রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ বিস্তারিত জেনে নিন
আমরা সকলে কম-বেশী রক্তশূন্যতা এই শব্দটির সাথে পরিচিত। রক্তশূন্যতার আরও একটি নাম রয়েছে সেটি হলো অ্যানিমিয়া। রক্তে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি রক্তশূন্যতায় ভোগে। যার কারণে এর প্রভাব নবজাতকের উপর পড়ে, নবজাতকের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। রক্তে ২ টি উপাদান রয়েছে। একটি হলো রক্তকোষ, অপরটি হলো রক্তরস। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন পাওয়া যায়। যা শরীরে বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করে থাকে। মূলত রক্তে হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি কমে গেলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দেখা যায়।
রক্তশূন্যতার অন্যতম কারণ হলো অপুষ্টি। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে খাবার খায় সেখানে যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে তাহলে রক্তশূন্যতা দেখা দিবে। নানান কারণে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। যেমনঃ রক্তক্ষরণ, থাইরয়েডের সমস্যা, কৃমি, পাইলস, দীর্ঘমেয়াদী ব্যথানাশক সেবন, অতিরিক্ত মাসিক এর কারণে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। আজকে আমরা আলোচনা করবো রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ কি কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ
রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ
রক্তশূন্যতা আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ যারা রক্তশূন্যতায় ভূগেছেন তারাই একমাত্র বলতে পারবেন। রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে আমাদের উচিত দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। তার আগে রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলো আমাদের জানা দরকার।
- রক্তশূন্যতা দেখা দিলে রোগীর শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।
- রোগী শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে যায় পাশাপাশি মানসিক অবসাদে ভোগে।
- রোগীর মুখমন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- রোগীর চুল ঝড়ে পড়ে।
- মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা রোগী অনুভব করে।
- রোগী চোখে ঝাপসা দেখে।
- রোগীর বুক ধড়পড় করে।
- হাত-পা অবশ হয়ে আসে।
- অনিয়মিত মাসিক।
- জন্ডিসের মতো লক্ষণও দেখা যায়।
- যখন তীব্র রক্তশূন্যতা হয় তখন হ্রদপিন্ড অকার্যকর হয়ে পড়ে।
- রোগী খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে ক্ষুধামন্দা লক্ষ্য করা যায়।
- পর্মুখে, ঠোঁটে ঘা হয়। রোগীর খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
- অনেক সময় শ্বাসকষ্ট মতো সমস্যা দেখা যায়। এমনকি হার্ট এট্যাকের আশংকাও রয়েছে।
যদি কোন কারণে রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে কমপ্লিট ব্ল্যাড কাউন্ট করতে পারেন। তাহলে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা, পরিমাণ এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন। এছাড়া একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রক্তশূন্যতার কারণ শনাক্ত করবেন।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মূলত শরীরে আয়রনের ঘাটতি থেকে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। অনেকে রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। আয়রন ট্যাবলেট ছাড়াও রক্তশূন্যতা দূর করার এমন কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো মেনে চললে আপনি রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাবেন। শরীরে রক্ত উৎপাদনের জন্য আয়রনের দরকার হয়। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। আপনি যদি সেই খাবার গুলো খান তাহলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে পাশাপাশি রক্তশূন্যতাও দূর হবে। আজকে আমরা সেই সকল খাবারগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলো আয়রনের ঘাটতি দূর করতে সহায়ক। পাশাপাশি জানবো রক্তশূন্যতা দূর করার কিছু ঘরোয়া টিপস। চলুন তাহলে রক্তশূন্যতা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নেওয়া যাক।
পালংশাকঃ ইহা আয়রনে ভরপুর এমন একটি সবজি যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক। অধিকাংশ ডাক্তার রক্তস্বল্পতা নিরাময়ে পালংশাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। ১০০ গ্রাম পালংশাকে ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। রক্তস্বল্পতা দূর করতে আপনি বেশি বেশি পালংশাক খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
কলিজাঃ কলিজাতে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন বি। আর রক্তশূন্যতার অন্যতম কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কলিজা রাখার চেষ্টা করুন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা গরুর কলিজা খাবেন না।
মাছঃ সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর আয়রন। তাছাড়া ছোট মাছ থেকেও আয়রন পাওয়া যায় যেমনঃ টেংরা মাছ। তাই এ্যানিমিয়া থেকে বাঁচতে খাদ্য তালিকায় মাছ রাখুন।
খেজুরঃ ইহা অত্যন্ত আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই দৈনিক ৫/৭টি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ফলমূলঃ কিছু কিছু ফল যেমনঃ বেদানা/ডালিম, তরমুজ, কালো আঙ্গুর, কলা, আপেল, গাজর ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। তাই রক্তশূন্যতা নিরাময়ে প্রতিদিন ২-৩টি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ডাল জাতীয় খাবারঃ মুগডাল, মসুরডাল, মাষকালাইয়ের ডাল এগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।
মধুঃ মধুতে আয়রনের পাশাপাশি কপার ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। ইহা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। তাই আপনি ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
সয়াবিনঃ সয়াবিনে থাকা সাইট্রিক এসিড রক্তস্বল্পতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক। সয়াবিনে উচ্চমাত্রায় আয়রন ও ভিটামিন পাওয়া যায়। তাছাড়া সয়াবিনে থাকা প্রোটিনও রক্তস্বল্পতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
চিনাবাদাম ও পিনাট বাটারঃ এগুলো আয়রনের ভালো উৎস। যারা পিনাট বাটার খেতে পছন্দ করেন না তারা চিনাবাদাম খেতে পারেন। কেননা চিনাবাদামে রয়েছে প্রচুর আয়রন। ১ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
তাছাড়া দুধ, ডিম, কিসমিস, ডুমুর, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, লালশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, কচু, ছোলা, গুড়, বিচি এগুলো আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই রক্তস্বলল্পতা দূর করতে আপনি এই জাতীয় খাবারের অভ্যাস করতে পারেন।
- যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা চা, কফি, রেড ওয়াইন এসব পানীয় পান করা পরিহার করুন। কেননা ইহা আয়রন তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- নিয়মিত শরীর মাসাজ করলে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত হাত-পা বাহু মাসাজ করার অভ্যাস করুন।
- নিয়মিত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার অভ্যাস করুন। কেননা ইহা রক্তস্বল্পতা নিরাময়ের অন্যতম সমাধান।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্টে রক্তশূন্যতার লক্ষণসমূহ, রক্ত শূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। এরকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url