অলসতা দূর করার উপায় - অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায়

যার জীবনে অলসতা বাসা বেধেছে সে কখনোও সফল হতে পারে না। জীবনের আনন্দ, সুখ, শান্তি সবকিছু ধ্বংস করে দেয় অলসতা। অলসতা আমাদের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসে। যে জীবনে কর্মহীন, উদ্যমহীন, নিস্ক্রিয় তাকে আমরা অলস বলে থাকি। কি কি উপায় অবলম্বন করে আমরা অলসতা দূর করতে পারি, অলসতা দূর করার কোন ইসলামিক উপায় আছে কিনা এই নিয়ে মানুষের নানান প্রশ্ন রয়েছে। অলসতা দূর করার উপায়, অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় নিয়ে এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে। আপনি যদি এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অলসতা দূর করার উপায়, অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

অলসতা দূর করার উপায় - অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায়

অলসতা এমন একটি জিনিস যা আমাদের জীবনকে প্রতি সেকেন্ড একটু একটু করে ধ্বংস করে দেয়। ফলে আমাদের জীবনের এক পর্যায়ে ব্যর্থতার কালো মেঘ ছেয়ে যায়। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে অলসতা দূর করার উপায়, অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় গুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ অলসতা দূর করার উপায়

অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায়

অনেকে অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় গুলো জানতে গুগলে অনুসন্ধান করে। আমি এই প্যারায় অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় গুলো শেয়ার করবো। অলসতা অত্যন্ত মারাত্নক বিষয়। স্বয়ং নবী (সাঃ) এই অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। যারা ফজরের নামাজ পড়ে না, এই শ্রেণীর মানুষদের অলসতা চেপে ধরে। যারা দিনের অর্ধেক অংশ বিছানায় কাটিয়ে দেয় এই শ্রেণীর মানুষদের মাঝে অলসতা বেশি দেখা যায়। ফজরের সময় হচ্ছে বরকতময় সময়। এই সময় যে মুসলমান ঘুম থেকে ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করবে তার অলসতা দূর হবে।

সে পুরো দিনের মধ্যে বরকত খুজে পাবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের মধ্যে অলসতা আসে কেন ? আমরা যখন ঘুমাতে যায় ইবলিশ শয়তান আমাদের মাথার কাছে ০৩টি গিট মারে আর মন্ত্র পড়তে থাকে, বলে “রাত অনেক লম্বা, ঘুমাতে থাক”। যে ব্যাক্তি ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করল না তার মাথায় তিনটি অলসতার গিট থেকে গেল। দেরি করে ঘুম থেকে উঠার কারণে সেদিনের বরকত হারিয়ে ফেলল এবং ধীরে ধীরে সে অলসে পরিণত হলো। অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায় গুলো হলোঃ

  • ঘুম থেকে জেগে ঘুম থেকে উঠার দোয়া পড়ুন। সঙ্গে সঙ্গে অলসতার ০১টি গিট খুলে যাবে।
  • নামাজের জন্য ওযু করুন। সঙ্গে সঙ্গে অলসতার ০২ টি গিট খুলে যাবে।
  • এরপর মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করুন। সঙ্গে সঙ্গে অলসতার ০৩ টি গিট খুলে যাবে। আপনার অলসতা দূর হয়ে আপনি হয়ে উঠবেন প্রাণবন্ত, সতেজ। যারা মুমিন ব্যাক্তি তারা কখনও অলস হয় না।
  • নিয়মিত অলসতা দূর করার নিম্নে বর্ণিত দোয়া গুলো পড়তে থাকুন।

দোয়া-১ঃ اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن والعجز والكسل والجبن والبخل

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে। 

দোয়া-২ঃ  اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْهَرَمِ وَالْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা'ছামি ওয়াল মাগরাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আলসেমি, বৃদ্ধ বয়সের জটিলতা, সব ধরনের পাপাচার এবং ঋণের বোঝা থেকে আশ্রয় চাই।

উপরের বর্ণিত অলসতা দূর করার ইসলামিক ০৪টি উপায়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই আমল গুলো করেন পাশাপাশি যে অভ্যাসগুলো আমাদের মধ্যে অলসতা নিয়ে সেই অভ্যাস গুলো যদি পরিবর্তন করেন আশা করা যায় আপনি হয়ে উঠবেন একজন কর্মঠ ব্যাক্তি।

অলসতা দূর করার উপায় | অলসতা কাটিয়ে সফল হওয়ার উপায়

অলস ব্যাক্তিরা সবসময় আগামীকালের উপর নির্ভর করে। তারা আজকের কাজ কালকে, কালকের কাজ পরশু করবো এই চিন্তাভাবনা করে বসে থাকে। তাদের এই চিন্তাভাবনা কারণে আলসেমি তাদের চেপে ধরে। এই অভ্যাসটি কিছুদিন করার পর তাদের স্বভাবের মধ্যে এই অভ্যাসটি চলে আসে। তাই আমি আজকে আপনাকে অলসতা দূর করার এমন কিছু টিপস এন্ড ট্রিকসের কথা বলে দিব যেটা দ্বারা আপনি সহজে অলসতা দূর করতে পারবেন। চলুন তাহলে অলসতা দূর করার বিশেষ কিছু উপায়ের কথা জেনে নেওয়া যাক।

সকালে দ্রুত ঘুম উঠার অভ্যাস করাঃ শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমের দরকার হয়। সারাদিন কাজের কারণে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, ঘুম আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ করে তোলে। যারা রাতে দেরি করে ঘুমায়, সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে তাদের ভিতর অলসতার প্রবণতা বেশি। এজন্য রাতে ঘুমানোর একটি নিদিৃষ্ট টাইম করে ফেলতে হবে, সকালে ঘুম থেকে উঠার একটি নিদিৃষ্ট টাইম করে ফেলতে হবে। যারা সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠে কাজ করে তারা জীবনে সফল হয়। দ্রুত ঘুম থেকে উঠার কারণে তাদের জীবন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

অতিরিক্ত ফোনের ব্যবহার/আসক্তিঃ ফোন আমাদের জীবনের মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট করে ফেলে। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের কারণে আমরা সময়ের মাঝে বরকত খুঁজে পাই না। তরুণ প্রজন্মের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ( ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আরও অন্যান্য) ব্যবহার এত বাড়ছে যে আংশকা করা হচ্ছে এগুলো তরুণ প্রজন্মকে কর্মবিমুখ করে তুলবে। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তাই একান্তই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে একান্ত একটি টাইম করে ফেলুন।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃ যে খাবার গুলো আপনার শরীরে এনার্জি তৈরি করবে সেই খাবার গুলো খাওয়ার অভ্যাস করুন। যাদের শরীর দূর্বল তারা একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। আর ক্লান্ত শরীরে অলসতা জেঁকে বসে। তাই শরীর যেন কোনভাবেই ক্লান্ত না হয় সেজন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার (যেমনঃ দুধ, ডিম, মধু, মাছ, মাংস, পুষ্টিকর শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেসকল খাবার গুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর আপনি তা জানেন সেইসকল খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

নিজের মনকে আনন্দ দেনঃ মূলত সময় মতো কাজ না করা অথবা কাজ ফেলে রাখা থেকেই অবসাদের সূত্রপাত ঘটে। এজন্য কাজের পর নিজেকে ট্রিট দিবেন। এতে নিজের মনকে আনন্দে রাখতে পারবেন। ফলে ঐ জটিল কাজের প্রতি আপনার কোন আলসেমি কাজ করবে না। ধরুণ, একটি অংক আপনার জন্য কঠিন, আপনি নিয়ত করেন আপনি যদি ঐ অংকটি করতে পারেন তাহলে আপনি ভ্রমণ করতে যাবেন বা কোন রেষ্টুরেন্টে খেতে যাবেন। আপনি যদি কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে নিজের ব্রেইনকে এভাবে ট্রিট দেন “বাহ, তুমি কাজটি করতে পেরেছ”। এতে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ উদ্দীপনা বাড়বে।

নিজের কাজকে ভালোবাসাঃ দেখবেন আপনি যে কাজটি ভালোবাসেন সেই কাজের প্রতি আপনার কোন অলসতা কাজ করে না। যেমনঃ আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালিয়ে যাচ্ছেন তার পরেও আপনার কোন আলসেমি বা ক্লান্তি কাজ করছে না। এর মূল কারণ হলো আপনি সেই কাজটি করতে পছন্দ করেন। কাজকে ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক “ নারী-পুরুষ পাশাপাশি থাকলে তাদের মধ্যে যেমন ভালো লাগা কাজ করে, ঠিক তেমনি কাজের সাথে থাকলে কাজের প্রতিও ভালা লাগা কাজ করবে”। ধরুণ আপনি বই পড়তে পছন্দ করেন না, তারপরেও আপনি বই নিয়ে টেবিলের সামনে বসে থাকেন, ভালো লাগে এমন কোন বিষয়বস্তু (যেমনঃ মোবাইল) চোখের সামনে রাখবেন না এভাবে কয়েকদিন যাবে দেখবেন অটোমেটিক আপনার বইয়ের প্রতি ভালো লাগা কাজ করছে। কাজের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ঠিক সেরকম।

কাজের ফাকে খনিকের বিশ্রামঃ লাগাতার কাজ করার কারণে আমাদের ভিতর আলসেমি চলে আসে। মূলত এখান থেকেই অলসতার সূত্রপাত ঘটে। ঘন্টার পর ঘন্টা বই পড়বেন না। বই পড়বেন কেমনে ? ২০ মিনিট বই পড়ুন, ৫মিনিট বিশ্রাম নিন আবার ২০ মিনিট বই পড়ুন, ৫মিনিট বিশ্রাম নিন এভাবে পড়তে থাকুন তাহলে দেখবেন দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়তে পারছেন, এনার্জিও ফুরাবে না কাজের মধ্যে আনন্দ অনুভব করছেন। এই টেকনিকটা হতে পারে অলসতা দূর করার আদর্শ উপায়।

নিজেকে চাপমুক্ত রাখুনঃ মানসিক চাপের কারণেও আমরা ‍ক্লান্ত বোধ করি। এজন্য নিজেকে চাপমুক্ত রাখুন। নিজেকে চাপমুক্ত রাখার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। সেটা হতে পারে বাগান করা, মাছ ধরা, প্রিয়জনের সাথে আড্ডা, কোন পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানো।

নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ ব্যায়াম করলে আমরা চাপমুক্ত থাকতে পারি। আমরা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারি। এজন্য প্রতিদিন সকাল সকাল অথবা বিকাল করে হাঁটার অভ্যাস করা অথবা সাইকেল চালানো।

বেশি করে পানি পান করাঃ পানির অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ইহা আলসেমি দূর করতে সহায়ক। তাই যখনই নিজের ভিতর আলসেমি কাজ করবে তখনিই এক ঢুক পানি পান করুন।

টাইম ম্যানেজমেন্টঃ যাদের জীবনে সময়ের মূল্য বুঝে না, যাদের টাইম ম্যানেজমেন্টের প্রতি কোন গুরুত্ব তারা মূলত বেশি অলস হয়ে থাকে। আপনি যদি ১০ টায় ঘুম থেকে উঠেন, সকালের খাবার দুপুরে খান, দুপুরের খাবার সন্ধ্যায় খান এই রকম টাইম ম্যানেজমেন্ট হয়ে থাকলে আপনি অলস বলে গণ্য হবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা, সময়মতো খাবার খাওয়া, সময়মতো কাজ করা এই বিষয়গুলো যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার জীবনে অলসতা থাকবে না আপনার জীবন হবে প্রাণবন্ত। সময়মতো কাজ করলে মনে প্রফুল্ল বোধ হয়।

উপরে অলসতা দূর করার ১০টি উপায় তুলে ধরা হয়েছে। আপনি যদি এই উপায় গুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে অবশ্যই সুফল পাবেন। আশা করি আলোচনা থেকে অলসতা দূর করার উপায় গুলো বিস্তারিত জানতে পারছেন।

অলসতা দূর করার খাবার

কোন কোন খাবার খেলে অলসত দূর হয় ? অলসতা দূর করার খাবার কোনগুলো এ ধরণের বিষয়গুলো জানতে মানুষ গুগলে সার্চ করে। শরীর ক্লান্ত থাকলে, দূর্বল থাকলে তখন আমাদের কাজ-কর্মের প্রতি মন বসে না। এখান থেকে মূলত অলসতার সূত্রপাত ঘটে। যেসকল খাবার গুলো আমাদের শরীরকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে সেই সকল খাবার গুলো আমাদের নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যখন শরীর ও মন প্রাণবন্ত থাকবে তখন অলসতা দূর হবে, কাজের প্রতি আগ্রহ জন্ম নিবে। এজন্য আমাদের পুষ্টিকর খাবার গুলো খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। কোন খাবার খেলে শরীরের দূর্বলতা দূর হবে, শরীর হবে প্রাণবন্ত, অলসতা দূর করার খাবার কোনগুলো সেসকল বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা খুবই দরকার। চলুন তাহলে অলসতা দূর করার খাবার কোন গুলো জেনে নেওয়া যাক।

বাদামঃ বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। বাদামে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম এগুলো সহজলভ্য। যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত এই খাবার গুলো রাখতে পারেন। বাদাম শরীরর এনার্জি তৈরি করে শরীরকে প্রাণবন্ত করে তোলে। ইহা অলসতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়তা করে থাকে।

মৌসুমী ফলঃ যেগুলো বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায়। যেমনঃ পেয়ারা, আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা, আপেল, খেজুর, তরমুজ, আম, লিচু, কাঠাল, ডালিম এ জাতীয় মৌসুমী ফলগুলো খাদ্যতালিকায় রাখুন। এগুলো আপনার শরীরে এনার্জি বুস্ট করবে, দূর করবে ক্লান্তি, অবসাদ, অলসতা।

ডিমঃ ডিমের উপকারিতা জানি না এরকম লোক খুজে পাওয়া যাবে না। শরীরে দূর্বলতা কাজ করলে ডিম খান। ডিমে প্রোটিন ও ভিটামিন ডি-৩ রয়েছে। যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আর অলসতা আসে শরীরের দূর্বলতা থেকে। তাই অলসতা দূর করতে খাদ্যতালিকায় ডিম রাখুন।

মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলু থেকে ১০৯ কিলোক্যালরি শক্তি ও ২৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। তাই খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু রাখুন।

পানিঃ নিজেকে হাইড্রেট রাখতে পানি পান করুন। মূলত ডিহাইড্রেশন থেকে ক্লান্ত বোধ হয় আর সেখান থেকেই অলসতা কাজ করে। তাই যখনই ক্লান্ত বোধ করবেন তখনই একটু পানি পান করে নিন।

কফিঃ কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে এনার্জি বুস্ট করে। তাই আলসেমি দূর করে শরীরকে প্রাণবন্ত করে তুলতে কফি খান।

লেবুর রসঃ লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। যেগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরে ক্লান্তি দূর করে আলসেমি কাটাতে সাহায্যে করে।

মধুঃ মধুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ করে পাশাপাশি শরীরের আলসেমি কাটাতেও সাহায্য করে।

গ্রিন টিঃ গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরকে করে প্রাণবন্ত, মনকে করে প্রফুল্ল, দূর করে আলসেমি।

প্রিয় পাঠক উপরে অলসতা দূর করার খাবার গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। আপনি যদি কখনোও শরীর দূর্বল হওয়ার কারণে অলসতায় ভোগেন তাহলে উপরে খাবার গুলো খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়

আপনার কি সারাক্ষণ চোখে ঘুম ঘুম ভাব লেগেই থাকে ? টেনশনের কোন কারণ নেই। আজকে আমি আপনাকে এমন কিছু উপায়ের কথা বলবো যেগুলো ঘুম ঘুম ভাব দূর করবে নিমিষেই। বিভিন্ন কারণে চোখে ঘুম ঘুম ভাব লেগেই থাকে। বিশেষ করে দুপুরে খাবারের পর চোখে বেশি ঘুম ধরে। চলুন তাহলে  ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায় করার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক। 

পানি পান করুনঃ পানি শরীরকে প্রাণবন্ত করে। পানি পান করলে শরীরের কোষ গুলো উজ্জীবিত হয় ও মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে উঠে। তাই যখনই ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে তখনই একটু পানি খেয়ে নিন। দেখবেন ঘুম ঘুম ভাব চলে যাবে।

চা-কফি পান করুনঃ যখন আপনার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে তখনই এক কাপ চা পান করুন। দেখবেন আপনার ঘুম ঘুম ভাব চলে গেছে। এর কারণ হলো চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমন্ত মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তোলে।

হাঁটাহাঁটি করাঃ যখনই চোখে ঘুম ধরবে তখনই ০৫ মিনিট হাঁটাহাটি করুন। দেখবেন ঘুম পালিয়ে যাবে। ইহা ঘুম দূর করার অনেক পুরাতন ও কার্যকর একটি ফর্মূলা। আমাদের অভিভাবকরা শৈশবে আমাদের এই পরামর্শ দিয়েছে।

চোখে পানি দেওয়াঃ  এটিও অনেক পুরাতন ও কার্যকর একটি ফর্মূলা। আমরা যখন শৈশবে  শ্রেণীকক্ষে ঘুমিয়ে যেতাম তখন শিক্ষকরা আমাদের চোখে পানি দেওয়ার পরামর্শ দিতেন।

কথা বলাঃ চোখে ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে আশেপাশে থাকা লোকদের সাথে কথা বলুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোঃ যদি আপনার ঘুমের ঘাটতি থাকে তাহলে ঘুম ধরবে এটাই তো স্বাভাবিক। এজন্য চেষ্টা করবেন সময়মতো ঘুমানোর জন্য। আমাদের দিনে অন্তত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমের দরকার হয়। কোন কারণে ঘুম কম হলে সারাদিন চোখে ঘুম ঘুম ভাব লেগেই থাকে।

দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুনঃ মানসিক ‍দুশ্চিন্তা শরীরকে ক্লান্ত করে দেয়। চোখে ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকার অন্যতম কারণ মানসিক দুশ্চিন্তা। মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

অতিরিক্ত ওজনঃ অতিরিক্ত ওজনের কারণে মানুষ কাজ-কর্ম করতে পারে না  একটুতেই ক্লান্তি বোধ করে। এজন্য শরীরের ওজন যেন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।

নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন পরিহার করুনঃ যারা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে তাদের চোখে ঘুম লেগেই থাকে। ঘুমের কারণে তারা চোখ খুলতে পারে না। যদি আপনার মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবনের অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই তা পরিহার করবেন।

জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুডঃ আপনি যদি জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড রেগুলার খেয়ে থাকেন তাহলে এখন থেকে জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড কম খান। কেননা, এগুলো হলো মুখরোচক খাবার। এই খাবার গুলো শরীর এনার্জি তৈরী করে না। যার কারণে শরীরে দূর্বলতা কাজ করে। যখন আপনার শরীর দূর্বল হবে তখন স্বাভাবিক ভাবে আপনার ঘুমের প্রবণতা লেগেই থাকবে। তাই এই  খাবার গুলো এড়িয়ে চলুন।

প্রিয় পাঠক এই প্যারায় ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায় গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। আপনার যদি এই ধরণের সমস্যায় ভোগেন তাহলে উপরের টিপস গুলো মেনে চলুন তাহলে আপনার চোখে লেগে থাকা ঘুমের প্রবণতা দূর হবে।

অলসতা দূর করার দোয়া

অলসতা জীবনে সফলতা অর্জনের অন্যতম বাধা। আজকের পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছিলেন তারা সকলে ছিলেন কর্মঠ। অলস ব্যাক্তিরা যেমন নিজের জীবনে উন্নতি সাধন করতে পারে না অনুরুপভাবে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। দিন শেষে তারা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাড়াঁয়। যেকোন কারণে মানুষের স্বভাবের মধ্যে আলসেমি আসতে পারে। আলসেমির কারণে কাজ-কর্ম না করে চুপচাপ বসে থাকাটা মোটেও ভালো অভ্যাস না। তাই আলসেমি দূর করার জন্য নিয়মিত কর্ম অনুশীলনের পাশাপাশি ২টি বিশেষ দোয়া আছে যেগুলোর উপর আমাদের আমল করা অত্যন্ত  জরুরী। এই ‍দুটি আমল অলসতা দূর করার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, কাপুরুষতা, কৃপনতা ইত্যাদি দূর হবে। অলসতা দূর করার দোয়া গুলো হলোঃ

দোয়া-১ঃ اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن والعجز والكسل والجبن والبخل

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে। 

দোয়া-২ঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْهَرَمِ وَالْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা'ছামি ওয়াল মাগরাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আলসেমি, বৃদ্ধ বয়সের জটিলতা, সব ধরনের পাপাচার এবং ঋণের বোঝা থেকে আশ্রয় চাই।

যখনই ভিতরে অলসতা কাজ করবে তখনই উপরোক্ত এই আমল গুলো আপনি করতে পারেন। আশা করা যায় আপনার অলসতা দূর হবে পাশাপাশি আপনার যে প্রতিবন্ধকতা (যেগুলো দোয়ার অর্থ) গুলো আছে সেগুলো দূর হবে। আমাদের অনেকে কাজ-কর্ম না করে আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করে বসে থাকি এটা তায়াক্কুল হলো না। এটা এক ধরণের বোকামি বা অলসতা। আমাদের আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করতে হবে এবং কর্মপদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তাহলেই আমরা সফল হব।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক এই পোস্টে জীবনঘনিষ্ট  একটি টপিকস “অলসতা” নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। তাই কোন অবস্থাতেই অলসতার সাথে আপোষ করা যাবে না। অলসতা আসে কেন ? সময়ের কাজ সময় মতো না করার অলসতা আসে। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে উপরে বর্ণিত টিপসগুলো যথাযথ ভাবে অনুসরণ করা দরকার। প্রিয় পাঠক এই পোস্ট থেকে আপনি অলসতা দূর করার ইসলামিক উপায়, অলসতা দূর করার উপায়, অলসতা দূর করার খাবার, ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়, অলসতা দূর করার দোয়া, অলসতা কাটিয়ে সফল হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url