রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় বিস্তারিত জানুন

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এই পবিত্র বন্ধন ছিন্ন হয় তালাকের মাধ্যমে। অনেকে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসে। রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় তা জানতে অনেকে গুগলে অনুসন্ধান করে। আজকের এই আলোচনায় আমরা রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় সেই বিষয়ে খুটিনাটি আলোচনা করবো। অতএব মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়তে থাকুন।

রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

আমাদের এই পুরো আলোচনাটি যদি শেষ পর্যন্ত আপনি পড়েন তাহলে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় এই বিষয়ে আপনি একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

অধিকাংশ তালাক হয় রাগ বা ক্ষোভের কারণে। রাগ বা ক্ষোভ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। তালাক ইসলামে জায়েজ তবে এটি নিকৃষ্টতম হালাল। যা আল্লাহ স্বয়ং নিজেই অপছন্দ করেন। তালাকের পূর্বে  কতগুলো সিস্টেমের কথা বলা হয়েছে। যদি স্ত্রীকে পছন্দ না হয় তাহলে তার বিছানা আলাদা করে দাও, পিঠ দেখাইয়ে ঘুমাও, তাকে মৃদু প্রহার কর, তোমাদের মধ্যে বিচারক নির্ধারণ কর এই পর্বগুলোর পরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে তালাক দিতে পার।

ছেলে সরাসরি তালাক বলে দেওয়ার মাধ্যমে বিবাহের বৈধ বন্ধন ছিহ্ন করতে পারে। অন্যদিকে মেয়েদের ব্যপারে খোলা তালাকের কথা বলা হয়েছে। মেয়ে তালাক চাইতে পারে যেমনঃ তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও। মেয়ে বলতে পারবে না যে আমি তোমাকে তালাক দিলাম। মেয়েদেরকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। স্ত্রী যদি আপনাকে এভাবে বলে আমি তোমাকে তালাক দিলাম তাহলে তালাক কার্যকর হবে না। স্ত্রী তালাক দেওয়ার যে ক্ষমতা আছে সেটা তিনি কিভাবে প্রয়োগ করতে পারেন এগুলো আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়। 

এখন প্রশ্ন হলো রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় ? জ্বি, রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। যদি রাগ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তিনি কি বলেছেন তিনি নিজেও জানেন না তাহলে এমন অবস্থায় তালাক কার্যকর হবে না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আসছে যে একই সঙ্গে তিন তালাক হবে কিনা ? ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মতে, একবারে সে যদি তিন তালাক বলে তাহলে তিন তালাক হয়ে যাবে। ইমাম আহমদ ও ইমাম মালেক (রহ.) মতে, এক বৈঠকে তিন তালাক কখনও হয় না, এক বৈঠকে এক তালাক হয়।

যেহেতু তালাক একটি জীবনঘনিষ্ট বিষয়। কখন কোন পরিস্থিতি কার সামনে আপনি তালাক দিয়েছন, আপনার অবস্থা কি ছিল, তার অবস্থা কি ছিল এগুলো লিখিত আকারে ফতুয়া বিভাগে নিয়ে যেতে হবে। তালাকের অনেক নীতিমালা আছে। যা এই পোস্টের মধ্যে বর্ণনা করা হয় নি। এজন্য ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফতুয়া বিভাগে গিয়ে অথবা একজন হক্কানী আলেমের শরণাপন্ন হয়ে তালাকের বিস্তারিত বিষয়গুলো তুলে ধরে ফতুয়া নিতে হবে। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

কি কি শব্দ বললে তালাক হয়

কি কি শব্দ বললে তালাক হয় এগুলো আমাদের জানা ভীষণ জরুরী। কেননা, তালাক শব্দটাকে আমরা খুবই সাধারণ বিষয় বানিয়ে ফেলেছি। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে একটু মনোমালিন্য হলেই বলে বসে “ আমি সংসার করতে চাই না, আমি মুক্তি চাই, আমি তালাক চাই”। প্রিয় ভাই ও বোন তালাক এমন একটি শব্দ যা মজার ছলে, দুষ্টমির ছলে অথবা সিরিয়াসলি বললে হয়ে যায়। তালাক ২ ধরণের। ১) তালাকে সরীহ ২) তালাকে কেনায়া। আমাদের এখন জানতে হবে তালাকে সরীহ কোনটি, তালাকে কেনায়া কোনটি। চলুন জেনে নিই।

তালাকে সরীহঃ কেউ যদি তালাক শব্দ ব্যবহার করে তালাক দেয় তাহলে তালাক হয়ে যাবে। এটি হলো তালাকে সরীহ। কেউ যদি তালাক শব্দ ব্যবহার করে তালাক দেয় তাহলে নিয়ত করলেও তালাক হবে অনুরুপভাবে নিয়ত না করলেও তালাক হবে।

তালাকে কেনায়াঃ কেউ যদি এভাবে বলে চলে যাও, আমি আর তোমার হাতে রান্না খাব না, তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও, তোমার চেহারা দেখা আমার জন্য হারাম, তোমার চেহারা যেন আমি না দেখি এই শব্দ গুলো উচ্চারণ করে তাহলে এটি তালাকে কেনায়া। কেউ যদি এই শব্দগুলো উচ্চারণ করে তালাকে নিয়াত করে তাহলে তালাক হয়ে যাবে। আর কেউ যদি এই শব্দগুলো উচ্চারণ করে তালাকের নিয়াত না  করে তাহলে তালাক হবে না।

আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট কাজ হলো তালাক। বিয়ে করলে আল্লাহ খুশি হয়, আর তালাক হলে বা সংসার ভাঙলে শয়তান খুশি হয়। তাই প্রিয় পাঠকগণ কোনভাবেই তালাকের চিন্তা মাথায় আনা যাবে না। আশা করি কি কি শব্দ বললে তালাক হয় এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।

কি কি কারণে তালাক হয়

কি কি কারণে তালাক হয় ? কেন ভেঙ্গে স্বামী-স্ত্রী মধুর সম্পর্ক ? তালাক হওয়ার পিছনে কোন কোন বিষয়গুলো দায়ী ? এই সব বিষয়ে যদি আমাদের কাছে সঠিক ধারণা থাকে তাহলে আমরা প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। চলুন তালাকের কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।

  • ইসলাম থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর আনুগত্য ঠিকঠাক না করা। ইসলাম দাম্পত্য জীবনের যে রোড ম্যাপ দিয়েছে তা মেনে না চলা। খেয়াল খুশি মতো চলা।
  • শয়তানের প্ররোচনা। বিবাহ করলে আল্লাহ খুশি হয়, আর তালাক হলে শয়তান খুশি হয়। এজন্য শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে।
  • স্বামী-স্ত্রী মতবিরোধ। যখন পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আনুগত্য নষ্ট হয়ে যায় তখন মতবিরোধ দেখা যায়। আর এই মতবিরোধ থেকে তালাকের সূত্রপাত ঘটে।
  • ঠিকমতো আল্লাহর ইবাদত না করা। অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদরা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ককে ত্রিভুজের মতো তুলনা করেছেন। তারা উভয় যখন আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে তখন আল্লাহ তাদের অন্তরে একে অপরের প্রতি মহব্বত তৈরি করে দেয়। আর তারা যখন আল্লাহ নিকট থেকে দূরে সরতে থাকে ততই তাদের (স্বামী-স্ত্রী) মাঝে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।
  • হারাম উপার্জন। যাদের জীবন-জীবিকা চলে হারাম অর্থ দিয়ে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল  করেন না। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়।
  • বেপর্দা চলাফেরা। যারা বেপর্দায় চলাফেরা করে তারা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়।
  • অন্যান্য কারণ যেমনঃ আত্নীয়-স্বজনের সাথে ব্যাপক সংমিশ্রণ, মাতা-পিতার অবাধ্য, হারাম প্রদর্শনী, যৌথ কর্মসংস্থান, মাহারাম ব্যতীত সফর ইত্যাদি।

না জেনে তালাক দিলে কি হয়

তালাক একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আপনি যদি না জেনে তালাক দেন তাহলে কিন্তু তা কার্যকর হয়ে যাবে। না জেনে তালাক দেওয়ার কারণে যে তালাক হবে না বিষয়টি এমন নয়। আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে মজার ছলে অথবা রাগ, ক্ষোভ, অভিমান করে বলেন “ তোমাকে তালাক” তাহলে কিন্তু তালাক হয়ে যাবে। তালাক এমন একটি বিষয় যা মজার ছলে অথবা সিরিয়াসলি উচ্চারণ করলেও কার্যকর হয়ে যাবে। যারা নতুন বিয়ে শাদী করেছেন অথবা বিয়ে শাদী করবেন তাদের এই তালাকের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। তালাক কোন খেলনার বিষয় নয়। এই তালাকের কারণে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব এই কাজ গুলো থেকে আমাদের বিরত থাকা দরকার।

তালাক দিব বললে কি তালাক হয়

না। যদি কেউ ভবিষ্যৎতকালীন ক্রিয়া ব্যবহার করে বলেন তোমাকে তালাক দিয়ে দিব, তোমার সাথে সংসার করবো না সেক্ষেত্রে তালাক হবে না। যদি অতীতকালীন ক্রিয়া ব্যবহার করে বলে তোমাকে তালাক দিলাম, তোমাকে তালাক দিয়েছি এই অবস্থাতে তালাক হয়ে যাবে। ইহা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এই ধরণের শব্দ মুখে নেওয়ার আগে হাজার বার আমাদের ভাবা উচিত। দেখুন সংসার জীবন অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং ধৈর্যের একটি কাজ। চলার পথে মনোমালিন্য বা মতবিরোধ হওয়াটা স্বাভাবিক।তাই বলে কথায় কথায় একে অপরকে তালাকের হুমকি দেওয়া এটি একটি গর্হিত কাজ।

এখন প্রশ্ন হলো তালাক দিব বললে কি তালাক হয় ? ইসলামী হুকুম কি বলে ? এই রকম জীবন ঘনিষ্ট বিষয়ে প্রতিটি মানুষের জ্ঞান থাকা দরকার। আমাদের এই সমাজ তালাকের মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্তকে খুবই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে। যার কারণে ঘরে ঘরে বিচ্ছেদ নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে ওঠেছে। স্ত্রী যখন স্বামীকে তালাকের হুমকি দেয় সেটা স্বামীর জন্য যেমন বেদনাদায়ক অনুরুপভাবে স্বামী যখন স্ত্রীকে তালাকের হুমকি দেয় সেটা স্ত্রীর জন্যও বেদনাদায়ক। তালাক হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ।তালাক দেওয়ার পূর্বে অনেক বিষয় আছে যা আমাদের অনুসরণ করা দরকার। 

ধরুন কোন কারণে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে এমন অবস্থায় সরাসরি তালাকের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হবে অন্যায় বা গোড়ামি। তালাকের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ অথবা উভয় পক্ষের পরিবারের মুরব্বিদের সাথে আলাপ আলোচনা করা দরকার। উদাহারণস্বরুপ, মনে করুন আপনার বন্ধুর সাথে কোন কারণে আপনার মনোমালিন্য হয়েছে এই অবস্থায় সমাধানের পথ না খুজে আপনি যদি তাকে হত্যার হুমকি দেন এটা যেমন গোড়ামি অনুরুপভাবে সমাধানের পথ না খুজে তালাকের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও হলো গোড়ামি। আল্লাহ পাক আমাদের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুক। আমিন।

চলে যাও বললে কি তালাক হয়

তালাক এমন একটি বিষয় যা মজা বা দুুষ্টমির ছলে বললে কিংবা সিরিয়াসলি বলে হয়ে যাবে। কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বলে তোমাকে ছেড়ে দিলাম, তোমাকে রাখবো না, চলে যাও, আমি আর তোমার হাতে রান্না খাব না, তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও, তোমার চেহারা যেন আমি না দেখি এগুলো কিন্তু তালাক হওয়ার মতো শব্দ। এগুলোকে বলা হয় কেনায়া তালাক। এই শব্দগুলো উচ্চারণ  করে কেউ যদি তালাকের নিয়ত করে তাহলে তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। তাই প্রিয় ভাই ও বোন কোন অবস্থাতেই তালাকের নিয়ত করা যাবে না ও তালাক শব্দ উচ্চারণ করা যাবে না। আশা করি আলোচনা থেকে চলে যাও বললে কি তালাক হয় সেই বিষয়ে একটি সূক্ষ্ণ ধারণা পেয়েছেন।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক এই পোস্টে  জীবনঘনিষ্ট একটি টপিকস তালাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে তুলে ধরা হয়েছে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়, কি কি শব্দ বললে তালাক হয়, কি কি কারণে তালাক হয়, না জেনে তালাক দিলে কি হয়, তালাক দিব বললে কি তালাক হয়, চলে যাও বললে কি তালাক হয় এই রকম জীবনঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি আপনার উপকারে এসেছে। পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। এইরকম জীবনঘনিষ্ট আরো টপিকস পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url