মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়
অধিকাংশ তালাক রাগের মাথায় হয়ে থাকে। অনেক স্বামী আছে যারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় তালাক দিয়ে বসে। এখন রাগান্বিত অবস্থায় মোবাইলে তালাক দিলে তালাক হবে কিনা এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে। মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। কেননা এই পোস্টে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় সেই বিষয়ে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তালাক সর্বনিকৃষ্ট মানের হালাল। আল্লাহ স্বয়ং নিজেই অপছন্দ করেন। তালাক যেহেতু জীবনঘনিষ্ট একটি ব্যাপার। তাই তালাকের যেকোন মাস’আলার ব্যাপারে একজন হক্কানি ইসলামিক চিন্তাবিদের নিকট থেকে পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ, তালাকের মাস’আলা গুলো অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। আপনার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে হয়তো আমরা উত্তরটা দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু কখন, কোন পরিস্থিতিতে কার সামনে তালাক দিয়েছেন, তালাকের সময় আপনার অবস্থা কি ছিল, তার অবস্থা কি ছিল, কেন তালাক হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত বিষয় ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফতুয়া বোর্ডে গিয়ে অথবা হক্কানী আলেমের কাছে গিয়ে তালাকের বিস্তারিত বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। আপনার পুরো ঘটনা শুনে তারা বলে দিবে তালাক কার্যকর হয়েছে কি হয়নি। চলুন তাহলে কথা দীর্ঘায়িত না করে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় এই প্রশ্নের উত্তরটি জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়
- মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়
- মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয়
- রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবে
- ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে
- একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে
- উপসংহার
মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়
তালাক এমন একটি বিষয় যা মজার ছলে বা সিরিয়াসলি বললে কার্যকর হয়ে যাবে। তালাক ২ ধরণের। ১) তালাকে সরীহ ২) তালাকে কেনায়া।
তালাকে সরীহঃ যদি তালাক শব্দ ব্যবহার করে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয় মজার করে অথবা সিরিয়াসলি তাহলে তালাক হয়ে যাবে।
তালাকে কেনায়াঃ যদি স্বামী তার স্ত্রীকে বলে চলে যাও, তোমার হাতের রান্না খাব না, তোমার চেহারা আমি দেখতে চাই না, তোমার চেহারা দেখা আমার জন্য হারাম এই শব্দ গুলো ব্যবহার করে যদি তালাকের নিয়াত থাকে তাহলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে আর যদি এই শব্দ গুলো ব্যবহার করে তালাকের নিয়াত না থাকে তাহলে তালাক কার্যকর হবে না।
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে একই সঙ্গে মোবাইলে তিন তালাক দেয় বা মোবাইলে তালাক দেয় তাহলে তিন তালাক কার্যকর হবে কিনা। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মতে, একবারে তিন তালাক বললে তিন তালাক হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ইমাম আহমদ ও ইমাম মালেক (রহ.) একবারে তিন তালাক কখনও হয় না, এক বৈঠকে এক তালাক হয়।
প্রিয় পাঠক আপনার তালাকের পুরো ঘটনাটি যেহেতু আমরা জানি না তাই আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে তালাকের পুরো ঘটনাটি লিখিত স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফতুয়া বিভাগে জমা দিবেন। তারাই আপনাকে বলে দিবে আপনার তালাক কার্যকর হয়েছে কি হয় নি।
আশা করি আলোচনা থেকে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় সেই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয়
জ্বি, মেসেজে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। মুখে তালাক দিলে যেমন তালাক পতিত হয়ে যায় ঠিক তেমনি মেসেজে তালাক দিলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন আসতে মেসেজের মাধ্যমে যদি তালাক হয় তাহলে এই তালাক কখন কার্যকর হবে মেসেজ লেখার সঙ্গে সঙ্গে নাকি স্ত্রী কাছে মেসেজ পৌঁছানোর পর ? এটা নির্ভর করবে মেসেজ লেখার ধরণের উপর। যদি লেখার ধরণটা এমন হয় “আমার এই বার্তা তোমার নিকট পৌছানোর পর থেকে তুমি তালাক” তাহলে স্ত্রীর কাছে মেসেজ যাওয়ার পর স্ত্রী তালাক হবে, স্ত্রী মেসেজ পড়ুক বা না পড়ুক।
স্ত্রী কাছে মেসেজ যাওয়ার আগেই যদি স্বামী তালাকের নোটিশটি ডিলিট করে দেয় তাহলে তালাক হবে না। আর যদি লেখার ধরণটি এমন হয় “তুমি তালাক” লেখার সঙ্গে সঙ্গে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। স্ত্রী কাছে মেসেজ যাক বা নাই যাক। আশা করি আলোচনা থেকে মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয় সেই বিষয়ে একটি সূক্ষ ধারণা পেয়েছেন।
রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবে
স্বামী যদি দুষ্টমির ছলে তার স্ত্রীকে বলে “তোমাকে তালাক” তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। বেশিরভাগ মানুষ রাগের কারণে তালাকের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। রাগের মাথায় কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে তালাক হয়ে যাবে। এখন যদি বিষয়টি এরকম হয় যে এমন রাগ হয়েছে কি বলেছে নিজেই তা জানে না এরকম পরিস্থিতিতে কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে তালাক কার্যকর হবে না।
এবার আসি, একই সাথে কেউ যদি তিন তালাক বলে তাহলে তিন তালাক গণ্য হবে কিনা ? অধিকাংশের মত, আপনি একই সঙ্গে এক তালাক বলেন বা পাঁচ তালাক বলেন সেটা এক তালাক হিসেবে বিবেচিত হবে। এক বৈঠকে তিন তালাক দেওয়া বিষয়টি শুদ্ধ নয়। যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিয়ে দেন তাহলে তা এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে। পরবর্তী সময়ে আপনি সংসার জীবন শুরু করতে পারবেন। রাসুল (সাঃ) এর সময় যারা একসাথে তিন তালাক দিয়েছেন, রাসূল (সাঃ) সেটাকে এক তালাক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
যদি এ ধরণের তালাক সংক্রান্ত সমস্যা আপনার হয়ে থাকে এখন কীভাবে কী করতে হবে, কি করণীয় বুঝতে পারছেন না তাহলে আপনাদের কাছে আমাদের পরামর্শ একজন হক্কানী ইসলামিক চিন্তাবিদের শরণাপন্ন হন অথবা ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফতুয়া বিভাগে লিখিত স্টেটমেন্ট এর মাধ্যমে তালাকের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করুন। তারাই আপনাকে বলে কি করতে হবে।
ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে
জ্বি, তালাক হয়ে যাবে। তালাক শব্দ উচ্চারণ করে যদি তালাক দেন তাহলে তালাক হয়ে যাবে। যেমনঃ তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম তাহলে তালাক হয়ে যাবে। বিয়েতে যেমন কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায় ঠিক তেমনি তালাকের বেলায় কেউ যদি তালাক শব্দ উচ্চারণ করে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তাহলে কিন্তু তালাক হয়ে যাবে। এমনকি মজা করে বা রাগ করে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বলে তোমাকে তালাক তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে যে তালাক হবে না বিষয়টি এমন নয়।
তালাক এমন একটি শব্দ যা আপনি যে অবস্থাতেই উচ্চারণ করেন না কেন তালাক পতিত হয়ে যাবে। যদি ভবিষ্যৎত ক্রিয়াকে নির্দেশ করে “আমি তোমাকে তালাক দিব” তাহলে তালাক পতিত হবে না। যদি রাগ এমন অবস্থায় চলে যায় কি বলছে নিজেই তা জানে না তাহলে তালাক পতিত হবে না। আর বাকি সর্বঅবস্থায় তালাক পতিত হয়ে যাবে। সুতারাং তালাকের মতো বিষয়গুলোকে খেলনার জিনিস মনে করবেন না। আশা করি আলোচনা থেকে ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে সেই বিষয়ে একটি সূক্ষ ধারণা পেয়েছেন।
একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে
আমরা অনেক সময়ে আর সহ্য করতে না পেরে বউকে একসাথে তিন তালাক দিয়ে ফেলি। এখন এক সাথে তিন তালাক দিলে তালাক পতিত হবে কিনা ? অথবা একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে ? এরকম নানান প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক হতে থাকে। কোন কারণে যদি স্ত্রী আচরণ অস্বাভাবিক হয় যেমনঃ উশৃঙ্খল জীবন-যাপন, স্বামীর অবাধ্যতা এরকম যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে স্বামীর উচিত হবে তাকে স্নেহের সহিত, যত্নের সহিত বুঝানো, প্রয়োজন স্নেহের সহিত শাসন করা, পরিবারে মুরব্বিদের নিয়ে আলোচনা করা। অর্থ্যাৎ এক কথায় তালাকের মতো সিদ্ধান্তে না যাওয়া। এক সাথে তিন তালাকের বিষয়ে ২টি মত রয়েছে।
প্রথম মত, একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক বলে বিবেচিত হবে। রাসুল (সাঃ) এর সময় যারা একসাথে তিন তালাক দিয়েছেন, রাসূল (সাঃ) সেটাকে এক তালাক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই মতটি অনেক শক্ত। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে এই মতটিকে প্রাধ্যান্য দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় মত, রাসুল (সাঃ) সময়, আবু বকর (রাঃ) শাসন আমলে, ওমর ফারুক (রাঃ) শাসন আমলের প্রথম ২ বছর একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক বলে বিবেচিত হবে, একসাথে তিন তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে ওমর ফারুক লক্ষ্য করেন, মানুষের মাঝে তালাক দেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে এই রকম একটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনি একটি রাষ্ট্রীয় আইন জারি করেন যে “এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে”। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তালাকের প্রবণতা কমিয়ে আনা। তখন এই মতটি প্রাধান্য পায়। কিন্তু সুন্নাহ হিসেবে, রাসুল (সাঃ) এর সময় যারা একসাথে তিন তালাক দিয়েছেন, রাসূল (সাঃ) সেটাকে এক তালাক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই মতটি গ্রহণ করা হয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক পুরো পোস্ট জুড়ে তালাকের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে খুব সূক্ষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি আপনার কাজে এসেছে। এই পোস্টে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়, মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয়, রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবে, ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে, একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন। পুরো পোস্ট জুড়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url