আকিকার নিয়ম ও দোয়া - ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
আকিকা শব্দের বাংলা অর্থ হলো কর্তন করা। আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য সন্তান জন্মদানের ৭ দিনের দিন আকিকা করতে হয়। আকিকা ৭/১৪/২১ দিনের দিন করা যায়। তবে ৭ দিনের দিন আকিকা করা উত্তম। সন্তানের বিপদ আপদ থেকে মুক্তির জন্য আকিকা করতে হয়। এখন আমরা জানবো আকিকার নিয়ম ও দোয়া সাথে আরও জানব ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম সম্পর্কে। আমাদের সমাজে আকিকা নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আপনি যদি আকিকার নিয়ম ও দোয়া, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম না জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
আকিকা দেওয়া এটি একটি মুস্তাহাব আমল। নবী (সাঃ) তার দুই নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আকিকা করেছেন। আকিকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ, সন্তানের বিপদ-আপদ দূর হয়। যেহেতু সন্তান সন্ততি মাতা-পিতার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ামত, তাই মাতা-পিতার উচিত সন্তানের আকিকা করা। চলুন তাহলে আর দেরি না করে আকিকার নিয়ম ও দোয়া, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আকিকার নিয়ম ও দোয়া
- আকিকার নিয়ম ও দোয়া
- ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
- আকিকার জন্য ছাগলের বয়স
- গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
- আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম মিজানুর রহমান
- শেষ কথা
আকিকার নিয়ম ও দোয়া
যারা নতুন বাবা-মা হয়েছেন তাদের আকিকার নিয়ম ও দোয়া জানতে হবে। আকিকা করা এটা মুস্তাহাব আমল। আল্লাহর সন্তুষ্ঠি লাভের উদ্দেশ্যে সন্তান জন্মের পর আকিকা করতে হয়। যাদের সামর্থ্য নেই তারা আকিকা করতে না পারলেও সমস্যা নেই। কেননা, আকিকা ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়, এটি মুস্তাহাব আমল। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিত আকিকা করা। এখন আমরা জানব আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে।
দিন নির্বাচনঃ নবজাতকের বয়স যখন ৭ দিন তখন আকিকা করতে হয়। আকিকা ৭/১৪/২১ তম দিনে করা যায়। উত্তম হলো ৭তম দিনে আকিকা করা।
আকিকার পশু নির্বাচনঃ পুত্র সন্তান হলে ২টি ছাগল, কন্যা সন্তান হলে ১টি ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হয়।
সন্তানের নাম রাখাঃ নবজাতকের সুন্দর সুন্দর নাম রাখতে হবে। আল্লাহর কাছে ২টি পছন্দনীয় নাম হলোঃ আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাহমান। প্রতিটি নামের একটি প্রভাব রয়েছে। কেয়ামতের দিন মানুষের নাম ধরে ডাকা হবে।
মাথা মুন্ডন করাঃ ৭ম দিনে বা যেদিন আকিকা করবেন সেইদিনে মাথা নাড়া করতে হবে। এই চুল গুলো ওজন দিয়ে সেই পরিমাণ রুপা বা টাকা পয়সা দান করে দিবেন।
আকিকার দোয়াঃ আল্লাহুম্মা হাজিহি আকিকাতু ইবনি ফাইন্না দামাহা বিদামিহি ওয়া লাহমিহা বিলাহমিহি ওয়া আজমিহা বিআজমিহি ওয়া জিলদিহা বিজিলদিহি ওয়া শাঅরিহা বিশারিহি, আল্লাহুম্মাজলহা ফিদাআন লিইবনি মিনান-নার।
এই দোয়ার বাংলা অর্থ হলো- হে আল্লাহ, এটা আমার ছেলে/মেয়ের আকিকা। তাই তার রক্ত তার রক্তের বিনিময়ে, তার গোশত তার গোশতের বিনিময়ে, তার হাড্ডি তার হাড্ডির বিনিময়ে, তার চামড়া তার চামড়ার বিনিময়ে। হে আল্লাহ, তাকে আমার ছেলে/মেয়ের বিনিময়ে দোজখ থেকে মুক্তির বিনিময় বানিয়ে দিন।
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
ছাগল দিয়ে আকিকার করা সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি। নবী (সাঃ) তার দুই নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আকিকা ছাগল দিয়ে করেছেন। অনেকে ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জানে না তাদের জন্য এই প্যারাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম হলোঃ
১. পুত্র সন্তান হলে ২টি ছাগল।
২.কন্যা সন্তান হলে ১টি ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হবে।
কারও যদি পুত্র সন্তান হয় তার যদি সামর্থ্য না থাকে ২টি ছাগল দিয়ে আকিকা করার তাহলে সেই ১টি ছাগল দিয়ে আকিকা করতে পারবে। তবে পুত্র সন্তানের বেলায় ২টি ছাগল দিয়ে আকিকার করা উত্তম। তবে কেউ যদি আকিকা করতে না পারে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা, আকিকা করা মুস্তাহাব আমল, এটা ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। আলোচনা থেকে আশা করি ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জানতে পারছেন।
আকিকার জন্য ছাগলের বয়স
আমরা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গিয়েছি ছাগল দিয়ে আকিকা করা উত্তম। এখন প্রশ্ন হলো আকিকার জন্য ছাগলের বয়স কত হবে ? আকিকার মাংস যেহেতু কুরবানি মাংসের মতো তিনভাগে বিভক্ত করা হয় তাহলে আকিকার জন্য আপনাকে এমন ছাগল নির্বাচন করতে হবে যে ছাগল দেখতে সুন্দর, কোন ক্ষত নেই, মাঝারি আকারের, বয়স কমপক্ষে ১ বছর, যে ছাগলের মাংস আত্নীয় স্বজন, গরিব-মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে নিজেরাও স্বাছন্দে খেতে পারবে এই রকম ছাগল নির্বাচন করাটা উত্তম। আকিকার মাংস কাঁচা হাদিয়া দেওয়া যায় অথবা মাংস রান্না করে দাওয়াত করে আত্নীয় স্বজনদের খাওয়ানো যায়। আকিকার জন্য ছাগলের বয়স কত হবে আশা করি তা জানতে পারছেন।
গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
গরু দিয়ে আকিকা করার কোন শক্ত দলিল পাওয়া যায় নি। অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদগণ গরু দিয়ে আকিকা করা জায়েজ বললেও তারা ছাগল দিয়ে আকিকা করার উপর বেশি জোর দিয়েছেন। কেননা, ছাগল দিয়ে আকিকা করা সুন্নাহ সম্মত। যদি কেউ গরু, মহিষ, উট দ্বারা আকিকা করে সেক্ষেত্রে পুত্র সন্তান হলে ২ অংশ, কন্যা সন্তান হলে ১ অংশ। যদি ছেলে-মেয়ে উভয়ের আকিকা একসঙ্গে করে তাহলে বড় পূর্ণ পশু দ্বারা আকিকা করতে পারবে। তবে অধিকাংশের মত, ছাগল দিয়ে আকিকা করা উত্তম। ( নিচের অংশটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন )।
ছাগল দিয়ে আকিকার ব্যাপারে হাদিসে এভাবে পাওয়া যায়ঃ
- আক্বীক্বার সুন্নাতী নিয়ম হ’ল ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা দুম্বা আক্বীক্বা দেওয়া (আবূদাঊদ হা/২৮৩৪; মিশকাত হা/৪১৫২; ছহীহাহ হা/১৬৫৫)।
- আয়েশা (রাঃ)-এর ভাতিজা জন্মগ্রহণ করলে তাকে উট দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলা হ’ল। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। রাসূল (ছাঃ) দু’টি সমপর্যায়ের ছাগল দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলেছেন (বায়হাক্বী হা/১৯০৬৩; ইরওয়া হা/১১৬৬-এর আলোচনা ৪/৩৯০ পৃ.)।
- জনৈক মহিলা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট বলল, অমুকের স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে তার পক্ষ থেকে একটি উট আক্বীক্বা করব। তখন আয়েশা (রাঃ) প্রতিবাদ করে বলেন, না, বরং সুন্নাত হ’ল ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আক্বীক্বা করা (মুসনাদে ইবনু রাহওয়াইহ হা/১০৩৩; ছহীহাহ হা/২৭২০)।
“ইজতেহাদ করে বিশেষজ্ঞ ফকীহগণ বড় পশুর ভাগ দিয়েও আকিকা করা যায় বলে মত প্রকাশ করেছেন। যার ওপর উম্মতের আমলও পাওয়া যায়। তবে, খাসী দিয়ে দিতে পারলে কেউ গরু দিয়ে না দেওয়াই উত্তম। কেননা, গরু দিয়ে আকিকা দেওয়া স্বাভাবিক বিধান নয় ”। সূত্রঃ জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ।
মতামত ও পরামর্শঃ সম্মানিত পাঠক উপরের আলোচনা থেকে আমরা এতটুকু স্পষ্ট হলাম যে, ছাগল দিয়ে আকিকা করা সুন্নাহ সম্মত। ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হয় যা হাদিস থেকে সরাসরি পাওয়া যায়। অন্যদিকে গরু/উট দিয়ে আকিকার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যদিও অনেকে গরু/উট দিয়ে আকিকা করাকে জায়েজ বলেছেন। তবে আমাদের উচিত সুন্নাহ উপর আমল করা। আর বাংলাদেশে যেহেতু ছাগল সহজলভ্য যে কোন সময় ক্রয় করা যায়। ছাগল থাকতে গরু/উট দিয়ে আকিকা না করাটাই ভালো। নবী (সাঃ) সুন্নাহ উপর আমল করা আমাদের কর্তব্য।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম মিজানুর রহমান
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম জানতে অনেকে গুগলে অনুসন্ধান করে। কুরবানির মাংস যেভাবে বন্টন করেন আকিকার মাংসও আপনি সেভাবে বন্টন করতে পারেন। আপনি এই আকিকার মাংস কাঁচা হাদিয়া দিতে পারেন অথবা আত্নীয় স্বজনদের ডেকে দাওয়াত করতে পারেন। যদি আকিকার মাংস বন্টন করতে চান তাহলে কুরবানির মাংসের ন্যায় বন্টন করবেন। আকিকার মাংস ৩ ভাগে ভাগ করবেন। যথাঃ
১. এক ভাগ নিজের জন্য রেখে দিবেন।
২. আরেক ভাগ আত্নীয় স্বজনদের জন্য।
৩. অপর ভাগ গরীব মিসকিনদের জন্য।
শেষ কথা
আকিকার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের খুশির সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ঐক্যের মিলন ঘটে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর হয়। আকিকার মাধ্যমে এক মুসলমানের প্রতি আরেক মুসলমানের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি হয়। তাই মাতা-পিতার উচিত আকিকার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের খুশির সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া। এটি একটি মুস্তাহাব আমল।
সম্মানিত পাঠক, এই পোস্টে আকিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আকিকার নিয়ম ও দোয়া, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম, আকিকার জন্য ছাগলের বয়স, গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম, আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম মিজানুর রহমান ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে। এই রকম আরো ইসলামিক তথ্য পেতে এই লিংকে চাপ দিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url