লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা যা আমাদের সকলের জানা দরকার

এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। লবঙ্গ যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তেমনি অপকারিতাও আছে। আজকের এই পোস্টে আমরা লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো নিয়েই আলোচনা করবো। লবঙ্গ গুণাগুণ অনেক তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। আমরা লবঙ্গকে মসলা জাতীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করি।

লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা যা আমাদের সকলের জানা দরকার

লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা যা আমাদের সকলেরই জানা দরকার। লবঙ্গ গাছ  থেকে মূলত লবঙ্গটা আসে। লবঙ্গটা হলো লবঙ্গ গাছে যে ফুল হয় সেই ফুলের শুকনো কুড়ি। সাধারণত আমরা মসলা জাতীয় খাবার লবঙ্গ ব্যবহার করি তাছাড়া এর কিছু বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে যার কারণে ঔষধ, টুথপেস্ট, সুগন্ধী, সাবানে আমরা লবঙ্গ ব্যবহার দেখতে পাই। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা

লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা জানি লবঙ্গে যেমন পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে তেমনি ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। ইহা শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ করে তোলে। খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যও আমরা খাবারে লবঙ্গ দিয়ে থাকি। তাছাড়া সর্দি, কাশি প্রতিরোধ, দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য লবঙ্গ বিশেষভাবে সহায়তা করে। তবে এর স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম নয়। আমরা এখন লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিকই জানবো।

লবঙ্গ উপকারিতাঃ লবঙ্গ উপকারি দিক গুলো হলোঃ

  • বর্তমান ডায়াবেটিসের রোগী অহরহ দেখা যায়। আগে জানতাম বয়স্ক ব্যাক্তিদের ডায়াবেটিস হয় কিন্তু বর্তমানে ডায়াবেটিসের চাপ এত বেশি যে তরুণ সমাজের ছেলে ও মেয়েরা উভয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। লবঙ্গ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে অন্তত্য কার্যকর।
  • যারা দীর্ঘকাল ধরে পেটের সমস্যায় ভূগছেন তাদের জন্য লবঙ্গ মহাঔষধ হতে পারে। পেটের আলসার নিরাময়ে লবঙ্গ অন্তত্য কার্যকরী। যাদের খাবারের পর বমি বমি ভাব চলে আসে তারা যদি দুটো লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবায় তাহলে বমি বমি ভাবটা চলে যায়। তাছাড়া লবঙ্গ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাকস্থলী ও অন্ত্র সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনে লবঙ্গ বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে।
  • লবঙ্গ রয়েছে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা যকৃতকে সুরক্ষা রাখে।
  • লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে হাইড্রো-অ্যালকোহলিক নির্যাস। যা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে ও হাড়ের খনিজ উপাদান সংরক্ষণ করে থাকে।
  • লবঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। লবঙ্গ মধ্যে এমন গুণাগুণ রয়েছে যা শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এবং ইহা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • লবঙ্গ দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। মাড়ির প্রদাহ নিরাময় করে। লবঙ্গ মুখের বা দাঁতের ভিতর লুকিয়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে। এজন্য আজকাল বিভিন্ন ব্র‌্যান্ডের টুথপেস্টে লবঙ্গ উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
  • মাথাব্যথা, বুকের ব্যথা নিরাময়ে লবঙ্গ তেল খুবই উপকারি। মাথা ব্যথায় কিংবা বুকের ব্যথায় লবঙ্গ তেল মালিশ করলে ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
  • যাদের দাঁতের ও মাড়ির ব্যথা রয়েছে তারা লবঙ্গ পানির কুলকুচি করতে পারেন। এতে দাঁত ও মাড়ির ব্যথা উভয় দূর হবে।
  • যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন দুটো করে লবঙ্গ খেতে পারেন। এতে আলসারের সমস্যা নিরাময় হবে।
  • রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণ রাখতে আপনি প্রতিদিন একটি করে লবঙ্গ খেতে পারেন।
  • যারা দীর্ঘকাল ধরে ব্রণের সমস্যায় ভূগছেন তারা লবঙ্গর পেস্ট তৈরি করে তা যদি ব্রণের উপর লাগিয়ে দেন তাহলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্রণের সমস্যা সমাধান হবে।
  • রক্ত সাথে মিশে থাকা ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে লবঙ্গ বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাই রক্ত পরিশোধন করতে প্রতিদিন ১/২টি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছে যাদের খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যায় বা খাবারের প্রতি অরুচি ভাব দেখা যায়। সেক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে বা দুপুরের খাবারের পরে লবঙ্গ খেলে খাবারের রুচি ফিরে আসে।
  • যাদের প্রচন্ড ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগে তারা যদি সকালে বা বিকেলে লবঙ্গ খান তাহলে তাদের পানির পিপাসা দূর হবে।
  • যারা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভূগছেন তারা যদি লবঙ্গ রস চিবিয়ে খান তাহলে তাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর হবে।
  • তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে লবঙ্গ অত্যন্ত উপকারি। আশা করি আলোচনা থেকে লবঙ্গ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন। তাই আমাদের উচিত দিনে কমপক্ষে ১/২ টি করে লবঙ্গ খাওয়া।

লবঙ্গ অপকারিতাঃ লবঙ্গ যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। লবঙ্গ অপকারি দিকগুলো হলোঃ

  • লবঙ্গ তেল রক্তে জমাট বাঁধাকে ধীর করে দেয়। কেননা লবঙ্গে তেলে রয়েছে ইউজেনল নামক রাসায়নিক পদার্থ। এজন্য সার্জারী রোগীদের লবঙ্গ তেল খাওয়া ‍উচিত নয়। সার্জারি হওয়ার কমপক্ষে দু সপ্তাহ আগে লবঙ্গ তেল গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
  • শিশুদের জন্য সরাসরি লবঙ্গ তেল খাওয়া অনিরাপদ। কেননা ইহা খিঁচুনি, যকৃতের ক্ষতি মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • লবঙ্গ তেল অনেক সময় এলার্জির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তাদের এই তেল ব্যবহার না করাটা উত্তম।
  • বেশি পরিমাণে লবঙ্গ গ্রহণের ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়।
  • যাদের রক্তে শর্করা মাত্রা কম তারা তারা অতিরিক্ত লবঙ্গ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ইহা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রিয় পাঠক এই প্যারা জুড়ে লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিকগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লবঙ্গ যে সকল উপকারি দিকগুলোর কথা বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো মেনে চলুন আর যে সকল অপকারি দিকগুলোর কথা বর্ণনা  করা হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে লবঙ্গ খেলে কি হয়, খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা অনেকে জানতে চায়। লবঙ্গ গুণাগুণ অনেক। লবঙ্গ খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি লবঙ্গ তেল ব্যথা নিরাময়ের অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এখন খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়া কি উপকারী না অপকারি, খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি তা জানতে অনেকে গুগলে অনুসন্ধান করে। লবঙ্গ মধ্যে ইউজেনল নামক উপাদান থাকায় লবঙ্গ থেকে সুগন্ধি ঘ্রাণ বের হয়। চলুন তাহলে এক নজরে খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।

  • লবঙ্গ হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারি। যাদের হজমশক্তি কম তারা দৈনিক ১/২ টি করে খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন। লবঙ্গ অ্যান্টি-মাইক্রোবাল বৈশিষ্ট্য থাকায় ইহা পেটে ভিতরে লুকিয়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে পেটকে সুস্থ রাখে। ফলে হজমশক্তি আপনা আপনি বেড়ে যায়।
  • যারা শারীরিক ব্যথায় জর্জরিত যেমনঃ হাঁটু ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা অনুভূত হয় তারা এই ব্যথা নিরাময়ের জন্য রোজ খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন।
  • যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, ঘন ঘন জ্বর, সর্দি, কাশি,লেগেই থাকে তারা খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন। লবঙ্গতে অ্যান্টি-ভাইরাল, ব্লাড পিউরিফিকেশন উপাদান রয়েছে যা রক্তকে পরিশোধিত করে।
  • লিভারকে সুস্থ নিয়মিত খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন।
  • মাড়ির প্রদাহ, দাঁতের ক্ষয় রোধ, মুখের জ্বালা যন্ত্রণা রোধ, মুখের দুর্গন্ধ রোধে নিয়মিত খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
  • যাদের রক্তে সুগারের লেভেল অনিয়ন্ত্রিত তারা রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণ রাখতে লবঙ্গ খেতে পারেন। কেননা ইহা ইনসুলিন সিক্রিশন বাড়িয়ে থাকে।
  • যাদের হাড়ের/গাঁটের ব্যথা হয় তারা যদি সেখানে লবঙ্গ তেল মালিশ করে দেন তাহলে অনেকখানি ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া নিয়মিত লবঙ্গ খেলে হাড়ের ব্যথা নিরাময় হয়।
  • যাদের ঘন ঘন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য লেগেই থাকে তারা খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন এতে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হবে।
  • লবঙ্গতে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম তাই দিনে অন্তত খালি পেটে দুুটি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • লবঙ্গ পাকস্থলীতে মিউকাস উৎপাদন করে। আর এই মিউকাসই পাকস্থলীকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। 

প্রিয় পাঠক এই প্যারাতে খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত খালি পেটে লবঙ্গ খান তাহলে উপরোক্ত এই উপকারিতা গুলো ভোগ করতে পারবেন।

প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত

আমরা ইতিপূর্বে লবঙ্গ উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি ও অপকারিতা সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা নিয়েছি। অনেকের প্রশ্ন থাকে প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত। কেননা আমরা জানি কোন কিছুও অতিরিক্ত ভালো না। লবঙ্গ যদি আপনি অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব আপনার উপর গিয়ে পড়বে। বিশেজ্ঞদের মতে, দিনে কমপক্ষে ২ টি করে লবঙ্গ খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ২টি করে লবঙ্গ খেলে আপনি যে সকল উপকারিতা পাবেন সেগুলো হলোঃ পেটের যেকোন অসুখ নিরাময়ে লবঙ্গ খুবই উপকারি। যেমনঃ পেটের ব্যথা, বদহজম, গ্যাস, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ইত্যাদি।

যাদের গলা অনবরত খুসখুস করে তারা যদি প্রতিদিন ২টি করে লবঙ্গ খান তাহলে তাদের এই খুসখুস দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে লবঙ্গ কাজ করে। লবঙ্গতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা শরীরে রক্ত কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। লবঙ্গ ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। লবঙ্গতে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায় যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি যকৃতের সুরক্ষা, লিভার সুস্থ রাখতে, দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে, জিভে ঘা, গলা ব্যথা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, সর্দি, কাশি, দূর করতে আপনি প্রতিদিন ২টি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

শরীরের হাড় ক্ষয় রোধে আপনি ২টি করে লবঙ্গ খেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা যদি দিনে ২টি করে লবঙ্গ খান তাহলে আরাম পাওয়া যায়। কেননা লবঙ্গ ইনসুলিনের মতো কাজ করে। শরীরের মেদ কমাতে দৈনিক ২টি লবঙ্গ যথেষ্ট। আশা করি আলোচনা থেকে প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারছেন। আমাদের উচিত নিজেদের ভালোর জন্য প্রতিদিন ২টি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস করা।

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহের কমতি নেই। রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা কি তা জানতে মানুষ গুগলে অনুসন্ধান করে। রাতে লবঙ্গ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে আজকের এই প্যারাটি সাজানো হয়েছে। বহু আগ থেকে আর্য়ুবেদিক চিকিৎসায় লবঙ্গ ব্যবহার হয়েছে। লবঙ্গ একদিকে যেমন মসলা হিসেবে রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দিয়েছে অন্যদিকে এটা শারীরিক বিভিন্ন রোগ/সমস্যার সমাধানও করে দিয়েছে। লবঙ্গতে ইউজেনল নামক যৌগ রয়েছে যা জীবাণুনাশক ও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। লবঙ্গতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তা শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেলস ধ্বংস করে দেয় শরীরকে মারাত্নক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।

তাছাড়া পরিপাকতন্ত্রের সুরক্ষায়, দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লবঙ্গ গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। লবঙ্গ যৌন রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। ইহা শরীরের ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। লিভার থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে লিভারকে সুস্থ রাখতে লবঙ্গ গুণাগুণের কমতি নেই। লবঙ্গ ইনসুলিনের মতো কাজ করে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে প্রায়ই সকল ধরণের টুথপেস্টে লবঙ্গ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। হাড়ের ক্ষয় রোধ, মাড়ির ক্ষয় রোধ, গলার প্রদাহ, বমি বমি ভাব নিরাময়ে, অ্যাজমা, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এমন সকল ধরণের সমস্যায় লবঙ্গ সুফল পাওয়া যায়।

মাথা ব্যথা বা স্টেস, চাপ নিরাময়ে লবঙ্গ আপনি চুষে খেতে পারেন অথবা চায়ের সাথে লবঙ্গ খেতে পারেন। এতে স্ট্রেস দূর হবে। শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে রক্তকে পরিশোধন করতে লবঙ্গ ভূমিকা রাখে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যেমনঃব্রণ, ফুসকুড়ি, ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে লবঙ্গ গুণাগুণের কমতি নেই। তাছাড়া চুল পড়া রোধে লবঙ্গ তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরে আসবে। আশা করি রাতে লবঙ্গ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে আলোচনা থেকে তা জানতে পারছেন।

লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক

যেকোন জিনিসের যেমন ভালো দিক আছে অনুরূপভাবে মন্দ দিকও আছে। তেমনি লবঙ্গ যেমন ভালো দিক আছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও আছে। কেননা কোন জিনিস অতিরিক্ত ভালো না। অতিরিক্ত হলে সেটির উল্টো প্রভাব পড়ে। কোন জিনিস থেকে ফায়দা নিতে গেলে সেটি হতে হবে পরিমিত পরিমাণে নইলে তা হিতের বিপরীত হতে পারে। এখন আমরা আলোচনা করবো লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি সেগুলো নিয়ে।

  • যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তাদের লবঙ্গ ব্যবহারের আগে সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়ার কারনে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা যায়। এজন্য লবঙ্গ উপকারিতা পেতে দৈনিক ১টি বা ২টির বেশি লবঙ্গ খাওয়া উচিত নয়।
  • যাদের রক্তে শর্করা মাত্রা কম তারা তারা অতিরিক্ত লবঙ্গ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ইহা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত লবঙ্গ গ্রহণের ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়। ফলে রক্ত জমাট বাধাকে ধীর করে ফেলে। এজন্য সার্জারী হওয়ার দু সপ্তাহ আগ থেকে লবঙ্গ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া ‍উচিত।
  • অনেকে মুখে লম্বা সময় ধরে লং চিবায় এতে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য লবঙ্গ ব্যবহার বিপদজ্জনক। কেননা অতিরিক্ত লবঙ্গর ব্যবহার রক্তকে পাতলা করে দেয়।
  • যাদের রক্তে শর্করা মাত্রা কম তারা তারা অতিরিক্ত লবঙ্গ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ইহা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • শিশুদের জন্য সরাসরি লবঙ্গ তেল খাওয়া অনিরাপদ। কেননা ইহা খিঁচুনি, যকৃতের ক্ষতি মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

লবঙ্গ যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যা আমরা আলোচনা থেকে জানতে পারলাম। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না তাই আমাদের অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে লবঙ্গ ব্যবহার করা দরকার। আশা করি আলোচনা থেকে লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক গুলো জানতে পারছেন।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আশা করি ধৈর্য্য ধরে পুরো পোস্ট জুড়ে আমাদের সাথে ছিলেন। আশা করি এই পোস্টটি আপনার উপকারে এসেছে। কেননা, এই পোস্টে লবঙ্গ উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা, প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত, রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা, লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি পোস্টটি আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি বেশি শেয়ার করুন। আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরণের সুন্দর সুন্দর ব্লগ নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। অপনি চাইলে সেগুলো ভিজিট করতে পারেন। এতে আপনারই উপকার হবে। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url