের উপকারিতা, মেসওয়াক করার দোয়া, মিসওয়াকের ফজিলত হাদিস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আপনি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url