মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত - বিয়ে করা কি ফরজ
এখন আমাদের সমাজে মসজিদে বিয়ে পড়ানোর ট্রেন্ড চালু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় অনেক নামী-দামী তারকার বা সমাজের উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তির বিয়ে মসজিদে হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত ? কারা কারা বিয়ে করতে পারবে ? বিয়ে করা কি ফরজ ? এসব নিয়ে নানান প্রশ্ন আমাদের মনে রয়েছে। মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত ? বিয়ে করা কি ফরজ ? এরকম জীবনঘনিষ্ট বিষয় যুব সমাজকে জানানোর উদ্দেশ্যে আজকের এই পোস্টটি তৈরি করা।
আমাদের বাঙালি সমাজ মনে করে মসজিদে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে বিয়েতে বরকত হয়। মসজিদে বিয়ে করলে বিয়েতে বরকত হয় কিনা ? মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত ? বিয়ে করা কি ফরজ কাজ ? এরকম জীবনঘনিষ্ট প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত
- মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত
- বিয়ে করা কি ফরজ
- কি বারে বিয়ে করা উত্তম | কোন মাসে বিয়ে করা হারাম | কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম
- খালাতো বোনকে বিয়ে করা কি জায়েজ
- শেষ কথা
মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত
মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত ? না, মসজিদে বিয়ে করা সুন্নত নয়, জরুরী কিছু নয়, মসজিদে বিয়ে এটি মুস্তাহাব। সাহাবী গণের (রাঃ) সব বিবাহ যে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এমনটি নয়। স্বয়ং নবী (সাঃ) সব বিয়ে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় নি। মসজিদে বিয়ের জন্য নবী (সাঃ) কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন এমনটাও প্রমাণিত নয়। দু-পক্ষের সুবিধা অনুযায়ী যেকোন জায়গায় বিয়ে হতে পারে। নবী (সাঃ) আম্মাজান সাফিয়া (রাঃ) বিয়ে করেছিলেন খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে (সহিহ বুখারি: ৪২১১)।
বর্তমানে সময়ে মুসলমানদের বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে যেভাবে বিধর্মী সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে, এগুলো প্রতিরোধের জন্য আপনি মসজিদের বিয়ের আয়োজন করতে পারেন। তবে এটা চিন্তা করার সুযোগ নেই যে, মসজিদে বিবাহ এটা সুন্নতে মুআক্কাদা আর মসজিদের বাইরে বিবাহ করা অপছন্দনীয়। আশা করি পুরো আলোচনাটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে মসজিদে বিয়ে করা সুন্নত নয়, জরুরী কিছু নয়, মসজিদে বিয়ে এটি মুস্তাহাব।
বিয়ে করা কি ফরজ
বিয়ে করা কি ফরজ কাজ ? এ নিয়ে আমাদের সমাজে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলে বিয়ে ফরজ, কেউ বলে সুন্নাহ। ব্যাক্তির উপর নির্ভর করে বিয়ে কখনোও ফরজ, বিয়ে কখনও সুন্নাহ, বিয়ে কখনও ঐ ব্যাক্তির জন্য হারাম। বিয়ের মাধ্যমে যৌনতাকে পবিত্র করা হয়। বিয়ে ব্যতীত যৌনতা হারাম। তাই আমাদের যুব সমাজকে বিয়ে কখন ফরজ, সুন্নাহ, হারাম হয় তা জানতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
বিয়ে কখন ফরজঃ যদি ঐ ব্যাক্তির আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, শারীরিকভাবে সুস্থ হয় কিন্তু বিয়ে না দিলে তার চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে/চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমনটা হলে ঐ ব্যাক্তির জন্য বিয়ে ফরজ।
বিয়ে কখন সুন্নাহঃ যদি ঐ ব্যাক্তির আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, শারীরিকভাবে সুস্থ হয় কিন্তু বিয়ে না দিলে তার চরিত্র নষ্ট হওয়ার কোন আশংকা থাকে না তখন তার জন্য বিয়ে সুন্নাহ। এ ব্যাপারে নবী (সাঃ) বলেছেন, বিবাহ আমরা সুন্নাহ অংশ, যে ব্যাক্তি আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মত হতে পারে না।
বিয়ে কখন হারাম/নিষিদ্ধঃ যদি এমন হয়ে ঐ ব্যাক্তি বিয়ে করলে স্ত্রী হক আদায় করতে পারবে না, ঐ ব্যাক্তি শারীরিকভাবে অক্ষম, আর্থিকভাবে অসচ্ছল এমনটা হলে তার জন্য বিয়ে হারাম/নিষিদ্ধ।
প্রিয় সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, বিয়ে করা কি ফরজ কাজ এই বিষয়ে আশা করি আপনি একটি সুন্দর উত্তর পেয়েছেন। বিয়ে আপনার জন্য ফরজ/সুন্নাহ/হারাম আশা করি এই বিষয়েও একটি সূক্ষ ধারণা পেয়েছেন।
কি বারে বিয়ে করা উত্তম | কোন মাসে বিয়ে করা হারাম | কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম
কি বারে বিয়ে করা উত্তমঃ সপ্তাহের ০৭ দিনই হচ্ছে আল্লাহর দিন। এই ০৭ দিনের মধ্যে শুক্রবারকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আমাদের গ্রাম্য কিছু অপসংস্কৃতি রয়েছে যেমনঃ অমবশ্যার রাতে বিয়ে করা জায়েজ নয়, চাঁদ দেখে বিবাহ করা উত্তম, জন্মদিনে বিবাহ করা উচিত নয়, শুক্রবার দিনে বিবাহ অধিক বরকত পাওয়া যায় এমন অনেক অপসংস্কৃতি গ্রামে দেখা য়ায়। যেগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আপনি যেকোন সময় যেকোন বারে বিবাহ করতে পারেন।
কোন মাসে বিয়ে করা হারামঃ আরবী যেকোন মাসে বিয়ে করা যায়। অনেকে মনে করে সফর মাস হচ্ছে অকল্যাণের মাস, এসময় বিয়ে করা উচিত নয় এগুলো জাহেলী সংস্কৃতি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রমজান মাসকে নিয়ে। রমজানে মাসে কি বিয়ে করা যায় ? জ্বি, রমজান মাসে বিয়ে করা যাবে। রমজান মাসে বিয়ে করা হারাম নয়। একজন মুমিন বান্দাকে রমজান মাসে পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে, এটাই পরীক্ষা। যদি কোন ব্যাক্তি রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে পারে তাহলে সে বিবাহ করতে পারবে। আর যদি এমনটা হয় যে, স্ত্রী সাথে সময় কাটাতে হবে তাহলে রমজান মাসের পরে বিবাহ করাটা ভালো।
কোন মাসে বিয়ে করা উত্তমঃ নবী (সাঃ) ও আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বিয়ে হয়েছিল শাওয়াল মাসে। তার মানে কী শাওয়াল মাসে বিবাহ করা সুন্নাহ ? ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, শাওয়াল মাসে বিবাহ করা সুন্নাহ নয়, এটি মুস্তাহাব। মুস্তাহাব মানে জরুরী কিছু নয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতেরও অংশ নয়। নবী (সাঃ) যে অন্যান্য বিবাহ গুলো শাওয়াল মাসে হয়েছিল এমনটা প্রমাণিত হয় নি এবং সাহাবীগণ (রাঃ) তারা যে শাওয়াল মাসে বিবাহের জন্য সচেষ্ট থাকতেন এমনটাও প্রমাণিত হয় নি। আপনি আরবী যেকোন মাসে বিবাহ করতে পারেন।
আশা করি এতক্ষণ আপনি পুরো আলোচনাটি পড়েছেন এবং আপনার প্রশ্ন কি বারে বিয়ে করা উত্তম | কোন মাসে বিয়ে করা হারাম | কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম ইত্যাদি বিষয়ে সূক্ষ ধারণা পেয়েছেন।
খালাতো বোনকে বিয়ে করা কি জায়েজ
জ্বি, খালাতো বোনকে বিয়ে করা জায়েজ। ইসলামে এটার অনুমতি রয়েছে। খালাতো বোনকে বিয়ে করা জায়েজ কিনা এটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের কিছু নেই। ইসলামে শুধুমাত্র নিজের/আপন বোনদের সাথে বিয়েকে হারাম করেছে। তাছাড়া খালাত, মামাত, ফুফাত, চাচাত ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ে শাদী জায়েজ। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, নারীদের পর্দা করতে হবে, চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফাত ভাই বলে যে পর্দা করতে হবে না এমনটা নয়। কোন নারী যদি পর্দা না করে তাহলে সে গুনাহগার বলে গণ্য হবে। অনুরুপভাবে ইসলামী বিধান অনুযায়ী, পুরুষদের জন্য নির্দেশনা “ তারা যেন পরনারী থেকে তাদের চোখ নিম্নগামী করে”। চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফাত বোন বলে যে চোখ নিম্নগামী করতে হবে না, বিষয়টি এমন নয়। কোন পুরুষ যদি ইসলামের এই বিধান না মানে তাহলে সে গুনাহগার বলে গণ্য হবে।
সর্তকতাঃ ধরুন, আপনি ছোট থাকতে কোন মহিলার (এখানে মহিলা বলতে চাচী, খালা, ফুফু, মামী কে বুঝানো হয়েছে) দুধ পান করেছেন, তখন ঐ মহিলা আপনার দুধ মা বলে গণ্য হবে। যিনি আপনার দুধ মা, তার ছেলে-মেয়ের সাথে বিবাহ হারাম।
আশা করি আলোচনা থেকে খালাতো বোনকে বিয়ে করা কি জায়েজ ? এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে একটি সূক্ষ উত্তর পেয়েছেন।
শেষ কথা
যেহেতু বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন আর আমরা মুসলমান। তাই আমাদের বিয়ে-শাদী নবী (সাঃ) শিখানো পদ্ধতিতে হওয়া দরকার। কেননা, এতে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক কল্যাণ।
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। পোস্টটি পড়ে আশা করি মসজিদে বিয়ে করা কি সুন্নত, বিয়ে করা কি ফরজ, কি বারে বিয়ে করা উত্তম, খালাতো বোনকে বিয়ে করা কি জায়েজ, এইরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন। পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই রকম আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন।
পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url